দেশ বিদেশ

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব সমর্পণ নিয়ে বিএনপির চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার:

২৪ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাগরিকত্ব সমর্পণ নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে  তারেক রহমান হাইকমিশনে পাসপোর্ট জমা দিলে তা প্রদর্শনের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল সকালে দলের নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ চ্যালেঞ্জ দেন। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- তারেক রহমান যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে থাকেন তাহলে সেটি প্রদর্শন করুন। হাইকমিশন তো সরকারের অধীন, তাদের বলুন সেটি দেখাতে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা আত্মা বিক্রির সমতুল্য। এর আগে শনিবার লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন- ২০১২ সালে তারেক জিয়া তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে নিজের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব সারেন্ডার করেছেন। তিনি  কীভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন? এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিজের পাসপোর্ট জমা দেয়ার ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে উড়ো অবান্তর কথা বলেছেন তার কোনো ভিত্তি নেই। এই বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অনর্গল মিথ্যা বলার একটি ‘সেন্টার অব এক্সসেলেন্স’। সেটি আবারও প্রমাণ করলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, পাসপোর্ট সারেন্ডার করে তারাই যাদের ছেলে মেয়েরা বিদেশিদের বিয়ে করে বিদেশেই নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। বিদেশেই বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত থাকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকী গর্বের সঙ্গে নিজেকে বৃটিশ বলতেই ভালোবাসেন, বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে নয়। কিন্তু জিয়া পরিবারের কেউ বিদেশিদের বিয়ে করেননি। পৃথিবীর কোনো দেশে তাঁরা কোনো নাগরিকত্ব গ্রহণও করেননি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের সন্তানদেরকে বিদেশিদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রশংসা করেন। তারা দেশের জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেন, বেগম পল্লী বানিয়ে গোটা পরিবারকে সেখানে প্রতিপালন করে। তারা আবার কিসের বাংলাদেশি? জিয়া পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশের মাটি, পানি ও জলবায়ুর সন্তান। সরকারের চক্রান্তে মিথ্যা মামলায় পরিণতি কী হবে সেটি নিয়ে কোনো চিন্তা না করে কিছুদিন আগে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছেন খালেদা জিয়া। অথচ তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন বেগম জিয়া লন্ডন থেকে আর ফিরবেন না। কিন্তু তারা খালেদা জিয়াকে চিনতে পারেননি। তিনি বিদেশে গিয়েও সেখানে থেকে যাওয়ার চিন্তা করেননি। তিনি দেশে ফিরে আসার পর তাঁকে সরকারি ফরমানে প্রতিহিংসার সাজা দেয়া হয়েছে। এখন কারাবন্দি থেকে অমানবিক জুলুম সহ্য করে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়ার এই ভূমিকাই হলো জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিকের ভূমিকা। খালেদা জিয়া অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথানত করেননি। কিন্তু সবাই জানে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তথ্যমন্ত্রী প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন- ‘একটা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক প্রতিবেদন দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ভাষ্য না নেয়াটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ।’ রিজভী বলেন, আমি বলতে চাই- সরকারের ভাষ্য নিলে তো সেটি হবে তাদের একতরফা নির্বাচন, একতরফা অপশাসনের মতো একতরফা বাকশালী ভাষ্য। হেফাজতের সমাবেশে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করলে সেই তালিকা দেয়া যায় না। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার তালিকাও তথ্যমন্ত্রী প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাহলে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন পারভেজ, সুমনসহ অসংখ্য বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীর সন্তানরা তাদের পিতার জন্য আকুতি করছেন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে হাসানুল হক ইনু সাহেব তাদের ফেরত দিচ্ছেন না কেন? বিচারবহির্ভূত হত্যায় জনি, চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু, নড়াইলের তৌহিদুল ইসলাম তানু, ঝিনাইদহের ইদ্রিস আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনদের আহাজারি কি তাহলে মিথ্যা? তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, ওই রিপোর্টে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তাও সঠিক নয়। বিচারপতি এসকে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। তার এই বক্তব্যেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে দুঃশাসন চলছে, মানবাধিকার শূন্য বাংলাদেশ। বিরুদ্ধ মত  দমনে সর্বগ্রাসী নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা হচ্ছে। আপনার ভাষায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নিজেকে নিজেই বিতর্কিত করেছেন। তাহলো সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলেই প্রধান বিচারপতি বিতর্কিত হয়ে যাবেন? আর এই কারণেই এসকে সিনহাকে আপনারা সন্ত্রাসী কায়দায় দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজ দেশে নেই কেন? তাকে কিভাবে, কোন কর্মকর্তা অস্ত্র ঠেকিয়ে দেশ থেকে বের করেছিলেন, এটি কারো অজানা নয়। আগামীতে সবই প্রকাশিত হবে। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও আতাউর রহমান ঢালী উপস্থিত ছিলেন।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status