বাংলারজমিন

দোয়ারাবাজারে বেপরোয়া পাথরখেকো সিন্ডিকেট

মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্

১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে বাঁশতলা-হকনগর পর্যটন এলাকায় ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে পাথর খেকো সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়িত পাথর কোয়ারি থেকে লুট হচ্ছে পাথর। গাছপালা উজাড় করে অবাধে পাথর উত্তোলনের কারণে এলাকাজুড়ে হুমকির মুখে রয়েছে পরিবেশের। শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে এখন সৌন্দর্র্য হারাতে বসেছে উপজেলার একমাত্র নান্দনিক ওই পর্যটন এলাকার। যেখানেই চোখ পড়ে সেখানেই পাথরে স্তূপ চোখে পড়ে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে স্থানীয়  প্রভাবশালী মহল সীমান্তরক্ষীর (বিজিবি) যোগসাজশে অবৈধভাবে কোয়ারি এলাকা হতে পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অসাধু পাথর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করে ট্রলি, টাক্টর, ছোট ট্রাক দিয়ে পরিবহনের মাধ্যমে জুমগাঁও, হকনগরবাজার, চৌধুরী বাজার ও বাংলাবাজার এলাকায়পাথর ড্রাম্পিং করা হচ্ছে। ড্রাম্পিং করা লাখ লাখ টাকার পাথর ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারি অনুমোদন বা কোনো প্রকার লিজ ছাড়াই চিহ্নিত একটি চক্র বহুদিন ধরে এখান থেকে অবাদে পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারি করছেন। সম্প্রতি বৃষ্টিপাত ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে দিন-রাত পাথর উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় ড্রাম্পিং করা হচ্ছে। আর এরই সুবাদে ওই এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে চোরাই সিন্ডিকেট। নিজেদের সুবিধার্থে শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ ক’টি দোকান ও অস্থায়ী রেস্তরাঁ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার কিছু প্রভাবশালীর নেতৃত্বাধীন পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলে। আর পাথর উত্তোলন করে অব্যাহত লুটপাটের কারণে বাঁশতলা-হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ এলাকায় পরিবেশ ভারসাম্যের মারাত্মক ধস নেমেছে। এছাড়া স্থানীয় হকনগরবাজারের নিকটে মৌলা নদীতে  কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্লুইস গেটটি রয়েছে হুমকির মুখে। বালি খুঁড়ে পাথর উত্তোলনের কারণে কোয়ারি এলাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে এখন একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুকুরে পরিণত হয়। এছাড়া সীমান্তের একেবারে জিরো পয়েন্টে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রতিনিয়ত পাথর উত্তোলন করে শ্রমিকরা। স্থানীয় বাসিন্দা হাসিব উদ্দিন মেম্বার, নজরুল মেম্বার, আবদুল আহাদ, মানিক মাস্টার, জুয়েল, ফজলু মিয়া, বশির উদ্দিন, আবদুল মজিদ, বিএসএফের সোর্স সামছু মিয়াসহ বেশ কিছু লোকের ছত্রছায়ায় এখানে পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে অন্তত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পাথর খেকো সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে জানা যায়। ইতিপূর্বে নানা কারণে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাসহ একাধিক মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ সুনামগঞ্জ বিজিবির সিও লে. কর্নেল নাছির উদ্দিন পিএসসি বদলি হওয়ার পর থেকে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠে পাথর খেকো সিন্ডিকেট। তবে হাসিব উদ্দিন মেম্বার জানিয়েছেন তিনি পাথর উত্তোলনের সঙ্গে এখন জড়িত নেই। বর্তমানে কেউ কেউ এখান থেকে পাথর উত্তোলন করছেন। ঊশির উদ্দিন ও সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে কিছু সংখ্যক লোক স্থানীয় বিজিবি জওয়ানদের ম্যানেজ করে পাথর উত্তোলন ও বিক্রি করলেও তিনি আপাতত জড়িত নন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম মাস্টার বলেন, আমি শুনেছি ইদানীং পাথর উত্তোলন শুরু হয়েছে। গতকাল বিজিবি কর্তৃপক্ষকে এখান থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলে দিয়েছি। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, প্রশাসনের নজর ফাঁকি দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। পাথর খেকো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status