এক্সক্লুসিভ

দোয়ারাবাজারে রসালো লিচু ডালে ডালে

মুহামম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ

২৫ মে ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় দেশীয় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লিচুর গ্রাম মানিকপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরশ্বেরীপুর, বীরসিংহ, সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলা আলীপুরে প্রত্যন্ত এলাকায় ডালে ডালে রসালো লিচুর সমাহার। প্রতি দিন গড়ে ছাতক বাজারসহ কয়েকটি বাজারে  লক্ষাধিক টাকার লিচু বিক্রি হচ্ছে। এবছর ভালো ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। লাভজনক লিচু চাষে জড়িয়ে থাকা ওইসব এলাকার অন্তত শতাধিক চাষি এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চানপুর, কচুদাইড়, বড়গল্লা, রাজারগাঁওসহ কয়েকটি গ্রামের বাড়িতে চোখ রাখলে দেখা যায় গাছে গাছে ঝুলে থাকা লিচুর অপরূপ দৃশ্য। প্রতি বছর ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার লিচু চাষিরা অন্তত কোটি টাকার লিচু বিক্রি করে থাকেন। দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বালিউরা বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার। গ্রামীণ এ মেঠোপথ ধরে একটু এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে মানিকপুর ও লামাসানিয়া গ্রাম। যেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় লিচু বাগান রয়েছে। প্রতিটি লিচু গাছে এখন শোভা পাচ্ছে দেশি জাতের রাসালো লিচু। জমিদার আমল থেকে মানিকপুর ও আশপাশের গ্রামের টিলায় লিচু চাষাবাদ শুরু হয়। এ দৃশ্য দেখার জন্য ছাতক-দোয়ারা তথা সিলেট-সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ভিড় জমান এখানে। লিচু বাগানগুলোতে বাদুড়ের উপদ্রব ঠেকাতে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে সোলার সিস্টেম প্রদান করা হয়েছে।  স্থানীয় লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রিটিশ জমিদার আমলে গৌরীপুরের জমিদার হরিপদ রায় চৌধুরী ও তার ভাই শান্তি পদ রায় চৌধুরীর কাচারী বাড়ি ছিল মানিকপুর গ্রামে। জমিদারের লোকজন পরীক্ষামূলকভাবে ৩০টি লিচু গাছ রোপণ করেন। বর্তমানে শতবর্ষী এসব লিচু গাছ এখনোও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এরই ধারাবাহিকতায় নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুরসহ ৮টি গ্রাম ও ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা-চানপুর ও কুমারদানী গ্রামে নওসাদ মিয়ার বাগানবাড়িতে এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলা, লামাসানিয়া, লাস্তবেরগাঁওয়ে বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে প্রতিটি গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই লিচু বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। এমন কোনো বাড়ি নেই যার আঙিনায় ৪-৫টি লিচু গাছ নেই। বাগানভেদে ২৫-৩০ হাজার থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় হবে বলে চাষিরা জানায়। আগত রমজানে প্রত্যন্ত এলাকায় লিচুর চাহিদা বেশি থাকবে বলে তখন আশাতীত মূল্য পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।  কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে স্থানীয় লিচু চাষি শুকুর আলী, আবদুর রহিম, হারুনুর রশীদ, জামাল উদ্দিন, সাইদুর রহমান, ডাক্তার ওসমান গনী, রোস্তম আলী, কেরামত আলী, আরব আলী, সুন্দর আলী, জয়নাল আবেদীন, মতিউর রহমান, বাদশা মিয়া, ফুল মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, মাসুক মিয়া, মো. আব্দুল্লাহ, মজলু মিয়া, মানিক মিয়া, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল হান্নান, জজ মিয়া, নাজির হোসেন, নিজাম উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহররম আলী, মিলন মিয়া, স্বপন মিয়া, আকাশ মিয়া, ফারুক আহমদ, জসিম উদ্দিন, কাজী নিজাম উদ্দিন, হোসেন মিয়া, আলী আহমদ, কুদ্দুছ মিয়া সহ অসংখ্য চাষী লিচু চাষে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন।

বর্তমানে বাজারে প্রতি হাজার লিচু ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে মানিকপুরের লিচু চাষি মানিক মিয়া ও মানিকপুর জামে মসজিদের লিচুর বাগান প্রায় দুই লাখ টাকায় নিলাম হয়েছে। এখানকার চাষীরা বলেছেন এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন তেমন ভালো হয়নি। তাই চাষীরাও তেম দাম পাচ্ছেন না। তবে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রত্যেক লিচু চাষিরা অভিযোগ করে বলেছেন, মানিকপুরে লিচুর বাগানগুলোতে সরকারিভাবে সোলার প্যানেল প্রদান করা হলেও লামাসানিয়া ও আশেপাশের লিচু চাষিদের পাখি ও বাদুড়ের উপদ্রব ঠেকাতে সোলার প্যানেল প্রদান করা হয়নি। পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় চাষিরা রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করেও বাদুড়ের উপদ্রুব ঠেকাতে পারছেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status