শেষের পাতা

৩ শিশুকে সন্তান দাবি, রহস্য ফাঁস

ধরা পড়লেন প্রবাসীর স্ত্রী ফাতিহা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

পুলিশি তদন্তে গিয়ে ধরা পড়লো ব্রাজিল প্রবাসী ফয়সলের কারসাজি। প্রবাসে থাকায় তিনি রক্ষা পেলেও স্ত্রী ফাতিহা বেগম ধরা পড়লেন। পুলিশ ফাতিহাকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরীণ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তিন অবুঝ শিশুকে নিজের  সন্তান বলে পাসপোর্ট  তৈরি করতে গিয়ে পুলিশের তদন্তে বিয়ানীবাজারের ফয়সলের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। আর ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সিলেটে তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে পাসপোর্ট জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ট্রাভেলস ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মধ্যে এ নিয়ে আতংক দেখা দিয়েছে। কঠোর ভূমিকা পালন করায় পুলিশও প্রশংসা কুড়াচ্ছে। সিলেটের বিয়ানীবাজারের ছোটোদেশ গ্রামের ফয়সল আহমদ বসবাস করেন ব্রাজিলে। ওখানে তিনি বৈধভাবে বসবাস করছেন। ২০১৬ সালে ১৬ই অক্টোবর তিনি ব্রাজিলে থাকা কালে বিয়ে করেন একই এলাকার ফাতিহা ওরফে ফাহিমা বেগমকে। টেলিফোনে বিয়ে করেছিলেন তারা। বিয়ের পর একবার দেশে এসে ঘুরে গেছেন ফয়সল। ২০১৭ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে ফাতিহাকে স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন। নতুন স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করে ফিরে যাওয়ার তাদের এক সন্তানও জন্ম নিয়েছিল। সেই সন্তান পরবর্তীতে মারা যায়। সম্প্রতি ফয়সল আহমদ ও ফাতিহা বেগম তিন অবুঝ শিশুকে তাদের নিজের সন্তান সাজিয়ে পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনে আশরাফ আহমদ (১২), সুহেল আহমদ ও রেদওয়ান আহমদকে (১০) নিজের সন্তান বলে জানান। আবেদনটি পাসপোর্ট অফিসে আসার পর সেটি ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয় পুলিশের কাছে। সিলেট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা পাসপোর্টের তিনটি আবেদন নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। গতকাল সিলেট জেলা পুলিশ জানায়- আবেদনের থাকা তিন আবেদনকারীর সবাই শিশু এবং তারা কেউই পিতা-মাতা ফয়ছল আহমদ এবং ফাতিহা বেগম ওরফে ফাহিমাদের সন্তান নয়। পাসপোর্ট করার জন্য  তিন শিশুর নামে তথ্য গোপন করে স্থানীয় ইউপি সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে ফয়সল আহমদ নিজেকে পিতা সাজিয়ে বিয়ানীবাজারের মুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেন। সেই জন্মনিবন্ধন সনদের উপর ভিত্তি করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও তিন শিশুর নাগরিকত্ব সনদ গ্রহণ করা হয়। এদিকে- পাসপোর্টের আবেদনে শনাক্তকারী হিসেবে যে ব্যক্তির নাম, স্বাক্ষর, এবং সীল ব্যবহার করা হয়েছে সেই ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব পুলিশি তদন্তে পাওয়া যায়নি। অন্যের নামে সীলটি জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়েছে ও ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়- তিন শিশুকে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে নিজেদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়। ওই শিশু তিনটিই ব্রাজিল প্রবাসী ফয়সলের নিকটাত্মীয়। অনুসন্ধানের পর ওই তিন শিশুর পরিচয় শনাক্ত করেছে। তাদের প্রকৃত পরিচয় হচ্ছে- বিয়ানীবাজারের দুধবকশি মাথিউড়া গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে আশরাফ আহমদ, শ্যাওলা দিঘলবাগ গ্রামের দুবাই প্রবাসী আজির উদ্দিনের ছেলে সুহেল আহমদ ও বড়লেখার নিজ বাহাদুরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী ময়স উদ্দিনের ছেলে রেদওয়ান আহমদ। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম জানিয়েছেন- ব্রাজিল প্রবাসী ফয়সল আহমদের স্ত্রী ফাতিহা বেগম ও ইউপি সদস্যা নাজিম উদ্দিন কৌশলে ওই শিশুদের পাচার করতে পাসপোর্ট তৈরির জন্য দিয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তে পুরো বিষয়টি ধরা পড়লে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ওই তিন শিশুকে পাচারের জন্য মিথ্যা জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিকত্ব সনদ সৃজন, নকল সীল তৈরিসহ অস্তিত্বহীন ব্যক্তির দস্তখত দিয়ে প্রতারণার আশ্রয়  নেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজার থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। আর এই মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ফাতিহাকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল ফাতিহাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। পুলিশ সূত্র জানায়- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন বাঙালিরা। নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সন্তানদের তারা নিজের সন্তান পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রবাসে নিয়ে যান। অতীতে সিলেটে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটলেও কখনো সেটি ধরা পড়েনি। এবার প্রথম তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ এ আবেদনের রহস্য উদঘাটন করেছে। এতে এক শ্রেণির ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা জড়িত রয়েছে। পুলিশ ওই ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সন্ধানে  গোয়েন্দা নজরদারি চালাচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status