প্রথম পাতা

অনিক হত্যার নেপথ্যে-

রুদ্র মিজান

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

চাঞ্চল্যকর জিয়াউল হক অনিক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল কিশোর গ্যাং। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ওমর ফারুককে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপের মধ্যে চলছিল দ্বন্দ্ব। পুরো উত্তরা নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া ছিল দুটি গ্রুপ। তুচ্ছ ঘটনাতেই  পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটতো তাদের মধ্যে। মোবাইলে সেলফি ধারণ করে ফিল্মি স্টাইলে সশস্ত্র হামলা চালাতো। এই ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতায় প্রাণ দিতে হয়েছে মা-বাবার একমাত্র ছেলে অনিককে। এই হত্যাকাণ্ডে ২০ থেকে ২৫ জন জড়িত রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। এরমধ্যে একজন পাড়ি দিয়েছে বিদেশে। এ পর্যন্ত এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে পাঁচজন। ২০১৫ সালের ২৭শে মে উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় অনিককে।

গ্রেপ্তারের পর ডিবি পুলিশের কাছে অনিক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে ওমর ফারুক। উত্তরায় তখন দুটি গ্রুপ সক্রিয়। উত্তরা পাওয়ার গ্রুপ ও উত্তরা পাওয়ার বয়েজ গ্রুপ। দিনে-রাতে চলতো আড্ডা। খেলার মাঠ, ফুটপাথ, বাসার ছাদ, মেয়েদের স্কুল ও কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা। মেয়েদের টিজ করা। নিজেদের গ্রুপের বাইরে অন্য কাউকে খবরদারি করতে না দেয়াই ছিল তাদের কাজ। দুটি গ্রুপে ছিল মূলত স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপকে মেনে নিতে পারতো না কিছুতেই। মূলত পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে ঝগড়া বাধাতেই ওই গ্রুপের মাহিনের কাছে দুইশ’ টাকা চাঁদা দাবি করে পাওয়ার বয়েজ গ্রুপের শিবলু রহমান অপু। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার পর উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরে পাওয়ার বয়েজ গ্রুপের অপুকে মারধর করে পাওয়ার গ্রুপের সদস্যরা। মারধর করে অপুকে আহত করে তিন নম্বর সেক্টরে অবস্থান নেয় তারা। খবর পেয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পাওয়ার বয়েজ গ্রুপের মধ্যে।

তারা তখন নয় নম্বর সেক্টরে আইডিয়াল কলেজের পাশে। সজীব, আকাশ, মারুফ হোসেন, ওমর ফারুকসহ এই গ্রুপের কিশোররা সশস্ত্র অবস্থায় সাত নম্বর সেক্টরের উদ্দেশে যাত্রা করে। তিন নম্বর সেক্টরে যেতেই ইমরান হোসেন নামে তাদের গ্রুপের এক সদস্য জানায়, শিবলুকে মারধর করার সময় সেখানে ছিল জিয়াউল হক অনিক। তার পরই ঘটে ঘটনা। সশস্ত্র কিশোর গ্রুপটি ফিল্মি স্টাইলে খুঁজতে থাকে অনিককে। কিছুক্ষণের মধ্যে ২৫ নম্বর রোডে দেখা মেলে অনিকের। তারপরই রক্তের ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠে তারা। ঝাপটে ধরে তাকে। অনিক তখন ‘আমাকে মেরো না, আমাকে মেরো না, বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিল। কিল, ঘুষির একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয় তাকে।
সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে অনিকের বুকের ডান পাশে ও পাঁজরে দুটি আঘাত করা হয়। ওমর ফারুকের স্বীকারোক্তি অনুসারে মারুফের কাছে ছিল ছুরি। সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে আঘাত করে মারুফ। রক্তে ভেসে যায় পিচঢালা পথ। রাস্তায় পড়ে থাকে অনিক।
অনিকের বাবা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী জসিম উদ্দিন জানান, সেদিন বেলা সাড়ে তিনটায় বাসা থেকে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অনিক। পাঁচটার দিকে বাসার গেট দিয়ে ঢুকার সময় সান নামে অনিকের এক বন্ধু তাকে ডেকে নেয়। এ সময় ইমতিজার নামে একটি ছেলে সানের সঙ্গে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা দিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, অনিকের ওপর হামলা হলে সান ও ইমতিজার পালিয়ে যায়। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার পর আশপাশের লোকজন অনিককে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অনিক হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উত্তরার ওয়াইড ভিশন কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওমর ফারুককে। সে ময়মনসিংহের ধোপাউড়া থানার বেদিকুড়া গ্রামের মৃত আবদুল হাশেমের পুত্র। তার আগে গত ১৬ই এপ্রিল কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী মারুফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হচ্ছে, ফয়েজ আবদুল্লাহ, ইমরান হোসেন ও মাহিন। নিহত অনিক বাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ার আইরল গ্রামের জসিম উদ্দিনের সন্তান। তার পিতা জসিম উদ্দিন বলেন, আমার দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র অনিক। তাকে হারিয়ে আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। এভাবে যেন কোনো বাবা তার ছেলেকে না হারান। এজন্য গ্যাং কালচারের সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অনিক হত্যায় জড়িতরা প্রভাবশালী। তারা যেন রেহাই না পায়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন অনিকের পিতা জসিম উদ্দিন।

এ বিষয়ে ডিবির সিনিয় সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেন, দুটি কিশোর গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই অনিককে হত্যা করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে অনিক হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মারুফ ও ওমর ফারুককে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। মারুফ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status