বাংলারজমিন

দর্জি শ্রমিক ধর্মঘটে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

দর্জি শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বগুড়ার টেইলার্স মালিকরা। ঈদের ভরা মৌসুমে জোর করে শ্রমিকদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে তারা। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবির অজুুহাতে মালিক পক্ষের সঙ্গে কোনো বৈঠক না করেই হঠাৎ করে শ্রমিকদের ডেকে কাজে যোগ দিতে নিষেধ করেছেন বগুড়ার দর্জি শ্রমিক নেতারা। মালিকরা বলছে তাদের কি দাবি দাওয়া সে বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়ে নেতারা বসেনি। উল্টো শ্রমিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কারখানায় যেতে দেয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ মালিক পক্ষের। এতে আসছে ঈদে বগুড়ার সাধারণ মানুষ নতুন জামা কাপড় থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আর প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে টেইলার্স মালিকদের। চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘট চলবে ২৬শে মে পর্যন্ত। তাতে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মালিকরা।
বগুড়া জেলায় দর্জি দোকান মালিক সমিতির আওতায় ৩০৩৪ জন মালিক আছেন। এর মধ্যে বগুড়া শহরে ৩৫০ দর্জি মালিক বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যবসা করছেন। এসব দর্জি মালিকের অধীনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন শ্রমিক বিভিন্নভাবে কাজ করছেন।
দর্জি দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবীব টেইলার্সের মালিক বেলাল হোসেন জানান, ২০০৯ সাল থেকে দর্জি শ্রমিক নেতারা ঈদ আসলেই শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা মালিকদের জিম্মি করে অনেক সময় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, নেতারা মূলত শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কিছুই করে না। কমিটির সদস্যরা শ্রমিকদের দিয়ে ধর্মঘট করে মালিকদের কাছে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। অনেক সময় টাকা পয়সা নেয়ও। তিনি বলেন, পহেলা মে শ্রমিক দিবসেও তারা মালিকদের নিকট অনুষ্ঠানের দোহাই দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছে। মালিক সমিতির ওই নেতা বলেন, শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসায়ী ক্ষতি হচ্ছে।
শ্রমিকরা বলেছেন, তাদের নেতারা হঠাৎ করে চলতি মাসের ১৫ তারিখে ডাকে। নেতাদের ডাকে সব শ্রমিক ওইদিন শহরের খোকন পার্কে জরো হয়। নেতারা ওই সময় বেতন বৃদ্ধির জন্য মালিকদের চাপ দিতে হবে। সেই জন্য তাদের কাজে যেতে নিষেধ করা হয়। শ্রমিকরা সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য হয়ে ওই দিন থেকে কাজে যোগদান থেকে বিরত আছে। শ্রমিকরা আরো বলেন, নেতাদের কথা অমান্য করে কাজে যোগ দিলে বাড়ি থেকে তুলে এনে মারধর করবে নেতারা। সেই ভয়েই কেউ কাজে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
বগুড়ার নিউ মার্কেটের ডায়মন্ড টেইলার্সের মালিক মতিউ রহমান বলেন, শ্রমিকদের ধর্মঘটে তাদের কারখানা গত ১৫ তারিখ থেকে বন্ধ আছে। শত শত মানুষ কাপড় তৈরি জন্য এসে ফেরত যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, প্রতি রমজানেই মূলত তাদের ব্যবসা হয়। ওই এক মাসের ব্যবসার ওপর নির্ভর করেই বাকি ১১ মাসে চলে তাদের। শ্রমিকরা গত ২০০৯ সাল থেকে রমজান আসলেই ধর্মঘট করে মালিকদের ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। তিনিও শ্রমিকদের দোষ না দিয়ে নেতাদের ইন্দনকেই দায়ী করেছেন।
শ্রমিকরা জানায়, তারা একদিনে ৭-১০টি শার্ট, প্যান্ট ৬টি সাফারি সেট ৩-৮টি তৈরি করতে পারেন। তাদের গড়ে তাদের বর্তমান মজুরি শার্টপ্রতি ৯৮ টাকা, প্যান্টপ্রতি ১৩০ টাকা, ব্লেজারপ্রতি ৬০০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে। এতে তারা গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৬ দিনে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা রোজগার করে। এখন তারা কর্মবিরতিতে থাকায় এই টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক শ্রমিক আছে যারা সংসার চালায় হাতের কাজ করেই। বর্তমানে রমজান মাসে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের নেতাদের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে তারা ব্যবহার হচ্ছে।
এদিকে বগুড়ার নিউ মার্কেট এলাকার ১৫০টির মতো টেইলার্সের কাছে বেশি মানুষ জামা কাপড় তৈরির জন্য নির্ভর করে। এখানে শুধু বগুড়া নয় উত্তরাঞ্চলের প্রায় সব জেলা থেকে মানুষ পোশাক তৈরির জন্য আসে। ঈদকে সামনে রেখে এঅঞ্চলের মানুষ রোজার শুরু থেকেই টেইলার্সগুলোতে ভিড় জমায়। টেইলার্স মালিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই সময় তাদের ব্যবসা করে থাকে। কিছু শ্রমিক নেতার কারণে এখন তারা জিম্মি হয়ে আছে। সবাই দোকান খুলে অলস সময় কাটাচ্ছেন। কাস্টমাররা আসলেও কাজের অনিশ্চয়তায় অধিকাংশই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কথা হয় এমন একজনের সঙ্গে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার একজন মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি পরিবারসহ এসেছিলেন হাসান টেইলার্সে। প্রতি বছর ঈদ উদযাপনের জন্য তিনি পাঞ্জাবী তৈরি করেন এখান সেখান থেকে। আজ এসে দেখলেন শ্রমিক ধর্মঘটে সব বন্ধ। টেইলার্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ঈদের আগে তার পাঞ্জাবি দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি অনেকটাই হতাশ হয়েই ফিরে গেছেন।
অপরদিকে টেইলর্সের সঙ্গে ব্যবসায়ী সম্পর্ক সুই, সুতা, বোতামসহ পার্সের দোকানগুলো। বর্তমানে টেইলার্সগুলোকে কাজ বন্ধ থাকায় এসব ব্যবসায়ী  চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, আমরা ব্যক্তি স্বার্থে নয়, বরং শ্রমিকদের স্বার্থেই আন্দোলন করছি। আগামী ২৬ তারিখ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। মালিকরা এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ২৭ তারিখে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status