দেশ বিদেশ
দৌমায় পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা
মানবজমিন ডেস্ক
২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন
অবশেষে দুই সপ্তাহ আগে সিরিয়ার দৌমায় এক রাসায়নিক হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছে, তারা বিশ্লেষণের জন্য নমুনা সংগ্রহ করতে একটি হামলাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। তবে দৌমায় হামলার সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য সেখানে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, এক সপ্তাহ আগে দৌমায় হামলার অভিযোগ তদন্ত করতে সিরিয়ায় পৌঁছায় আন্তর্জাতিক রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল ওয়েপনস (ওপিসিডব্লিউ)। তবে সেখানে প্রবেশাধিকার পেতে এক সপ্তাহ দেরি করতে হয় তাদের। সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি হামলাস্থল পরিদর্শনে গেছে। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানিয়েছে, ওপিসিডব্লিউ-এর তথ্য অনুসন্ধানী দল (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন) সেখানকার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করবে এবং দৌমায় আরো পরিদর্শনসহ ভবিষ্যতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা ঠিক করবে। সংগঠনটি আরো জানিয়েছে, সংগৃহীত নমুনার বিশ্লেষণসহ অন্যান্য তথ্য ও দলটির সংগৃহীত বিভিন্ন পদার্থের ওপর ভিত্তি করে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন, তাদের প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং স্টেটস পার্টিস টু দ্য কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশনের বিবেচনার জন্য তাদের কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হবে। ৭ই এপ্রিল দৌমায় এক রাসায়নিক হামলার অভিযোগ করে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও বেশ কয়েকটি ত্রাণ সংস্থা। তবে নিরপেক্ষভাবে হামলার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। হামলাটিতে ৪০ জনেরও বেশি মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আহত হয়েছে অনেকে। হামলার অভিযোগকে ঘিরে, সিরিয়ার প্রধান মিত্র রাশিয়ার সঙ্গে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পরবর্তীতে হামলার জবাবে সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি স্থাপনাতে সমন্বিত হামলা চালায় দেশ তিনটি।
নিরাপত্তা ঝুঁকি: ওপিসিডব্লিউ দল গত শনিবারই দামেস্ক পৌঁছালেও নিরাপত্তাজনিত হুমকির কারণে এতদিন দৌমা পরিদর্শনের সুযোগ পায়নি। বিশেষ করে মঙ্গলবার জাতিসংঘের পরিদর্শনকারী দল দৌমার দুটি হামলাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার পর থেকে এই ঝুঁকি আরো বৃদ্ধি পায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিষয়ক বিভাগের (ইউএনডিএসএস) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনগণের অত্যধিক ভিড় নিরাপত্তাজনিত হুমকি বৃদ্ধি করায় প্রথম হামলাস্থল থেকে জাতিসংঘের পরিদর্শনকারী দলটিকে কার্যক্রম না সেরেই সরে আসতে হয়েছে। দ্বিতীয় ঘটনাস্থলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয় ও নিকটবর্তী জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু দামেস্কে ফিরে যেতে বাধ্য হয় জাতিসংঘের পরিদর্শনকারী দল। গত সোমবার সকালে, দ্য হ্যাগ শহরে অবস্থিত ওপিসিডব্লিউ-এর প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি বৈঠকে পশ্চিমা কূটনীতিকরা সিরিয়া সরকার ও মস্কোর বিরুদ্ধে দলটির কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, দৌমার অংশবিশেষে এখনো স্থলবোমা রয়ে গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স, রাশিয়ার এমন অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তারা সতর্ক করে, এরকম সময়ে সেখানে এমন অভিযান ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ ধ্বংস করে দেবার জন্য চালানো হচ্ছে। এই সপ্তাহের শুরুতে সাবেক ওপিসিডব্লিউ তদন্তকারী ইশাক মাজালি জানিয়েছেন, এরকম বিলম্বের পর তদন্তকারীরা সেখানে গিয়ে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা, হামলার পর অনেক সময় পার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তো, আপনি যদি এত লম্বা সময় ধরে এমন একটি রাসায়নিক হামলাস্থলের নিয়ন্ত্রণে থাকেন, ওই হামলাস্থলে হস্তক্ষেপ করে সেখানকার তথ্য পাল্টে দেয়া খুবই সহজ। তিনি আরো বলেন, আপনি আসলে সেটা করতে পারেন যেটাকে আমরা সামরিক ব্যবসায় পরিষ্করণ প্রক্রিয়া বলি। এর মানে হচ্ছে, ঘটনাস্থল থেকে সকল প্রকারের প্রমাণ সরিয়ে নেয়া। ভিন্ন কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে ঘটনাস্থলে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করে দেয়া।