বাংলারজমিন

চুনারুঘাটে ৪ মাসে ১৩ ধর্ষণ

নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে

২০ মে ২০১৮, রবিবার, ৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

চুনারুঘাটে গত এক মাসে ৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। এসব ঘটনায় দেখা যায়নি পুলিশের কোনো তৎপরতা। তবে ধর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। উপর্যুপরি শিশু ধর্ষণের ঘটনায় রীতিমতো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ব্র্যাকের ‘সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচি’র হিসেবে দেখা যায়, গত ৪ মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪ শিশুসহ ১৩ নারী শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনায় ব্র্যাক তাদের নিজ খরচে ভিকটিমকে আইনি সহায়তা ও মামলার দায়িত্ব নিয়েছে। গত ২রা মে চুনারুঘাট পৌর এলাকার নতুন বাজার প্রকাশিত পীরের বাজারে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের হাজী ইয়াছির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পাশের বাসার উজ্জ্বল মিয়া ধর্ষণ করে। শিশুটির মা-বাবা গত ২রা মে হাওর এলাকায় ধান কাটতে গেলে ঐদিন রাতেই এলাকার মৃত শিরু মিয়ার ছেলে উজ্জ্বল মিয়া (৩৭) স্কুলছাত্রীকে কৌশলে ঘুমের ওষুধ সেবন করিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়লে উজ্জ্বল মিয়া রাত ১টার দিকে তাকে ধর্ষণ করে। এভাবে পরপর দুইদিন ধর্ষণের কারণে রক্তক্ষরণে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকায় বিষয়টি জানাজানি হয়। এই খবর পেয়ে মা-বাবা এলাকায় চলে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় কাউন্সিলর কাজল মিয়া সালিশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকায় রফাদফা করেন ধর্ষণের ঘটনা। কিন্তু মেয়েটির চিকিৎসা না হওয়ায় সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার সকালে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সংগঠকসহ সমাজকর্মীরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে যান। এই খবর জানতে পেরে চুনারুঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে গত বুধবার চুনারুঘাট উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় পুলিশের দেয়া তথ্যে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে উপজেলায় ৭টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৯টি। যা অত্যন্ত ভয়াবহ। গত এপ্রিল মাসে ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে আহমদাবাদ ইউনিয়নে সুন্দরপুর গ্রামে ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এপ্রিল মাসে দেওরগাছ ইউনিয়নের জোয়ালভাঙ্গা চা-বাগানে ৮ বছরের আরো এক চা শ্রমিক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। একই মাসে দেউন্দি চা-বাগানে এক গৃহবধূ, আশ্রাবপুর গ্রামে ১৬ বছরের কিশোরী, একই মাসে হলহলিয়া গ্রামে ১৫ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। এ সময়ে কালিশিরি গ্রামের এক কিশোরীকে সাতছড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয় ৪ কিশোর। ফেব্রুয়ারি মাসে মানিক ভাণ্ডার গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। এর পূর্বে ছয়শ্রী গ্রামে ৭ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার অধিকাংশের কোনো বিচার হয়নি। ঘটনা ঘটার পরই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়। কিছুদিন পরই থেমে যায় তাদের দৌড়ঝাঁপ। নির্যাতিতরা ঘুরতে থাকেন থানা পুলিশ আর গ্রাম্য মুরব্বিদের কাছে। দ্রুততম সময়ে বিচার না হওয়া, ডাক্তারি রিপোর্ট না পাওয়া এবং তদন্তে গাফিলতিসহ নানা কারণে বিলম্ব ঘটে বিচারের। এতে হয়রানির শিকার হয়ে বিচারপ্রার্থীরা বিচারের আশা ছেড়ে দিয়ে নিশ্চুপ থাকেন। ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির সংগঠক অল্লিকা দাশ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তারা এসব ঘটনার ভিকটিমকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলের চুনারুঘাট শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদুল হক সুজন বলেন, সামাজিক অবক্ষয়, অবাধ মাদক ব্যবহার, যুব সমাজে নেশা ও নারী আসক্তি থেকে এসব ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নেশায় আসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, অবাধ যৌনাচার থেকে সমাজে এসব ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের মারাত্মক অবক্ষয়। সচেতনতাই পারে এসব দূর করতে। তিনি মনে করেন, সঠিক সময়ে এবং সুষ্ঠু বিচার না হওয়া ও বিচার পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার কারণেও এসব ঘটনা বাড়ছে। চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আমিরুজ্জামান এক মাসে ৭টি ধর্ষণ মামলার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব ঘটনার অধিকাংশই মিথ্যা। এপ্রিল মাসে ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে বিশেষ করে সুন্দরপুর এবং পীরের বাজারের শিবিরের ঘটনাটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status