বাংলারজমিন

নবীগঞ্জে আলোচিত প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে

২৫ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স ও আয়ার ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি স্কুল শিক্ষিকা ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তদন্ত টিম। গত ১০ই মে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত আয়া নমিতা আচার্য্যকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। সেই সাথে অভিযুক্ত দুই নার্স আরতী দেবনাথ ও চন্দ্রনা দে কে সতর্ক করে দেয়া হয়। তবে অভিযুক্তরা নামমাত্র শাস্তির মাধ্যমে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। তারা এ তদন্ত প্রতিবেদন মেনে না নিয়ে ঘটনাটি পুনরায় তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন।
অপরদিকে, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত লোকজন দৌড়ঝাঁপ করে তদন্ত প্রতিবেদন তাদের পক্ষে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।   
জানা যায়, নবীগঞ্জ পৌর এলাকার শিবপাশা গ্রামের বাসিন্দা রোকনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুফলা রানী দাশ (৩৩) গত ২৮শে মার্চ প্রসবের ব্যথা ওঠে। পরে আয়া নমিতা রানী আচার্যের পরামর্শ মতে তাকে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে ডাক্তার ছাড়াই প্রসূতির সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডেলিভারীর কার্যক্রম শুরু করেন নার্স ও আয়া। এই  হাসপাতালেই ভালোভাবে সন্তান প্রসব হবে এতে কোনো ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না বলে আয়া নমিতা আচার্য্য, সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা ও চন্দনা দেব তাদেরকে নিশ্চয়তা দেন। কোন চিকিৎসক ছাড়াই তারা তিন জনের সমন্বয়ে শুরু করেন ওই প্রসূতির ডেলিভারীর কাজ। এ সময় প্রসব ব্যথায় বেকুল প্রসূতি সুফলা অসহ্য হয়ে ছটফট ও হাউমাউ করে কান্নাকাটি করলে তারা তাকে সান্ত্বনার স্থলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক চম্পক কিশোর সাহা সুমন এসে পরীক্ষার পর প্রসূতির অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে বলে রোগীর মাকে সান্ত্বনা দেন। এ কথা বলে তিনি জরুরি বিভাগে চলে যান। এরই মধ্যে প্রসূতির গর্ভের সন্তান অর্ধেক ভূমিষ্ঠের পথে। কিন্তু আয়া ও নার্সরা প্রসূতির সন্তানকে কোনভাবে উদ্ধার করতে না পেরে ‘কেঁচি দিয়ে কেটে’ নবজাতককে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। যার ফলে প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। দীর্ঘ প্রায় ৩ ঘণ্টা পর তার অবস্থার বেগতিক দেখে দায়ভার এড়াতে কৌশলে তারা সন্ধ্যা ৭টার দিকে রোগীকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে পথিমধ্যে আউশকান্দি সংলগ্ন স্থানে পৌঁছলে প্রসূতি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরদিন নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার,   নার্স ও আয়ার চিকিৎসার অবহেলার কারণে শিক্ষিকার মৃত্যুর খবর স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের।
গত ৩রা এপ্রিল মৃত্যুবরণকারী শিক্ষিকার ভাই সুজন দাশ বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জনের নিকট লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। গত ২৩শে এপ্রিল হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন সত্যজিত রায় বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তের সময় সাক্ষী গ্রহণকালে তিনি চিকিৎসক, নার্স ও আয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পান। সমপ্রতি তদন্ত প্রতিবেদন নবীগঞ্জ হাসপাতালে আসলে দেখা যায় ঘটনার মূল অভিযুক্ত আয়া নমিতা আচার্য্যকে আজমিরীগঞ্জে বদলি এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স আরতি বালা ও চন্দনা দেবকে সতর্ক নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষিকা সুফলা দাশের ভাই সুমন দাশ ও সুজন দাশ বলেন, সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিয়ে আমরা সুবিচার পাইনি। চিকিৎসক, আয়া ও নার্সের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে। এখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় পরিচালকের নিকট অভিযোগ প্রেরণ করবেন বলেও জানান তিনি। সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী জানান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status