বাংলারজমিন

বাউফলে ৪ স্তরে মাদক ব্যবসা

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

২৭ মে ২০১৮, রবিবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

বাউফল উপজেলার প্রায় শতাধিক পয়েন্টে চার স্তরে চলছে মাদক ব্যবসা। বিগত ছয় মাসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদক সেবন ও বিক্রির দায়ে ১৮০ জনকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা সাংবাদিককে জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ উপজেলায় মাদক ব্যবসার নেপথ্যে ক্ষমতাসীন দলের তিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বাউফল পৌরসভার তিন কাউন্সিলর, সাবেক এক ইউপি সদস্য, ছয়-সাত জন যুবলীগ নেতা ও সাবেক এক যুবদল নেতার নাম রয়েছে। এদের ছত্রছায়াতেই বাউফলে চলছে মাদক ব্যবসা। এসব বিষয়ে কয়েক মাদকসেবীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, উপজেলায় ইয়াবাসহ ও বিভিন্ন মাদক ব্যবসার মূল হোতা ওই ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে অন্তত ২৫ জন মাদক বিক্রেতা। আর এই ২৫ বিক্রেতার কাছ থেকে ইয়াবাবড়ি ক্রয় করে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছে আরও প্রাায় ২০০ খুচরা মাদক বিক্রেতা। খুচরা এই বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৫-২০ জন নারী বিক্রেতা। এ সবই হয় মুঠোফোনের মাধ্যমে। খুচরা পর্যায়ের কোনো মাদক বিক্রেতা ধরা পড়লে মূল হোতাদের পক্ষ হয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনার জন্য রয়েছে আরও একটি চক্র। এই চক্রে রয়েছে একাধিক ইউপি সদস্য। এভাবে মোট চার স্তরে পরিচালিত হয় মাদক ব্যবসা। কিভাবে মাদক আসছে তাদের হাতে? এবং কিভাবে বিক্রি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই মাদকসেবীরা বলেন, নৌপথে চট্টগ্রাম থেকে ভোলার ভেলুমিয়া হয়ে মাদকের চালান প্রবেশ করছে বাউফলে। পুলিশের তৎপরতা সত্ত্বেও থেমে নেই মরণঘাতী এই ইয়াবার ব্যবসা। রিকশাচালক, মোটরসাইকেল চালক, ডাব বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতার ছদ্মবেশে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে দেদার। মোবাইলে দরদাম ঠিক করে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করার পর খুচরা বিক্রেতাদের কথা অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে এসে অপেক্ষা করে মাদকসেবীরা। এরপর খুচরা বিক্রোতারা ইয়াবা পৌঁছে দেয় অপেক্ষমাণ মাদকসেবীদের হাতে। পুলিশি অভিযানের কারণে বর্তমানে স্থান আর কৌশল পাল্টে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই মাদক ব্যবসায়ীরা। এদিকে মাদক সেবন করে এ উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমমজীবী যুবকেরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এই মাদক ক্রয়ের টাকার জন্য বেড়েছে নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতাও। টাকার জন্য তারা বাবা-মাকে মারধর করা ও বাড়িঘর ভাঙচুর করার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। লোকলজ্জার ভয়ে অভিভাবকেরা তা প্রকাশ করতেও পারছেন না। দিন দিন পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছে যে মদকসেবী ছেলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাউফল পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন তার ছেলে আবুল বশার রনিকে গত বছর পুলিশে সোপর্দ করেন। এ বিষয়ে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘অভিযান পরিচালনা করে গত ছয় মাসে আমরা ১৮০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছি। মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তাদের পর্যবেক্ষণ করছি। উপযুক্ত প্রমাণ হাতে পেলেই তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status