দেশ বিদেশ

১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব অর্থনীতি সমিতির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

আগামী অর্থবছরের জন্য ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। এটি আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যা চলতি বাজেটের তিনগুণ বেশি। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বাজেট প্রস্তাবনা ২০১৮-১৯’- শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। বিশাল এই বাজেটের পরিকল্পনা দিয়ে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, আমাদের প্রস্তাবিত বাজেট যুক্তিসঙ্গত এবং দেশের অন্তর্নিহিত শক্তির বিচারে যৌক্তিক। কোনো ধরনের বৈদেশিক ঋণ ছাড়াই এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে বৈদেশিক ঋণের কোনো ভূমিকা থাকবে না। বারকাত বলেন, আমাদের বিকল্প বাজেটের ৮১ শতাংশ বা ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকার জোগান দেয়া হবে রাজস্ব আয় থেকে।
লিখিত বক্তব্যে আবুল বারকাত বলেন, প্রস্তাবিত ১২ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় হবে ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন খাতে যাবে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ৯ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। এত বড় বাজেটের অর্থের উৎস হিসাবে অর্থপাচার ও কালোটাকা থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রস্তাব করেন। আবুল বারকাত বলেন, দেশে এখন ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থপাচার হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে পদ্ধতিগত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমরা অর্থপাচার রোধ থেকে আগামী অর্থবছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দেশে পুঞ্জীভূত কালো টাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে কালো টাকা দেশের মোট জিডিপি’র ৪২-৮০ শতাংশ। বিষয়টি বাস্তব সত্য। এটাকে কমানোর জন্য সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে, অন্যদিকে একটি কার্যকর কমিশন গঠন করতে পারে। আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ২৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা উদ্ধারের প্রস্তাব করছি।
প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেপে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এই বরাদ্দের ৫৮ শতাংশ অর্থ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে ২ লাখ ৫২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, জনপ্রশাসন খাতে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৮ হাজার কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ৮৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ৭২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ঘাটতি বাজেটের অর্থ বৈদেশিক ঋণের পরিবর্তে নতুন কয়েকটি খাত থেকে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। খাতগুলোর মধ্যে বন্ড বাজার থেকে ৪৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ লাখ কোটি টাকা, দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ ২০ হাজার কোটি টাকা এবং ৬০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঘাটতি মোকাবিলা করার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাতসমূহ সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি জানান, খাতগুলো হবে আয় ও মুনাফার উপর কর, মূল্য সংযোজন কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, জরিমানা-দণ্ড, বাজেয়াপ্তকরণ, সম্পূরক কর, লভ্যাংশ ও মুনাফা, অর্থপাচার রোধ থেকে প্রাপ্তি, কর ব্যতীত অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি, কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট প্রস্তাব কেউ কেউ বলতে পারে। যারা গত অর্থবছরের বাজেটকেও উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট বলেছে। আমাদের দেশে বিরোধী দলের কাজই হলো বাজেটের প্রস্তাবনার পর এটাকে ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষার বাজেট ও গরিব মারার বাজেট বলে। রাজস্ব বাড়াতে রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেন ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বাজেট তৈরি করা হয় সব মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতে এবং অর্থ বিভাগ তা চূড়ান্ত করে। এ ব্যবস্থায় সৃজশীল চিন্তার সুযোগ কম এক্ষেত্রে শুধু মেকানিক্যাল অর্থাৎ শতকরা হার বৃদ্ধি অথবা ব্যবহার করা হয়। এতে সমস্যার দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় না এবং বাজেট বাস্তবসম্মত হয় না। এ অবস্থা নিরসনে আমরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি রাজস্ব কমিশন গঠনের প্রস্তাব করছি। যারা বাজেট কীভাবে যুগোপযোগী করা যায় এ নিয়ে কাজ করবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status