এক্সক্লুসিভ

মায়ের পরকীয়ায় সন্তান হত্যা, মোমেন গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

আড়াইহাজারে পরকীয়ার জের ধরে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হৃদয় (৯)কে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার মূল  হোতা রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার ভোররাতে আড়াইহাজার থানা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যৌথ অভিযানে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানা পুলিশের সহযোগিতায় নান্দাইল থানার মেরাকোনা গ্রামে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মোসলেম উদ্দিন ফকিরের ঘর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর মোমেনকে নিয়ে পুলিশ রোববার দুপুরে আড়াইহাজার থানায় পৌঁছায়।
এদিকে নৃশংস ঘটনার মূলহোতা মোমেনকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে শত শত উৎসুক গ্রামবাসী থানায় ভিড় করে। এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় হত্যার সঙ্গে মোমেন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল কাশেম জানান, হত্যাকাণ্ডের পর মামলার মূল আসামি রাশেদুল ইসলাম মোমেন পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিভিন্নস্থানে হানা দিয়েছিল। এবং শেষ পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

উল্লেখ্য, আড়াইহাজার উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের বাড়ৈপাড়া গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী শেফালী আক্তারের সঙ্গে তার বৈমাত্রেয় ভাই রাশেদুল ইসলাম মোমেনের দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল। প্রেমিক রাশেদুল ইসলাম মোমেন ভাবী শেফালী আক্তারের ঘরেই রাতযাপন করতো। এ ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বসে বিচার আচার হয়। কিন্তু তারপরও গোপনে তারা তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে তাদের দুজনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড শেফালী আক্তারের ছেলেরা দেখে ফেললে শেফালী আক্তার ও মোমেন শিশু হৃদয় ও জিহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা মতো ১২ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার সময় হৃদয় ও জিহাদকে কাঁথায় পেঁচিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে ঝলসে যায় নিষ্পাপ দুই শিশুর দেহ। শিশুদের চিৎকারে বাড়ির লোকজন এসে হৃদয়ের সারা শরীর পোড়া ও নিথর দেহ এবং ছোট ভাই জিহাদের অর্ধ পোড়া অবস্থায় কাতরাতে দেখতে পান। সেখান থেকে আহত জিহাদকে উদ্ধার করে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত হৃদয় ৩৫ নং বাড়ৈইপাড়া   সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র এবং আহত ছোট ভাই জিহাদ প্রথম শ্রেণির ছাত্র। ১৩ই এপ্রিল শুক্রবার এ ব্যাপারে নিহত হৃদয়ের দাদা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে আড়াইহাজার থানায় শেফালী আক্তার ও রাশেদুল ইসলাম মোমেনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘাতক মা শেফালী আক্তার ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইসলামপুর এলাকার সুন্দর আলীর কন্যা।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ শেফালী আক্তারকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে সে আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। পরে পুলিশ ১৪ই এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট ২য় আদালতের বিচারক মেহেদি হাসানের আদালতে তাকে হাজির করে। সেখানে সে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে স্বীকারোক্তিতে শেফালী আক্তার তার পরকীয়া প্রেমিক মোমেনকে বেশি দায়ী করে জবানবন্দি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার ওসি এমএ হক জানান, চাঞ্চল্যকর এই শিশু হত্যা মামলার অভিযুক্ত দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সে প্রাথমিকভাবে পুলিশের কাছে হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে তথ্য দিতে শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status