শেষের পাতা

গাজীপুর-খুলনায় ইভিএম ব্যবহার!

সিরাজুস সালেকিন:

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের কাজে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গাজীপুর ও খুলনা সিটি

নির্বাচন ছাড়াও সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার ইভিএম কিনছে নির্বাচন কমিশন। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে ২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম কিনতে গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। আজ নির্বাচন ভবনে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, তথ্য প্রযুক্তি’ বিষয়ক কমিটির সভায় ইভিএম ক্রয়ের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সভায় সিটি নির্বাচনে কোন প্রক্রিয়ায় ইভিএম ব্যবহার হবে সে বিষয়েও আলোচনা হবে। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করবেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপে বেশির ভাগ দল ইভিএমের বিপক্ষে মতামত দেন। গত সপ্তাহে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আপত্তি জানায়। নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে বিরোধিতার কথা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেন, ইভিএম-প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এসব মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে  দ্রুত ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। প্রাথমিক ভাবে আড়াই হাজারের মতো ইভিএম কিনলেও পরবর্তীতে আরো পাঁচ থেকে দশ হাজার ইভিএম কেনার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ইসি সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে নতুন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে সফল হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে যন্ত্রটি ব্যবহার করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে নতুন ইভিএম তৈরি হচ্ছে। নতুন ইভিএম সংগ্রহের লক্ষ্যে দরপত্র প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যর কমেটি করেছে ইসি। তারা বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমের চাহিদা, ক্রয় ও সংগ্রহের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, সিটি নির্বাচনে সবার কাছে ইভিএম গ্রহণযোগ্য হলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এজন্য ভোটার ও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত দিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। প্রসঙ্গত, ১/১১ এটিএম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুতি করা ৭০০ ইভিএম কিনলেও এগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১নং ওয়ার্ডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল  পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। পরে ২০১২ সালের  ফেব্রুয়ারিতে রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায়। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। আর গত ফেব্রুয়ারিতে খান মো. নূরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষ ব্যবহার করে। কিন্তু পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়নি। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন শেষ করে। পরবর্তীতে সুরক্ষিত ইভিএম তৈরিতে যত ধরনের সম্ভাব্য উপায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখে মাঠে নেমে পড়ে ইভিএমের কারিগরি টিম। এসব ত্রুটির কারণে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বিতর্কের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিরোধিতা করে আসছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status