প্রথম পাতা

রাজধানীতে গ্রেপ্তার ১৫৬

‘বন্দুকযুদ্ধে’ পৌর কাউন্সিলরসহ নিহত ১১

বাংলারজমিন ডেস্ক

২৮ মে ২০১৮, সোমবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

মাদকবিরোধী অভিযানে শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত সারা দেশে বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, মেহেরপুর, খুলনা, কক্সবাজার, চাঁদপুর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে কিংবা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে তারা নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী এবং ঘটনাস্থল থেকে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দাবি।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সীতাকুণ্ডে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ পুলিশ। শনিবার রাত ১টার দিকে উপজেলার উপকূলীয় গুলিয়াখালী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, রাতে সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালি সমুদ্র উপকূলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টাগুলি চালায়। পরে ঘটনাস্থলে মাদক সম্রাট রেহান(২৮) এর লাশ পাওয়া যায়। এ সময় তার সহযোগী জাফর, ইউসুফ ও কালা সুমনসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। নিহত মাদক ব্যবসায়ী রেহান ৪নং মুরাদপুর ইউপি’র গোলাবাড়িয়া দীঘির পাড় এলাকার মালিউল হকের তৃতীয় পুত্র। তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় মাদকসহ ৮ মামলা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, রাণীশংকৈল মীরডাঙ্গী দৌলতপুর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে রফিকুল ইসলাম তালেবান (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ সময় দেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও একশ’ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। রোববার ভোর রাতে রাণীশংকৈল উপজেলায় মীরডাঙ্গী দৌলতপুর নামক এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ নিশ্চিত করেছে।
চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, চিতলমারীতে ডিবির সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মিতুল বিশ্বাস নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। চিতলমারী থানার ওসি অনুকূল সরকার জানান, গত শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার চিংগুড়ি গ্রামের মাদক সম্রাট মিতুল বিশ্বাসের বাড়িতে ডিবির একটি টিম অভিযান চালায়। এ সময় মিতুলকে আটক করে তার আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ২ কেজি গাঁজা, ১০০ পিস ইয়াবা, ১টি শার্টারগান, ২টি রাইফেলের গুলি ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। এ সময় আস্তানা থেকে অভিযান চালিয়ে রাত তিনটার দিকে ফেরার পথে পার্শ্ববর্তী টুঙ্গিপাড়া রোডোর লুৎফার রহমানের বাগেনের কাছে পৌঁছালে মিতুল বাহিনীর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশও পাল্টা হামলা চালায়। এতে মিতুল বিশ্বাস গুলিবিদ্ধ হলে তাকে চিতলমারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধে নিহত মিতুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে থানায় ১৫ থেকে ২০টি মাদক মামলা রয়েছে।
গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, গাংনীতে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফি (৫০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত হাফি গাংনী সরকারি ডিগ্রী কলেজ পাড়ার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হারেজ উদ্দীনের ছেলে। রোববার ভোররাত ২টার সময় উপজেলার সীমান্তবর্তী গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাথানগাড়ী মাঠে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় হাফি নিহত হয় বলে পুুলিশের পক্ষে থেকে জানানো হয়। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার (পিপিএম) জানান, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাথানগাড়ী মাঠে গোলাগুলির শব্দ শুনে পুলিশের একটিদল ওই স্থানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে গেলের ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় পুলিশের ওই দলটি আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে, কর্তব্যরত ডাক্তার এমকে রেজা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী হাফিজুল ইসলাম হাফি বলে শনাক্ত করা হয়।
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, সোনাইমুড়ীতে ইয়াবা সম্রাট হাসান প্রকাশ ওরফে ইয়াবা হাসান (৩৮) ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। শনিবার রাত ১টার দিকে বগাদিয়া গ্রামের খালেদা জিয়া মহিলা মাদরাসার পিছনে এ বন্দুকযুদ্ধ হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোনাইমুড়ী মাছ বাজার থেকে ভানুয়াই গ্রামের হানিফ মিয়ার ছেলে ইয়াবা সম্রাট হাসানকে ধাওয়া করে আটক করে। পরে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর মাদকের তথ্য পাওয়া যায়। শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশ বগাদিয়া গ্রামের খালেদা জিয়া মহিলা মাদরাসার পিছনে অভিযান চালিয়ে ১টি দেশি তৈরি পাইপগান, ৭ রাউন্ড কার্তুজ, ১টি রামদা, ৩টি লম্বা ছোরা, ১টি দা ও ১২৫পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এই সময় ইয়াবা সম্রাট হাসানকে পুলিশের কাছ থেকে তার সহযোগীরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের উপর গুলি ছুড়তে থাকে। তাদের গুলিতে সোনাইমুড়ী থানার ৩ কনস্ট্রেবল আহত হয়। ইয়াবা সম্রাট পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে সে আহত হয়। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ময়মনসিংহে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছে। শনিবার (২৬ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নগরীর মরাখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কনস্টেবল হুমায়ুন ও কনস্টেবল আমির হামজা মারাত্মক আহত হন। তাদেরকে স্থানীয় পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুর রহমান এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, পুলিশের কাছে খবর আসে ওই এলাকায় কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী মাদক ভাগাভাগি করছে। এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাটকেল নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। পরে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। উভয়ের মধ্যে গুলিবিনিময়ের এক পর্যায়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকা তল্লাশি করে গুলিবিদ্ধ এক মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আবুল কালাম মোল্লা (৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের ছোড়া ককটেলে এএসআই মো. আমান উল্লাহ ও এএসআই পলাশ মৈত্র আহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন শ্মশান ঘাটে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত কালাম পার্শ্ববর্তী যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ইছামতি গ্রামের কাইয়ুম মোল্লার ছেলে। তিনি মাদকের পাইকারি বিক্রেতা ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, খুলনা জেলা গোয়েন্দা বিভাগ ও দিঘলিয়া থানা পুলিশের যৌথ মাদক বিরোধী দল গত ২৬শে মে শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দিঘলিয়া থানার মুজদখালি-সিদ্ধিপাশা শ্মশানঘাটে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে দু’টি মোটরসাইকেলে অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তি আসতে থাকে। রাস্তার ওপর পুলিশ দল তাদের চ্যালেঞ্জ করে। এ সময় আগন্তুক দুর্বৃত্তরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একাধিক ককটেল নিক্ষেপ করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালায়। সন্ত্রাসীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের ছোড়া ককটেলে এএসআই মো. আমান উল্লাহ ও এএসআই পলাশ মৈত্র আহত হন। এ সময় গোলাগুলি ও বোমার শব্দ শুনে আশেপাশের মানুষজন ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয় উপস্থিত জনগণের সহায়তায় পুলিশ সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে আহত একজন সন্ত্রাসীকে উদ্ধার করে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। চিকিৎসক সন্ত্রাসীকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাবেক টেকনাফ উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক নিহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে নোয়াখালিয়াপাড়ায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই সময় মরদেহের পাশ থেকে একটি পিস্তল, একটি এলজি, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, নিহত একরাম টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের খায়ুকখালীপাড়ার পরপর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর। এছাড়াও তিনি টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং টেকনাফ মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক আহবায়ক। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের একটি ইয়াবা মামলা রয়েছে। র‌্যাব ৭ এর কক্সবাজার ক্যামপ কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানান, রাতের অন্ধকারে নোয়াখালিয়াপাড়া থেকে একটি ইয়াবার চালান কক্সবাজার শহরে যাওয়ার কথা ছিল। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব মেরিন ড্রাইভে অবস্থান নেয়। কিন্তু র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ইয়াবা পাচারকারীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে পাচারকারী দল পিছু হটে। পরিস্থিতি শান্ত হলে সেখানে এক যুবকের মৃতদেহ দেখতে পায়। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ১টি এলজি, ৬ রাউন্ড গুলি এবং ইয়াবা ভর্তি কিছু প্যাকেট উদ্ধার করা হয়।
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের মতলবে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে মো. সেলিম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। শনিবার রাত পৌনে ৩টায় ৭টি মাদক মামলার আসামি মো. সেলিম (৩৭)কে ১১০ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। মতলব-বাবুরহাট পেন্নাই সড়কের ঢাকিরগাঁও গ্রামের বালুর মাঠ এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী সেলিমের অজ্ঞাতনামা সহযোগিরা অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর গুলি ও হামলা চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় মাদক ব্যবসায়ী সেলিম গুলিবিদ্ধ হয়। আহতাবস্থায় তাকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে জানায়। মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ কুতুব উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এছাড়াও ৪ রাউন্ড গুলি, ৬ রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। নিহত সেলিমের বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৬নং উপাদী উত্তর ইউনিয়নের উপাদী গ্রামে। তার বিরুদ্ধে মতলব দক্ষিণ থানায় ৭টি মাদক মামলা রয়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হা?লিম মণ্ডল (৩৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের এক এসআইসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। শনিবার রাত দেড়টার দিকে শহ?রের হাউ?জিং ডি ব্লক মা?ঠে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল থে?কে অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে?ছে পুলিশ। কুষ্টিয়া ম?ডেল থানার ও?সি না?সির উ?দ্দিন জানান, মাদকদ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে একদল মাদক ব্যবসায়ী শহ?রের হাউ?জিং ডি ব্লক মা?ঠে অবস্থান করছে এমন সংবাদ পেয়ে ম?ডেল থানা পু?লি?শের একটি টহল দল ঘটনাস্থ?লে যায়। পু?লি?শের উপ?স্থি?তি টের পে?য়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছো?ড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন গুলিবিদ্ধ হলে অন্যরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে ১টি সাঁটার গান, ১টি পাইপ গান, ৩ রাউন্ড গুলি ও ৮শ’ পিস ইয়াবাসহ আহত গুলিবিদ্ধ হালিম মণ্ডলকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনা?রেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় রফিকুল ইসলাম লিটন (৪০) নামে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশের দাবি, তিনি চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। শনিবার রাত ১টার দিকে ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে শৈলকুপা উপজেলার বড়দাহ জামতলা এলাকায় লিটনের লাশ পাওয়া যায়। শৈলকুপা থানার ওসি আলমগীর হোসেন জানান, রাত ১টার দিকে গোলাগুলির খবর পেয়ে মহাসড়কে থাকা টহল পুলিশ সেখানে পৌঁছে। ঘটনাস্থলে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে তার পরিচয় জানতে পারে পুলিশ। লিটন শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের হাকিম মোল্লার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১০টি মাদকের মামলাসহ ১২টি মামলা আছে বলে ওসি জানান।

রাজধানীতে গ্রেপ্তার ১৫৬
সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কাওরানবাজার ও হাজারীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে ঢাকার সবচেয়ে বড় মাদক স্পট নামে পরিচিত কাওরান বাজার রেললাইন বস্তি এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় ৪৭ পুরুষ ও ৪ জন নারী মাদকসেবী ও বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। একইভাবে হাজারীবাগ থানার গনকটুলি সুইপার কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০০ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা মাদকসেবী ও বিক্রেতাকে আটক করা হয়েছে। এসব অভিযানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি), ডগ স্কোয়াড, সোয়াট সদস্যরা অংশ নেন। হাজারীবাগ এলাকায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সকাল থেকে ও সুইপার কলোনি ও আশেপাশের এলাকার বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ সময় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ বেশকিছু নির্দোষ মানুষকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। শাহানা নামের এক গৃহিণী জানান, তার ছেলে মাদকের সঙ্গে জড়িত না। সে কখনই মাদক স্পর্শ করেও দেখেনি। কিন্তু তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আমেনা নামের আরেক নারী অভিযোগ করেন তার স্বামীকে বিনা কারণেই আটক করা হয়েছে। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরাম আলী মানবজমিনকে বলেন, সুইপার কলোনি এলাকা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এদের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী ছাড়া কিছু সাধারণ মানুষকে আটক করা হয়েছে। যাচাই- বাছাই করে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে। আর যাদের বিরুদ্ধে মাদকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
কাওরান বাজার রেল বস্তিতে বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় অভিযান। নেতৃত্ব দেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন, ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার, বিল্পব কুমার সরকারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের জানান, কাওরানবাজার একটি বড় মাদক স্পট। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে এই এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোট ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ভাসমান মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশের যোগসাজশে ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা চলে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বাতেন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যায় তবে মাদকের সঙ্গে জড়িত এসব পুলিশের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মাদকের গডফাদারদের ধরার জন্য বিশেষ টিম কাজ করছে।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার পরে কড়াইল ও কমলাপুর টিটিপাড়া বস্তি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় ওই দুই এলাকা থেকে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা ১ মণ গাঁজা, বিপুল পরিমাণ দেশি মদ ও ফেনসিডিল আটক করা হয়। অভিযান শেষে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, কড়াইল বস্তি থেকে ৩০ ও কমলাপুর টিটিপাড়া বস্তি থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। জঙ্গি সমস্যার মতো মাদক একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিদের নির্মূল করার জন্য যেভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ঠিক তেমনি মাদক নির্মূলে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে যেখানে মাদক বিক্রি হয় সেখানে গডফাদার থাকে না। গডফাদারদের ধরার জন্য সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য দরকার। সে লক্ষ্যই গোয়েন্দারা কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা মহানগর এলাকায় পহেলা রমজান থেকে শুরু করে ৯ রমজান পর্যন্ত ধারাবাহিক মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। টানা ৯ দিনের অভিযানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭৩৭ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির বিভিন্ন থানায় এখন ৪৭৩টি মামলা দায়ের করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে ২৩১ কেজি গাঁজা, ৬ কেজি হেরোইন, ১ লাখ ৮০ হাজার ৬৩৩ পিস ইয়াবা, ১ হাজার ৭০৪ বোতল ফেনসিডিল, ৩০ লিটার দেশি মদ, ৩ বোতল বিদেশি মদ, ৪৪৫ পিস ইনজেকশন। এছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-২ মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫৩ জনের মধ্যে ৭৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status