দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবি বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়া খালেদা জিয়াকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দলটির পক্ষে দুইজন সিনিয়র নেতা গতকাল সচিবালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পৌনে একঘণ্টা বৈঠক করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। পরে সে বৈঠকে যোগ দেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে পরিত্যক্ত কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সমপ্রতি যেটা গুরুতর ঘটনা সেটা হলো উনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। উনি একাকী চলতে পারেন না।

কয়েক মাস আগে লন্ডনে ওনার অপারেশন হয়েছে। একটা চোখ অনেক লাল হয়ে গেছে। ওনার অর্থোপেডিক প্রবলেম আছে, তার দুই পায়েই রড বসানো। উনি হাঁটতে পারছেন না। দুর্বলবোধ করছেন খুব বেশি। নানা রকমের কমপ্লিকেশন আছে। কিন্তু তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করছে না সরকার। ফলে ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এজন্য ইউনাইটেড বা বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দুইদিন আগে তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম সরকারের অনুমতিক্রমেই। কিন্তু কারাফটক থেকে আমরা ফেরত এসেছি। এর পরের দিন তার (খালেদা জিয়া) আত্মীয়স্বজনরা দেখা করতে গিয়েছিলেন। তারাও দেখা করতে পারেননি। কারাফটক থেকে ফিরে এসেছেন। প্রথম দিন বলা হয়েছিল অন্য কথা, পরের দিন জানানো হয়েছে- উনি হাঁটতেই পারছেন না। দোতলা থেকে নিচে নামতে পারছেন না, এজন্য দেখা হবে না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কারাবিধি মেনে খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি সুস্থ আছেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, ওনার (খালেদা জিয়া) সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।

এই চিকিৎসা যেহেতু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষানির্ভর, অতএব উপযুক্ত স্থানে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করা হোক। আমরা বলেছি, ইউনাইটেড হাসপাতালে আগেও ওনার পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন সেই চিকিৎসকদের প্রতি তার আস্থা আছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, তারা চাইলেই সেখানে চিকিৎসা করাতে পারেন। এতে অন্য কারো অনুমতির দরকার হয় না। এজন্য কারা কর্তৃৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই যথেষ্ট। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পজেটিভ। তিনি আইজি প্রিজনকে ডেকে নিয়ে এসেছিলেন। ওনার সামনেই কথা হয়েছে। যেখানে তার (খালেদা জিয়া) ভালো চিকিৎসা বা পরীক্ষা করা সম্ভব সেখানে তা করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মতির কথা জানিয়েছেন। এখন আমরা অপেক্ষা করবো আইজি প্রিজন কী ব্যবস্থা নেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- বেশ কিছুদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে খালেদা জিয়ার ফিজিওথেরাপি নেয়া প্রয়োজন। সেটাও জেলখানায় সম্ভব নয়। অন্য কেউ এসে শিখিয়ে দিয়ে যাবে, জেলখানায় নার্সরা করবে, এটাও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আপনারা জানেন ফিজিওথেরাপিতে কোনো ভুল হলে সেটা বরঞ্চ স্বাস্থ্যের জন্য, রোগের জন্য আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেজন্য আমরা বলেছি, প্রফেশনাল ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। প্রবীণ এ নেতা বলেন, আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছি সেই আন্দোলনে যাতে কোথাও বাধা সৃষ্টি করা না হয়- সেটাও বলেছি। উনি বলেছেন, এটা উনি সংশ্লিষ্টদের বলবেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা ২৫শে এপ্রিল প্রেস ক্লাব বা বিএনপি অফিসের সামনে মানববন্ধন করতে চাই। আমরা বলেছি, সেটা আমরা যাতে করতে পারি কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়। এছাড়া আমরা শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক জনসভা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের অনুমতি চেয়েছি। আমরা বলেছি, আপনারা তাদের বলে দেবেন যাতে আমরা অনুমতি পাই। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস, এই দিবস পালনে কাউকে বাধা দেয়া উচিত হবে না। আলোচনায় আমরা যে জবাব পেয়েছি তা ইতিবাচকই মনে করি। কিন্তু অপেক্ষা করতে হবে, ফলাফল কতদূর কী হয়। বিএনপি কতদিন অপেক্ষা করবে- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো আশা করি আজকেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। চিকিৎসার জন্য তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। একজন অসুস্থ মানুষকে যত দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব সেটা করা উচিত। নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি আরেকটা কথা বলেছি- খালেদা জিয়া যদি দোতলা থেকে নিচে নামতে না পারেন, তাহলে তার মহিলা আত্মীয়-স্বজনদের দোতলায় উঠে তার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা উচিত। আশা করছি তারা সেটা করবেন। কারণ মানুষ অসুস্থ হলে আত্মীয়-স্বজনদের দেখলে খুশি হয়, রোগের উপশম হয়। কাজেই সেই অনুরোধটাও তাদের করেছি। প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই প্রশ্ন আসে কেন আমি বুঝি না। কারণ তার চিকিৎসা আমরা এখানকার হাসপাতালেই করার কথা বলছি। এখানেই যদি চিকিৎসা হয়ে যায় তাহলে অন্য আর প্রশ্ন আসবে কেন? কেউ এই প্রসঙ্গটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তুলছেন বলে মনে করি। বাইরে তাকে পাঠানোর কোনো প্রশ্ন আসছে না এখানে।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি নেতারা কোথা থেকে জেনেছেন- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিকিৎসকরা তাকে দেখতে গেছেন। আমরা সেই চিকিৎসকদের কাছ থেকে জেনেছি। এর চেয়ে ভালো সূত্র আর কী হতে পারে?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status