এক্সক্লুসিভ

খালেদা জিয়ার বাম হাত শক্ত ও দুই পা ফুলে উঠছে - রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা এবং বাম হাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুই পায়ে ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে এবং সেগুলো ভারি ও ফুলে উঠছে। গতকাল বুধবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার তার নিকটাত্মীয়রা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে স্যাঁতসেঁতে, জরাজীর্ণ ভবন দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় বসবাস অনুপযোগী ও নানা অসুখ-বিসুখ আক্রমণের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। কারাগারে খালেদা জিয়ার কক্ষটি অসংখ্য পোকামাকড়ে আকীর্ণ হওয়ায় সেখানে বসবাস করা যেন নরকবাসে পরিণত হয়েছে। তার শরীরে পোকামাকড়ের দংশনে তিনি  আরো বেশি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা এবং বামহাতটা অবিরাম ব্যথার কারণে শক্ত হয়ে উঠেছে। দুইপা ক্রমাগত ব্যথা হচ্ছে এবং সেগুলো ভারী ও ফুলে উঠছে। রিজভী বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে চোখে অস্ত্রোপচার হওয়ায় দুই চোখই সারাক্ষণ জ্বালাপোড়া করে তার। এর সঙ্গে বহুপ্রাচীন দেয়ালগুলো থেকে ঝরে পড়া সিমেন্ট ও বালির কারণে চোখ দুটোর অবস্থা আরো গুরুতর অবনতির দিকে যাচ্ছে। ব্যথায় চোখ দুটো সবসময় লাল হয়ে থাকে। রুমটি ভেজা-ভেজা ও অস্বাস্থ্যকর ধূলাকীর্ণ থাকায় তার প্রচণ্ড কাশি প্রতিদিন বেড়েই চলছে। রিজভী বলেন, বারবার দাবি করা সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে সু-চিকিৎসার বন্দোবস্ত করছে না সরকার। আমরা বলেছিলাম, দেশনেত্রীকে দুঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য করে তিলে তিলে বিপন্ন করে তোলাই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। আজ সেটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকারের নির্দেশিত চিকিৎসকদের পরামর্শও জেল কর্তৃপক্ষ কানে তোলেননি। কারণ কর্তৃপক্ষের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সরকারি হুংকার। এ কারণে এখন পর্যন্ত তাকে অর্থোপেডিক বেড দেয়া হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালে এমআরআই পরীক্ষা ইত্যাদি অগ্রাহ্য করেছে কর্তৃপক্ষ। রিজভী বলেন, ক্ষমতার নেশায় সরকার কণ্টক মুক্ত হতেই বেগম জিয়ার ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। রাজক্রোধে এসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যেন সবসময় ক্রোধের আগুনে জ্বলছেন। শুধু খালেদা জিয়া নয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করাই যেন প্রধানমন্ত্রীর এসময়ের প্রধান এজেন্ডা। আর এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর। তাকে অবৈধ ক্ষমতার জোরে বন্দি রেখে ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সারা দেশ অনাচারে ভরে গেছে ক্ষমতাসীন দলের দৌরাত্ম্যে। অবৈধ ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত বল্গাহীন লুটপাট আর রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকার দম্ভে ও গর্বে আত্মস্ফীত হওয়ার কারণে নিজেরাই বেআইনি অপরাধ করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না। দেশব্যাপী মাদক নির্মূলের অভিযানে মানুষ হত্যার আতিশয্যে এক বিকারগ্রস্ত পন্থা চারদিকে দৃশ্যমান হচ্ছে। গত ৯ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ৪৩ জন। নিহত ব্যক্তিদের মাদক ব্যবসায়ী বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে প্রকৃত বড়-বড় মাদক ডিলাররা অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বাড়িতে তারা দেখা-সাক্ষাৎ করছে। সরকারি এই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে চারদিকে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ সন্দেহভাজনদেরও হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু যতবড় অপরাধী হোক তাকে বিচারবহির্র্ভূত হত্যা করার কোনো সুযোগ নেই। আমি গতকালও বলেছিলাম এই মাদকবিরোধী অভিযানের নামে মানুষ হত্যার উৎসবে এরা বেছে বেছে সরকারবিরোধী নির্দোষ তরুণদেরও অপরাধী সাজিয়ে হত্যা করবে। তার দৃষ্টান্ত আমরা গতকাল তুলে ধরেছি ক্রসফায়ারে নিহত নেত্রকোনার ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেনের ঘটনায়। বিচারবহির্ভূতভাবে নির্বিচারে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ হত্যায় পৃথিবীর কোথাও সামাজিক অপরাধ দমন করা যায়নি। রাষ্ট্র যদি নানা অপরাধের পৃষ্ঠপোষক হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের যদি বৈধসত্তা না থাকে, তাহলে তাদের দ্বারা সৃষ্ট বে-আইনি কর্মকাণ্ড বীভৎসরূপে আত্মপ্রকাশ করবেই। এই বিচারবহির্ভূত হত্যার যাত্রাপথে ক্রমাগতভাবে সরকারবিরোধী লোকজনদের নির্মূলে ব্যস্ত থাকার আশংকা করছে অনেকেই। মাদকের পশ্চাদভূমি বন্ধ না করে, গডফাদারদের না ধরে শুধু ক্রসফায়ারের হিড়িক অব্যাহত রাখলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না সরকার। সারা দেশে মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এই ক্ষমতাসীনদের আমলে, ক্ষমতাবানদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এই সব ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা দেশকে রক্তাক্ত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যায় কিনা সেটি নিয়েও এখন মানুষ ভাবছে। ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status