এক্সক্লুসিভ

সিলেটে জোড়া খুনের আড়াই মাস

গ্রেপ্তার হয়নি মূল অভিযুক্তরা, উদ্ধার নেই আগ্নেয়াস্ত্র

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জোড়া খুনের ঘটনায় এখনও আটক হয়নি অভিযুক্তরা। উদ্ধার হয়নি ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের একটিও। গত ৬ই মার্চ সকালে বরইকান্দির ১০নং রোডের কাজীবাড়ির কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়ার পক্ষের সঙ্গে একই গ্রামের ৩নং রোডের বাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী গৌছ মিয়ার পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষের সময় এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষকালে আলফু মিয়ার পক্ষের বন্দুকের গুলিতে নিহত হন শ্রমিকলীগ নেতা বাবুল মিয়া ও মাশুক মিয়া। ঘটনার পর উভয়পক্ষে পাল্টাপাল্টি কয়েকটি মামলা হলেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পর গত ৮ই মার্চ নিহত বাবুল মিয়ার বড় ভাই সেবুল মিয়া বাদী হয়ে ১১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮শ’ জনকে আসামি করে দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা করেন। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাসেরও বেশি অতিবাহিত হলেও মূল অভিযুক্তরা এখনও পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। অবশ্য গত ১৭ই এপ্রিল এই মামলার ৫১ জন অভিযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে অসুস্থ ও বৃদ্ধ দুজনকে জামিন দিয়ে আদালত বাকি ৪৯ জনকে কারাগারে পাঠায়। এরা এখনও হাজতবাস করছেন। তবে আদালতে জামিনের জন্য যারা হাজিরা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় সবাই-ই এজাহারের তালিকার শেষের দিকের অভিযুক্ত। শীর্ষ অভিযুক্তদের কেউই এখনও জামিনের জন্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেনি বা পুলিশও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী বরইকান্দির সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, যার পরিমাণ ২০-২৫টির কম নয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুলিশ একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি। নিহত বাবুল মিয়ার ভাই সেবুল মিয়ার দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়ার বিরুদ্ধে সিলেটের বিভিন্ন থানায় দুটি হত্যা, জলমহাল জবরদখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ছিনতাই, মারামারি, প্রতারণা, চুরি, ইত্যাদি অভিযোগে কমপক্ষে ৮-৯টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার চাঞ্চল্যকর উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল আলী হত্যা মামলারও তিনি মূল আসামি। এ মামলায় আলফু মিয়া বেশ কিছুদিন হাজতবাস করেছেন। পুলিশ ও সিআইডি তিন দফা তদন্ত করে ইতিমধ্যেই মামলাটির চার্জশিট প্রদান করেছে। গত বছরের ৯ই নভেম্বর উচ্চ আদালত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন প্রদান করেন। গত ৯ই মে এই অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা অবস্থায়ই আলফু মিয়া আরেকটি হত্যা মামলায় জড়িয়ে গেলেন। সিলেটে আলোড়িত কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ নেতা আব্দুল আলী হত্যার ঘটনা জেলা ও উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনেও বহুল আলোচিত। আব্দুল ওয়াদুদ আলফু মিয়াও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার গ্রামের বাড়ি দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দির কাজীবাড়ি হলেও পৈতৃক ব্যবসা সূত্রে ছোটবেলা থেকেই তিনি কোম্পানীগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। এ সুবাদে একপর্যায়ে তিনি স্থানীয় তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পরই ক্রমান্বয়ে আলফু মিয়ার দাপট বৃদ্ধি পেতে থাকে। তেলিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে তিনি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রের ছড়াছড়িও। এই অস্ত্র ও নিজস্ব বলয়ের ক্ষমতার জোরেই আলফু মিয়া কোম্পানীগঞ্জে নিজেকে মেলে ধরেন ভিন্নভাবে। আর এই অস্ত্রধারী বাহিনীই গত ৬ই মার্চ বরইকান্দিতে সংঘটিত হামলার ঘটনায় অংশ নিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। ৬ই মার্চের ঘটনার পর নিহত বাবুল মিয়া ও মাশুক মিয়ার পরিবার থেকে পৃথক দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পক্ষান্তরের আলফু মিয়ার মা হায়াতুন নেছা বাদী হয়ে আদালতে নিহত বাবুল মিয়াদের বিরুদ্ধে পাল্টা একটি মামলা করেছেন। যার সত্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একইভাবে গত ২৮শে মার্চ আলফু মিয়ার স্ত্রী সুলতানা আক্তার সংবাদ সম্মেলন করে তার স্বামীর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা আক্তারের বক্তব্য নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা আক্তার ৬ই মার্চের ঘটনার সময় তার স্বামী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না মর্মে যে দাবি করেছেন। ঘটনার সময় পুলিশের গাফিলতির বিষয়টিও বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে উঠে এসেছে। যেহেতু তুচ্ছ ঘটনার জেরে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে মর্মে পূর্ব থেকেই পুলিশ প্রশাসন অবগত ছিল। সেহেতু ৬ই মার্চের সকালের ঘটনায় পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলে হয়তো জোড়া খুনের মতো ঘটনা ঘটত না বলে মনে করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, ঘটনার সময় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status