দেশ বিদেশ

খালেদাকে আদালতে হাজির করা হয়নি

পরবর্তী শুনানি ১০ই মে

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:২৪ পূর্বাহ্ন

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১০ই মে দিন ধার্য করেছেন আদালত। একই সঙ্গে ওই দিন পর্যন্ত এ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার জামিন বর্ধিতকরণের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গতকাল এ আদেশ দেন। অসুস্থতার কারণে গতকালও খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়নি বলে জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি জানান, কারাগার থেকে জানানো হয়েছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি ‘আনফিট’। যে কারণে তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এদিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার পরবর্তী বিচারকাজ পরিচালনার জন্য গতকাল আবারো আদালতে প্রস্তাব করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তবে, তার এ প্রস্তাবে আপত্তি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার পক্ষে গতকাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন, আইনজীবী আব্দুর রেজাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মো. আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান তপন প্রমুখ।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ আদালতে চলছে। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর ও অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন একই আদালত। রায়ের পর থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুনানির শুরুতে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আজ (গতকাল) এই মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য আছে। কারাগার থেকে একটি কাস্টডি ওয়ারেন্ট এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ ও আনফিট। তাই তাকে হাজির করা হয়নি। দুদকের আইনজীবী বলেন, তাকে আদালতে হাজির না করায় এই মামলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে তিনটি তারিখে তাঁকে হাজির করা হয়নি। আমরা হতাশ হচ্ছি। কারা কর্তৃপক্ষের উচিত তাঁকে আদালতে হাজির করা। যাতে মামলার কাজ ব্যাহত না হয়।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, দুদকের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আনফিট। কিন্তু কি কারণে সেটি আমাদের জানানো হয়নি।
দুদকের আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়া যেহেতু অসুস্থ এবং তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না, তাই তার আইনজীবীদের যদি সম্মতি থাকে তাহলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকাজ হতে পারে। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও চান এই মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম হয়েছে। ভারতেও সমপ্রতি লালু প্রসাদ যাদবের (বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী) মামলার বিচারপ্রক্রিয়া এভাবে হয়েছে। এ সময় মোশাররফ হোসেন কাজল খালেদার আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচার পরিচালনায় আপনাদের আপত্তি আছে কি?
জবাবে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমাদের ঘোর আপত্তি আছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকাজ হতে পারে না। এ সময় সানাউল্লাহ মিয়া এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বাড়ানোর আবেদন করেন। দুদকের আইনজীবী এর বিরোধিতা করে বলেন, খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে হাজির করার পরোয়ানা রয়েছে। এ অবস্থায় তাঁর জামিন বাড়ানোর সুযোগ নেই।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আইনের বিধানের মধ্যেই এটি আছে। তার জামিন বাড়ানো হোক। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ১০ই মে দিন ধার্য করে ওই দিন পর্যন্ত খালেদার জামিন বর্ধিত করেন।
আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের আইনজীবী বলেছেন তিনি (খালেদা জিয়া) ফিট নন। কিন্তু আদালতে এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালেও নেয়া হচ্ছে না, তাকে চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না। তার শারীরিক অবস্থার কোনো ব্যাখ্যা উপস্থিত না করায় তার আইনজীবী হিসেবে আমরা উৎকণ্ঠিত এবং উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করবো কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি আদালতে তুলে ধরবেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার বিচারকাজ পরিচালনার বিষয়ে দুদক আইনজীবীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আসামির উপস্থিতিতেই মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে উপস্থিত থাকবেন এবং তার উপস্থিতিতে মামলার বিচারকাজ হবে, এটিই আইনের বিধান।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ তাকে (খালেদা জিয়া) হাজির করছে না। আজকে (গতকাল) যে কাস্টডি ওয়ারেন্ট এসেছে, সেখানে ডাক্তার লিখেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) আজকের (গতকাল) জন্য আনফিট। দুদক আইনজীবী বলেন, আমরা বুঝতে পারছি না, কেন তাকে হাজির করা হচ্ছে না। এই মামলাটির কার্যক্রম দেরি হচ্ছে। সঠিক সময়ে আমরা মামলাটি শেষ করতে পারছি না। যদি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাজির করতেন তাহলে এই মামলা এতদিনে আমরা শেষ করতে পারতাম। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলা পরিচালনার স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, আসামিপক্ষ এ বিষয়ে সহযোগিতা করছে না। মামলার বিবরণে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১০ সালের ৮ই আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চার জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক একান্ত রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সাবেক একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status