শেষের পাতা

‘আমার নার্গিসরে লুকাইয়া ফেলাইছে’

স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে

২৪ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

সাভারে ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল স্মরণকালের ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসে নিহত নার্গিসের মায়ের আকুতি। ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিহত নার্গিসের মা সাজেদা বেগম। সঙ্গে ছিলেন আরেক মেয়ে   বিলকিসও। কেন দাঁড়িয়ে আছেন জিজ্ঞাসা করতেই সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবা গো দুঃখের কথা কি বলবো, আমার ম্যায়াডা এখনো নিখোঁজ। ডিএনএ টেস্ট করিয়েও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। খুব সম্ভব ওরা আমার নার্গিস আক্তারকে লুকাইয়া ফেলাইছে। তা না হলে আমি ডিএনএ টেস্ট করাইছি নার্গিসের কবরটি পাওয়া যায় কিনা? কিন্তু সেখানেও পাইলাম না। তাই আমি মনে অনুভব করলাম আমার নার্গিসরে ওরা লুকাইয়া ফেলাইছে। যে জন্য রক্তের কালেকশনেও মিলে নাই আমার মেয়ের কবর। আমার বুকটা চিড়ে যদি আপনাদের দেখাতে পারতাম সেখানে কিসের আগুন জ্বলে? এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ভবনটির ৭ তলার নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেড কারখানার বাটিক মেশিনের অপারেটর নিখোঁজ নার্গিস আক্তারের মা সাজেদা বেগম।

গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি থানার নোয়াপাড়া গ্রামের মো. ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে নার্গিস আক্তার সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকায় আসে। এরপর সাভারের রানা প্লাজায় চাকরি নিয়ে ভবন ধসের ঘটনায় হারিয়ে গেছেন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে। তার মৃতদেহটি পর্যন্ত খুঁজে পায়নি স্বজনরা। তাই এখনো এপ্রিল মাস আসলেই মায়ের সঙ্গে রানা প্লাজার সামনে এসে ঘোরাঘুরি করে যমজ বোন বিলকিস আক্তারও। বোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বিলকিস। সে বলে, আমরা দুইটা যমজ বোন ছিলাম। একে অন্যকে কখনো ভুলতাম না। আমরা কোনো  পোশাক কিংবা ব্যবহারের জিনিস কিনলে একই রকম কালার মিলিয়ে কিনতাম। আমি একটা জামা বানালে ওকেও একই রকম জামা বানিয়ে দিতাম। এখন আমি কোনো কাপড় পরতে গেলেই বোনটির কথা মনে পড়ে যায়। তখন বুকের ভেতর অনেক কষ্ট হয়। দু’ চোখে পানি নেমে আসে।

এতটাই অভাগা আমি যে, নিজের বোনের লাশটি পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারছি না। মেয়ের জন্য কষ্ট কেমন হয় জানতে চাইলে সাজেদা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, যার সন্তান হারিয়ে গেছে সেই বুঝে সন্তান হারানোর জ্বালা। আমার বুকটা চিড়ে যদি আপনাদের দেখাতে পারতাম সেখানে কিসের আগুন জ্বলে। এই রানা প্লাজার ভবন ধসে কত শ্রমিক মারা গেছে, নিখোঁজ হইছে। তাদের মা-বাবা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনরা কীভাবে প্রিয়জনের খোঁজে রানা প্লাজার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আপনারা বুঝেন না বাবা? ভবন ধসের পর সকল জায়গায় খুঁজেও আমার মেয়ের লাশটি পাইনি। এখন আমি এই দুনিয়ায় কীভাবে বেঁচে থাকি। আপনারা তো জানেন না যে, মার কলিজায় কীভাবে এ জ্বালা সহ্য হয়? সরকার বলেছিল আপনার মেয়ের পরিবর্তে আপনাকে সাহায্য করা হবে। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করিয়েও মেয়ের কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই কোনো সহযোগিতাও পাইনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন- আমি কোনো সাহায্য চাই না, শুধু আমার মেয়ের লাশটা আমাকে ফিরিয়ে দিক। তাহলে আর কিছুই চাই না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status