এক্সক্লুসিভ

হাত হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে সুমি

বগুড়া ও শেরপুর প্রতিনিধি:

২৪ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৭ পূর্বাহ্ন

এভাবে ট্রাকের নিচে চলে যাবে কোলের শিশু ভাবতেও পারেনি মা। রোববার দুপুর দেড়টায় জেলার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বাজার থেকে মহাসড়ক ধরে হেঁটে বাড়িতে যাচ্ছিলেন মরিয়ম বেগম। মায়ের হাতে হাত রেখেই পাশাপাশি হাঁটছিল কন্যা সুমি। কিছু দূর গিয়ে মহাসড়ক ক্রস করে অন্য রাস্তায় যেতে হবে তাদের। মা মরিয়ম কন্যাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তার মাঝখানে গিয়ে পড়ে থাকা একটি পাথরের সঙ্গে হোঁচট লেগে দু’জনেই পড়ে যায়। পিছন থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি ট্রাক রাস্তায় পড়ে যাওয়া সুমির বাম হাতের উপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই বাম হাত ছিঁড়ে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হতবাক হয়ে যায় মা। কন্যার এই অবস্থায় কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে সুমিকে উদ্ধার করে প্রথমে ওই এলাকার দুবলাগাড়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে চিকিসৎকরা তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। কিন্তু তার অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় বিকাল ৪টার দিকে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) স্থানাস্তর করা হয়। সেখানে রোববার সন্ধ্যায় সুমির অপারেশন করা হয়।

গতকাল বেলা ১১টায় সরজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সুমি এখন হাসপাতালের বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তার হাতের ক্ষতস্থান দিয়ে এখনো রক্ত ঝরছে। যদিও ডাক্তাররা বলেছেন ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত জোড়ালোভাবে কিছু বলা যাবে না। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, এরকম রোগীর ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইনফেকশন হতে পারে। যদি ওই সময় পর্যন্ত কোনো সমস্যা দেখা না দেয় তাহলে অন্যকোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।  
এদিকে সুমির পরিবার সুমিকে নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছে। সুমির বাবা দুলাল মিয়া শেরপুরের একটি দোকানের কর্মচারী। মা মরিয়ম বেগম বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। তিন সন্তানের মধ্যে সুমি সবার ছোট। বাড়ি শেরপুরের শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ফুলতলা দক্ষিণপাড়া এলাকায়। স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সুমি। সুমির বয়স মাত্র আট বছর। এই বয়সেই তার এতো বড় ক্ষতি হবে ভাবতেই পারছেন না মা মরিয়ম বেগম। মেয়ের এই অবস্থায় অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়েছেন তিনি। তেমন কোনো কথাও বলছেন না। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছেন তিনি।   

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শিশুটির অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়। মাথার আঘাত গুরুতর। একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, আরেক হাতের আঙ্গুল ভেঙে গেছে। এখানে ভর্তি করার সময় শিশুটির জ্ঞান ছিল না। বর্তমানে তার জ্ঞান ফিরেছে। তিনি আরো জানান, ক্ষত স্থানগুলো ড্রেসিং করে দেয়া হচ্ছে। তবে, ৭২ ঘণ্টা পার না হলে কিছুই বলা যাবে না।

বগুড়ার স্থানীয় সাংবাদিক আ. ওয়াহেদ ফকির রোববার হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে গিয়েছিলেন। সুমিকে ভর্তি করতে সার্বিক সহযোগিতাও করেছেন তিনি। গতকাল সকালে আবারো তিনি সুমিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছেন। তিনি বলেন, সুমির পরিবার একান্তই গরিব। চিকিৎসা ফ্রিতে হলেও আনুষঙ্গিক খরচের টাকাও মায়ের কাছে নেই। ফলে একদিকে মেয়ের চিন্তা অপরদিকে অর্থের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সুমির মা মরিয়ম বেগম।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, সুমির অবস্থা এখন আগের চেয়ে একটু ভালো। ওর জন্য হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত কিচিৎসা সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status