বাংলারজমিন

ঝিনাইদহে ভর্তি বিড়ম্বনায় ৫০০ শিক্ষার্থী

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ

১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিজ্ঞপ্তিতে কপাল পুড়েছে ঝিনাইদহের প্রায় পাঁচশ’ শিক্ষার্থীর। ঈদ সামনে করে তাদের জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি’র জন্য ৮ হাজার ২শ’ টাকা করে গুনতে হচ্ছে। অনেক হতদরিদ্র পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন নোটিশে চোখে সরষের ফুল দেখছেন। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা না দিলে তাদের অনার্সের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে না। তাই গরু ছাগল বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিমানার টাকা জমা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বৈত ভর্তির কারণে তাদের অনার্সের রেজিস্ট্রেশন আটকে দিয়ে অর্থ বাণিজ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দোহাই দিয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীন গত ২০শে মে ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির দ্বৈত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু নিয়ে কথিত জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। চিঠিতে বলা হয় যে, সকল শিক্ষার্থী স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন কার্ড পেয়েছে, সে সকল শিক্ষার্থীর দ্বৈত ভর্তির কারণে ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্সের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়নি। সেই সব দ্বৈত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর নাকি স্বার্থ বিবেচনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির ভর্তি বাতিল করে ২০১৭/১৮ শিক্ষাবর্ষে অনার্সের রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ২০১৬/১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান ও স্নাতক পাস কোর্সে যে সকল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালের প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তাদের জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি হিসেবে ১০ হাজার ৭শ’ টাকা এবং ২০১৬/১৭ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান ও স্নাতক পাস কোর্সে যে সকল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে কিন্তু ২০১৭ সালের প্রথম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি হিসেবে ৮ হাজার ২শ’ টাকা জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টাকা না দিলে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। রশিদ হারুন নামে এক ছাত্র অভিযোগ করেন, তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রি ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি ঝিনাইদহ সিটি কলেজে অনার্সে ভর্তির সুযোগ পান। অনার্সের ভর্তির পর তিনি আগে ভর্তি হওয়া কলেজে টাকা দিয়ে ভর্তি বাতিলের জন্য টাকা জমা দেন। কিন্তু তার ভর্তি বাতিল করা হয়নি। পরে অনার্স কলেজে ভর্তির পর এখন আবার জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি হিসেবে ৮ হাজার ২শ’ টাকা জমা দিতে হলো। ঝিনাইদহ কলেজের রাকিব, শাকিল, সুরুজ আলী, ইভা ও পাভেল জানান, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এই জরিমানার টাকা দিতে তাদের পরিবারের কষ্ট হয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলার ডিগ্রি ও অনার্স কলেজগুলোতে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর দ্বৈত ভর্তি আছে। রেজিস্ট্রেশন কার্ড আটকে ঈদ সামনে করে তাদের কাছ থেকে জরিমানা ও ভর্তি বাতিল ফি আদায় করায় হতদরিদ্র পরিবারগুলো চরম বিপাকে পড়েছে। ঝিনাইদহ ডিগ্রি কলেজের প্রধান সহকারী আইয়ুব হোসেন ও মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের হেডক্লার্ক রজব আলী খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ ধরনের চিঠিতে অনার্স পড়ুয়া গরিব ঘরের সন্তানরা বিপাকে পড়েছে। আমাদের কাছে এমনও তথ্য আছে ছাত্রের অভিভাবকরা জমি বন্ধক, গরু ছাগল বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জরিমানার টাকা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার রিং করেও তিনি ফোন সিরিভ করেননি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status