বাংলারজমিন
কুশিয়ারা বাঁধে ফাটল প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, নবীগঞ্জ থেকে
২২ মে ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:২৭ পূর্বাহ্ন
নবীগঞ্জে আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল ও বনগাঁও গ্রাম এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ভাঙনরোধে নির্মিত বাধে ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রতি বছরই নদীর তীরবর্তী বাঁধে কোনো না কোনো স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ বঁাঁধের উন্নয়নে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাঁধ রক্ষায় নেয়া হয় ‘কুশিয়ারা রিভার প্রজেক্ট’ নামের একটি প্রকল্প। ১০ লাখ ৭৮ হাজার ১৯৪ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বাঁধ নির্মাণের পিআইসি সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির কারণে বর্ষার মৌসুম শুরুর পূর্বে সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পারকুল ও বনগাঁও গ্রামের উত্তর পাশে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারা নদী। ওই নদীর তীরবর্তী পাহাড়পুর নামক স্থানে কয়েক যুগ থেকে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মাটি ধসে শাখা নদীতে পরিণত হয়। ইতিপূর্বে কয়েক বার ওই বাঁধ ভেঙে নবীগঞ্জ, বানিয়াচং এবং আজমিরিগঞ্জ উপজেলাসহ হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের ফসল তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সম্প্রতি হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ওই বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১০ লাখ ৭৮ হাজার ১৯৪ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দুলাল মিয়া। প্রকল্পটি চলতি বছরের ২৫শে জানুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মেয়াদের আগেই ছলছাতুরি করে টাকা উত্তোলন করেনি তিনি। ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া বাঁধের সংলগ্ন স্থান থেকে শ্রমিক দিয়ে নামমাত্র মাঠি ভরাট করে বেশিরভাগ টাকাই আত্মসাৎ করেন। এ কারণে সামান্য বর্ষণের ফলে পলি মাটির বাঁধে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজের আদেশে সাতটি শর্ত ছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্রকল্পের নাম, দৈর্ঘ্য, পরিমাণ, টাকা বরাদ্দ, কমিটির সভাপতির নামসহ ৫ ফুট ও ৩ ফুট বিল বোর্ড স্থাপন করে রাখা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্নীতি প্রকাশ পাবে বলে এর জন্য তা রাখা হয়নি। সচেতন মহল মনে করেন সেই শর্তাবলীর কোনো একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পের নামে হরিলুট হয়েছে। দুর্ভোগ লাগবে কোনো সফলতা আসেনি। বন্যা হলে সর্ব প্রথম ওই স্থানই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া বলেন, প্রকল্প সঠিকভাবেই হয়েছে, অনিয়ম হয়নি। যেহেতু তিনি ওই এলাকার ইউপি সদস্য যত দিন বাঁধ ভাঙবে তত দিন তিনিই সংস্কার করবেন। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর উপসহকারী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, এটা ফসল রক্ষা বাঁধ। আগাম বন্যায় যাতে ফসলের কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রজেক্টে কোনো দুনীর্তি হয়নি। তিনি আরো বলেন, নদী রক্ষার জন্য নয়, শুধু ফসল রক্ষার জন্যই বাঁধের সংস্কার হয়েছে। ওদিকে, বাঁধ সংস্কারের নামে টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন।