বাংলারজমিন
লাউয়াছড়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আনসার গ্রুপ
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গাছ চোর চক্র। বনবিভাগের তৎপরতা অভাবে মূল্যবান গাছ চুরি বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় খাসিয়ারা। বনবিভাগের হিসাব মতে গত এক মাসে তিনটি বৃহদাকার সেগুন গাছ ও একটি আগর গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় খাসিয়াদের মতে গাছ চুরির আরও বেশি। অভিযোগ উঠেছে, লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের মদতে গাছ চোরদের একাধিক চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে জাতীয় এই উদ্যানের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লোকবলের অভাবকে দায়ী করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাড়িভাঙ্গা ও লাউয়াছড়া বিট অফিসের এলাকা থেকে বেশ কিছু পুরনো সেগুন সেগুন গাছ কেটে পাচারের ঘটনা ঘটে। ওই স্থানে কাটা গাছের মোথা দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয় স্থানীয়রা। এছাড়া এসময়ে মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া ও বাঘমারা বিটের বাফার বাগানে আকাশমনিসহ ৬-৭টি মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে চোরচক্র। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় লাউয়াছড়া পুঞ্জিসংলগ্ন মাঠে আগর গাছ পাচারের উদ্দেশ্যে কেটে খণ্ড করে গাছ চোর দল। খাসিয়া পুঞ্জির লোকজন বাধা দিলে সশস্ত্র চোরদলের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুঞ্জির খাসিয়া চৌকিদাররা গাছের খন্ডাংশ উদ্ধার করে বিট অফিসে জমা দেয়। এ ঘটনায় পুঞ্জির লোকজন লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বিট কর্মকর্তা কর্ণপাতই করেননি বলে অভিযোগ করেন তারা। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নতুন পুরোনো মিলে বেশ কিছু গাছ চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে চক্রগুলো সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় থাকে। বর্তমানে আগে যারা গাছ কাটতো তারাই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সাথে নতুন গড়ে উঠা চক্রটিও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। গাছকাটায় জড়িতরা এরই মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া, ছনখলার সেগুন বাগানে ও সিএমসি অফিসের পাশের টিলায় সেগুন ও গামারি গাছের বাগানের মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে। খাসিয়ারা অভিযোগ করেন, বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অজ্ঞাত কারণে এসব গাছ চোর চক্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তার উদাসীনতার কারণে এই উদ্যানের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
মোবাইল ফোনে ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলে লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন ‘লাউয়াছড়ায় চাকরি করে কিভাবে ভাল থাকি বলেন’। তিনি তার বিরুদ্ধে খাসিয়াদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চার জন প্রহরী, ১ জন মালি ও ২ জন বুটম্যান নিয়ে সশস্ত্র গাছ চোর ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, খাসিয়ারা আগে রাতে জিপ, অটোরিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তাদের বাসায় যাওয়া আসা করতো। বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ও নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি নিয়ে তাদের চলাচল বন্ধ করায় আমাকে তারা অহেতুক দোষারোপ করছে। তিনি বলেন ‘আনসার গ্রুপ’ নামে একটি গাছ চোর চক্র অনেকদিন ধরে উদ্যানে গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত’। এ গ্রুপের প্রধান কাটাবিল এলাকার আনসার আলী। এই আনসার গ্রুপ সন্ধ্যার পর ও রাতের বেলায় গাছ চুরি করতে বনে প্রবেশ করে। তার বিরুদ্ধে ৬-৭টি বন মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।