বাংলারজমিন

বেনাপোল চেকপোস্টে যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ

মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু, বেনাপোল (যশোর) থেকে

২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত গমনকারী পাসপোর্ট যাত্রীরা ভারতের হরিদাসপুর চেকপোস্টে (পেট্রাপোল) ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস ও বিএসএফের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছে নানাভাবে। ভারতীয় কাস্টমস এর চাহিদা মতো টাকা না দিলে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
শুধু এমন ভোগান্তিই নয়, দেশি-বিদেশি যাত্রীদের মারপিট করার অভিযোগও রয়েছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন, কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ উঠলেও এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই কর্মকর্তাদের।
ভারতীয় পুলিশ বিভাগের কাজের ধীর গতিতে প্রতিদিন কয়েক হাজার বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে ভারতীয় ইমিগ্রেশনের তৈরি লোহার খাঁচায় যাত্রীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নারী, শিশু এবং রোগীরা সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে থাকতে হয়। মাঝে মাঝে যাত্রীদের এই লাইন চলে আসে নোম্যান্সল্যান্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে।
যাত্রীরা বলছেন, ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ওপারে পৌঁছানোর পর থেকে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। ভারতের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে ঢোকার পর শুরু হয় যাত্রী হয়রানি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি শেষে পাসপোর্ট প্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। না দিলে তারা যাত্রীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করে থাকে। অনেক সময় যাত্রীদের আনা মালামাল ‘অবৈধ’ বলে কেড়ে নেয়। কোনো কোনো যাত্রীর শরীর তল্লাশি করা হয় অসৌজন্যমূলকভাবে। চাহিদা মতো টাকা না দিলে যাত্রীদের বসিয়ে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পাসপোর্টে খোঁজা হয় ছোটখাটো ত্রুটি। ত্রুটি খুঁজে পেলেই মওকা। যাত্রীর কাছ থেকে জোর করে আদায় করা হয় কয়েকগুণ বেশি টাকা।
নোমান্সল্যান্ডে লাল ও সবুজ পোশাকের ভারতীয় কুলি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশি প্রায় ৯০ ভাগ যাত্রীর কাছ থেকে তারা জোর করে আদায় করছে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নানাভাবে হয়রানি করা হয়ে থাকে। মালামাল রেখে দেয়ার ভয় দেখায় কুলিরা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভারতের ভিসা সহজীকরণের কথা বলা হলেও টুরিস্ট, বিজনেস ও মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশি যাত্রীদের ওপর মাঝে মধ্যে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকেন পেট্রাপোল (হরিদাসপুর) ইমিগ্রেশন পুলিশ। জরুরি কাজে যারা ভারতে যাচ্ছেন, অল্প সময় বিরতি দিয়ে তাদের একাধিকবার যাতায়াতের অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্টে রিফিউজড সিল মেরে ফেরত পাঠায় ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই সব যাত্রী ভারতে তো যেতে পারেনই না, যাতায়াতসহ ভ্রমণকর বাবদ আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হন। রিফিউজড হয়ে আসা বাংলাদেশি যাত্রীরা বেনাপোল ইমিগ্রেশনকে বিষয়টি জানালেও তারা ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন’ বলেন। কিন্তু সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না।
গত ২১ এপ্রিল পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক বাংলাদেশি নারীকে হয়রানি করেন পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা। ওই নারীর নাম অর্পিতা পাল। তার বিয়ে হয়েছে কলকাতার জনৈক আনন্দ দাশগুপ্তের সঙ্গে। তার ‘অপরাধ’ ছিল, পাসপোর্ট খানিকটা নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য তাকে ভারতে ঢুকতে দিচ্ছিল না ইমিগ্রেশন পুলিশ। দীর্ঘ সময় তপ্ত রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় অর্পিতাকে। এক পর্যায়ে অর্পিতার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। আতঙ্ক দেখা দেয় যে, এতে তার গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হয় কিনা। খবর পেয়ে পেট্রাপোল থানার ওসির হস্তক্ষেপে অর্পিতাকে তার গাড়িতে করে বনগাঁ হাসপাতালে, পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে কলকাতার একটি নার্সিং হোমে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ওই ইমিগ্রেশন পুলিশের কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন অর্পিতার স্বামী আনন্দ দাশগুপ্ত। ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম এই সংবাদ খবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এর আগে গত ১১ই এপ্রিল বিকালে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে নুর আলী (৪৫) নামে একজন বাংলাদেশি যাত্রীকেও নির্যাতন করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তার ‘অপরাধ’ ছিল মার্চ মাসজুড়ে আত্মীয় বাড়ি কেন ছিলেন? দশ দিন পর আবার কেন যাচ্ছে ভারতে?
নুর আলী জানান, তিনি অসুস্থ, তাই চিকিৎসা নিতে তার নিকটআত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ডাক্তার দশ দিন পর আবার আসতে বলেছেন। তাই আবার আসা। তারপরও নুর আলীকে মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং তার পাসপোর্টে রিফিউজড সিল মেরে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
নুর আলী সাতক্ষীরা জেলার আলীপুর পাঁচপোতা গ্রামের গহর আলীর ছেলে। তার পাসপোর্ট নম্বর বিকিউ-০৭৩৭৪৩৯।
৯ই এপ্রিল দুপুরে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে মিনহাজ আরাফাত (২৯) নামে একজন বাংলাদেশি যাত্রীকে নির্যাতন করে পুলিশ। তিনি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার খালিশপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বার বার অভিযোগ জানিয়ে আসছে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না। প্রতিদিনই যাত্রী বাড়ছে। বেনাপোল পুলিশ ইমিগ্রেশন যাত্রীদের সুবিধার জন্য ১৬টি ডেস্কে যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কোনো যাত্রী তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। ভারতের ইমিগ্রেশনের ধীরগতির কারণে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। মাঝে-মধ্যে তারা যাত্রীদের ফেরতও পাঠাচ্ছে অহেতুক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status