বিশ্বজমিন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রুখে দেয়ার চেষ্টা ইইউ’র

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ মে ২০১৮, শনিবার, ৯:২১ পূর্বাহ্ন

ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রুখে দেয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আঞ্চলিক সংগঠনটি এমন একটি আইন কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে যা ইউরোপের কোম্পানি ও আদালতগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেবে। ইরানের সঙ্গে বহুল আলোচিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তি টিকিয়ে রাখতে ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এ পরিকল্পনা করেছে ইইউ। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।   
খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান কমিশনের সভাপতি জ্য ক্লদ জাঙ্কার বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ইউরোপের কোম্পানিগুলোকে রক্ষা করা ইউরোপিয়ান কমিশনের কর্তব্য। এজন্য আমাদের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আমরা একটি প্রতিরোধ আইন কার্যকর করবো। বৃহস্পতিবার বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়াতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাঙ্কার।
যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বহাল রাখতে চায় ইউরোপের দেশগুলো। এজন্য তাদের সবচেয়ে বড় অবলম্বন প্রতিরোধ আইন। কেননা এ আইনে ইউরোপের কোম্পানিগুলোকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই আইনে এমন কোনো আদেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয় না যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো শাস্তি বাস্তবায়ন করা হয়।
২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার জন্য যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একটি সমঝোতা চুক্তি করে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে আনে। বিনিময়ে দেশটিকে অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ফলে ইরান আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য করার সুযোগ লাভ করে। অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে থাকে ইরানিরা। কিন্তু সম্প্রতি ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এতে তীব্র আপত্তি জানায় অন্য অংশীদার দেশগুলো। কিন্তু ট্রাম্প এসব আপত্তির কোনোই তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন। ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান ইানের সঙ্গে বাণিজ্য করবে তাদের শাস্তির হুমকি দেন। এতে বিপাকে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। ফ্রান্সের তেল ও গ্যাস কোম্পানি টোটাল ইরানের সঙ্গে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দেশটির উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি করেছে। ইরানের সঙ্গে চুক্তি করেছে জার্মানির কয়েকটি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া অন্যদেশগুলোও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন শুরু করেছে। কিন্তু পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ফলে এসব চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই চুক্তি এগিয়ে নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে চীন ও রাশিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো।
ইরান বলেছে, চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো যদি ইরানকে নিষেধাজ্ঞা থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে তারা পারমাণবিক চুক্তি বহাল রাখবে।
প্রতিরোধ আইন কি?
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় প্রতিরোধ আইন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপ। ১৯৯৬ সালে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। তখন এই আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা থেকে কিউবাকে মুক্তি দেয়া হয়। পাশাপাশি কিউবার সঙ্গে বাণিজ্য করে এমন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু এর বিপরীতে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করা হয়েছে। যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিরোধ আইন অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। এতে মার্কিন ব্যাংকে লেনদেনের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিরোধ আইনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সুফল পাবেন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করে না। কিন্তু বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ডলারে লেনদেন করে। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখলে বড় কোম্পানিগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শিকার হবে।
এক্ষেত্রে প্রতিরোধ আইনের সুফল সীমিত। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সংগঠনটির ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কমিশনার ভালদিত ডমভ্রস্কিস বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলায় সীমিতভাবে প্রতিরোধ আইন কার্যকর করা যেতে পারে।
উদ্বিগ্ন ইউরোপের কোম্পানিগুলো
পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপের কয়েকটি কোম্পানি। বৃহস্পতিবার ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়ার ঘোষষা দিয়েছে ডেনমার্কের শিপিং জায়ান্ট মায়ের্সক ট্যাংকার্স। জার্মান কোম্পানিগুলো ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। ইতালির স্টিল কোম্পানি দানিয়েলি ইরানের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য স্থগিত করেছে। ফরাসি তেল ও গ্যাস কোম্পানি টোটাল বলেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি না পেলে তারা ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি থেকে সরে আসবে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ওই চুক্তি কার্যকর রয়েছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে ইরানের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে চীন। ইরানের তেলমন্ত্রী বিজান জানগেনেহ বলেন, ফরাসি টোটাল কোম্পানি চুক্তি বাতিল করলে সেখানে চীনের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি সিএনপিসি স্থলাভিষিক্ত হবে। চীনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে, বৃটিশ কোম্পানি পারগ্যাস ইন্টারন্যাশনাল ইরানের সঙ্গে নতুন করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম কোনো ইউরোপীয় কোম্পানি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করলো। এরই মধ্যে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। সম্প্রতি কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় ইরানের সঙ্গে নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন। এতে কয়েক শ’ পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে ইরান। এ ছাড়া একটি মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চল গঠনের জন্য দ্রুতই আলোচনায় বসবে দুই পক্ষ।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status