বাংলারজমিন

রমজানে মানিকগঞ্জে ভয়াবহ গ্যাস সংকট

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে গ্যাস সংকট উত্তরণে কোনো সু-খবর নেই। এই সংকটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রমজানে আরো বেশি চরম  দুর্ভোগের কবলে পড়েছেন আবাসিক গ্রাহকেরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ১ ঘণ্টাও গ্যাস পায় না বাসা বাড়িগুলোতে। বাধ্য হয়ে রান্না-বান্নার কাজ সারতে হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস কিংবা  লাকড়ির চুলোতে। মানিকগঞ্জে গ্যাসের এমন দুরাবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে বিগত দিনে মানিকগঞ্জ শহরে কতই না লঙ্কাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। পৌর সামাজিক কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন ব্যানারে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও, শহরের বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন, পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি ও মামলার মতো অনেক ঘটনাও ঘটেছিল শুধুমাত্র নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে। কিন্তু এতেও কারো কিছু আসে যায়নি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ হচ্ছেন শহরবাসী।
তিতাস গ্যাসের মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলায় ১২ হাজার ১০২ (মিটারহীন) আবাসিক গ্রাহককে প্রতিমাসে গড়ে ৯০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়। অথচ তারা ২৪ ঘণ্টায় এক ঘণ্টাও গ্যাস পায় না। নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করা হলেও নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় তাদের। আর মিটার যুক্ত আবাসিক গ্রাহক (হাসপাতালসহ বড় বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠা) যার সংখ্যা ৪১। এছাড়া তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের আওতাভুক্ত ৪১টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ১৯টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও ৩৯টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও গ্যাসের তীব্র সংকট রয়েছে।
 জানা যায়, ঢাকার সাভারের আশুলিয়া থেকে সঞ্চালনা পাইপের মাধ্যমে মানিকগঞ্জে এসব গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আশুলিয়া, সাভার এবং ধামরাইয়ের বিভিন্ন শিল্প কারখানা এবং আবাসিক চাহিদা মেটানোর পর অবশিষ্ট গ্যাস মানিকগঞ্জে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাস অফিসের এক কর্মকর্তা। যার ফলে মানিকগঞ্জে গ্যাসের চাপ কম।
গ্যাস সংকট নিয়ে সরজমিন মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা হলে সবাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার দাশড়া এলাকার গৃহিণী পারভিন বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংকটের কারণে রান্না-বান্না করতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। তার মধ্যে রমজান মাসে একটু শান্তিতে রান্না করার কোনো উপায় নেই। রাতের কোনো এক সময় কিছু সময়ের জন্য গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ না থাকায় চুলা জ্বলে না। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার কিনে রান্না করতে হচ্ছে। এতে করে খরচ দ্বিগুণ লাগছে। একদিকে প্রতি মাসে গ্যাস না পেয়েও গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে অপর দিকে মাসে দুটি করে সিলিন্ডার গ্যাস লাগছে রান্নার কাজে।  একই এলাকার গৃহিণী আতিয়া বেগম জানান, গ্যাসের তীব্র সংকটের কারণে সময়মতো রান্নার কাজ সারতে পারি না। গ্যাসের অপেক্ষায় না থেকে বাধ্য হয়েই সেহরির রান্নাও লাকড়ির চুলা দিয়েই করতে হয়।  কি যে কষ্ট তা বলে বোঝানো যাবে না।
সেওতা এলাকার আলেয়া বেগম জানান, ভোর রাতে কোনো রকম দায়সারা ভাবে গ্যাস দেয়া হলেও চাপ থাকে না একদম। এতে রান্না তো দূরের কথা ম্যাচের কাঠি দিলে চুলাই আগুন পর্যন্ত জ্বলে না। এভাবে আর কত দিন গ্যাসের কষ্ট করতে হবে তা জানি না। অথচ মাসের বিল মাসেই পরিশোধ করতে হয়। যদি বিল বাকি থাকে তাহলে বাড়িতে এসে লাইন কেটে দেয়ার হুমকি দিয়ে যায়।
  শহরের বাসিন্দা সাব্বিরুল ইসলাম জানান, মানিকগঞ্জে গ্যাস সংকট একদিনের নয় এটা সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যানারে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, তিতাস গ্যাস অফিস ঘেরাও, শহরের বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল, মানববন্ধন, পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি ও মামলার মতো অনেক ঘটনাও ঘটেছিল শুধুমাত্র নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট দিপক কুমার ঘোস বলেন, কতগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তির শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগের কারণে মানিকগঞ্জের আবাসিক ও বাসা বাড়িগুলোতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর সামাজিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি গাজী কামরুল হুদা সেলিম বলেন, গ্যাস সংকট জাতীয় সমস্যা হলেও মানিকগঞ্জের প্রেক্ষাপট একদম ভিন্ন। এখানে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনে। গ্যাস নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। তারপরও পৌরবাসীর এই দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও  কোনো সুখবর পাইনি।   
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)  মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু বলেন, মানিকগঞ্জে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিনের। গ্রাহকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাসা বাড়িতে গ্যাস সরবারাহ নিশ্চিত করতে জেলায় প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা এই চার ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস দেয়া বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক দলের নেতা মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও অধিকাংশ সিএনজি স্টেশন এই নির্দেশনা মানছে না।
তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. রফিকুজ্জামান জানান, মানিকগঞ্জে গ্যাস সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। এলঙ্গা থেকে মানিকগঞ্জে সঞ্চালন পাইপ স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জেলায় গ্যাস সরবারাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে আশুলিয়া থেকে মানিকগঞ্জের সঞ্চালন পাইপে তা সরবরাহের উদ্যোগ নিলে গ্যাস সংকট অনেকটা কমে আসবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status