বাংলারজমিন
ঝিনাইদহে বাল্যবিয়ে নিয়ে তোলপাড়
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
২৫ মে ২০১৮, শুক্রবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
ঝিনাইদহে ৩৬ বছরের যুবকের সঙ্গে ৯ বছরের শিশুর এক আজব বিয়ে হয়েছে। ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে বাল্যবিয়েতে সহায়তার দায়ে ঝিনাইদহ নোটারি পাবলিকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির ও অ্যাডভোকেট মীর আক্কাস আলীকে শোকজ করা হয়েছে। গত রোববার বয়স গোপন করে তারাই এই বিয়ে দিয়েছিলেন নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের দপ্তর থেকে এই শোকজ নোটিশ পাঠানো হয় বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের মোশারফ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মাছুরা খাতুনকে বিয়ে দেয়া হয় কোরাপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। শিশু মাছুরা খাতুন নতুন কোর্টপাড়ার ওমর আলীর মেয়ে। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর হোসেন কোরাপাড়া গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। সে পেশায় বাসের হেলপার। এদিকে ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবীরের হস্তক্ষেপে ২য় শ্রেণির ছাত্রী মাছুরাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন। মাছুরার মা শাপলা খাতুন জানান, তার মেয়ের জন্ম তারিখ ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এতে তার বয়স হচ্ছে ৯ বছর। তিনি আরো জানান মেয়ে লেখাপড়ায় ভালো না। তাই বিয়ের কাবিন করে রেখেছিলাম। ১৬ বছর পূর্ণ হলে তখন জামাই বাড়ি উঠায়ে দেবো। পাগলাকানাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের দেয়া জন্ম নিবন্ধন সনদেও মাছুরার বয়স ৯ বছর। তবে মেয়ের পিতা ওমর আলীর হলফনামায় মেয়ের বয়স ৮ বছরের কথা উল্লেখ আছে। বর জাহাঙ্গীরের বয়স নোটারী পাবলিকের শপথনামায় ২১ বছর উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তার বয়স ৩৬ বছর। এই অসম বিয়ে নিয়ে মেয়ের পিতা ওমর আলী জানান, ৩ জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে এক হলফনামায় বিয়ে আইনসিদ্ধ না হওয়ায় ছেলে পক্ষের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ে হওয়ার পর বাসের হেলপারি শেষে নতুন বর জাহাঙ্গীর প্রতি রাতেই শ্বশুরবাড়ি এসে রাত যাপন করতো। এতে প্রতিবেশীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এদিকে বয়স গোপন করে নোটারী পাবলিক করায় জনমনে এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সন্দেহ ও প্রশ্ন উঠেছে। কতিপয় আইনজীবী ও তাদের নিয়োজিত মুহুরিরা এই অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। বড় অংকের টাকা নিয়ে তারা জাল জোচ্চুরিতে লিপ্ত হচ্ছে। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে ৮ বছরের শিশু মাছুরার বিয়ে। এ ব্যাপারে শিশু মাছুরার শ্রেণি শিক্ষক মোশারফ হোসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, তাদের ছাত্রী মাছুরার বিয়ে হয়ে গেছে বলে আমরাও শুনেছি। তবে এটা অন্যায় কাজ হয়েছে। তিনি জানান, মাছুরা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতো। কোনো দিন সে স্কুল কামায় করতো না।