এক্সক্লুসিভ

পার্কে নিরাপদ নন প্রেমিকযুগল

মারুফ কিবরিয়া

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

যান্ত্রিক শহরে ব্যস্ত সবাই। জীবনের জন্য রাত-দিন যুদ্ধ। তারপর সুযোগ পেলে কেউ কেউ কিছু সময় প্রিয় মানুষের সঙ্গে কাটাতে চান। ছুটে যান কোলাহলমুক্ত ও সবুজে ঘেরা কোনো পার্ক বা উদ্যানে। বিশেষ করে প্রেমিকযুগলদের পছন্দ পার্ক। কিন্তু পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্রে এসে অনেককেই মুখোমুখি হতে হয় উটকো ঝামেলার। স্বস্তির নয় বরং বিরক্তি ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় তাদের। ঘটে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো ঘটনাও। আর এসব অপকর্মের বেশির ভাগই হয় ভবঘুরে কিশোর-তরুণদের মাধ্যমে। পাশাপাশি পার্কে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রাজধানীর বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক,  চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরে একাধিক দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।
শুক্রবার ছুটির দিন। তাই প্রমা ও তার প্রেমিক শিহাব যান বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সকাল থেকেই দু’জন বসে উদ্যানের একটি নিরিবিলি স্থানে গল্প করছিলেন। ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা, তখনই এক উটকো ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় প্রমা-শিহাবকে। গল্প করার ফাঁকে এক চা বিক্রেতা এসে হাজির। শিহাবকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞাস করলেন, ‘মামা চা দেবো’। শিহাব বললেন ‘না লাগবে না’। আবার একই প্রশ্ন মামা দু’জন এক কাপ চা নেন? এবার খানিকটা রাগের সঙ্গে শিহাব বললেন, বলেছি তো লাগবে না। বারবার কেন চায়ের কথা বলছেন? এরপর ওই চা হকার চটে বসলেন। বললেন ‘চা দিসি, বিলটা দ্রুত দেন। চইলা যাই’। শিহাব-প্রমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। চা পান করেনি অথচ বিল দিতে হবে। এ সময় চা বিক্রেতার সঙ্গে আরো কয়েকজন তরুণ এসে হাজির। তারা জানতে চাইলো কি হয়েছে। শিহাব তাদের বিষয়টা জানানোর পর, ওই তরুণরা হকারের পক্ষ নিয়ে বললো, ওই মামা তোমার চায়ের দাম কত? বললো, দুই কাপ চা ত্রিশ টাকা। এ কী! এবার আরো অবাক হলেন শিহাব-প্রমা। চা পান করেননি। তারওপর বিল দিতে হবে। আবার এত দাম! বিষয়টি নিয়ে শিহাব প্রতিবাদ করতে চাইলে প্রমার অনুরোধে ত্রিশ টাকা দিয়ে কোনো মতে উদ্যান থেকে বেরিয়ে এলেন। শিহাব বলেন, আগে জানতাম বোটানিক্যাল গার্ডেনে কোনো হকার থাকে না। নিরাপদ জেনেই এসেছিলাম। কিন্তু এরা কিভাবে কার মাধ্যমে ঢুকেছে তা জানি না। উদ্যানের বাইরে এসে জানতে পারি, উদ্যানেরই লোকজন এসব হকার প্রবেশে সহায়তা করে। তাদের আর কিছু ছেলে আছে যারা প্রেমিকযুগল দেখলেই বিরক্ত করে। আর আশপাশে ঘুরঘুর করে। প্রমা শিহাবের মতোই ছুটির দিনে বেড়াতে এসেছিলেন সাইদ ও তার প্রেমিকা নওরীন। তবে তাদের হয়রানির ধরনটা ভিন্ন। বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি গাছতলায় বসা ছিলেন এই প্রেমিকযুগল। হঠাৎ করেই এক কিশোর এসে পা জড়িয়ে ধরলো সাইদের। বললো কিছু খাবে কয়টা টাকার দরকার। সাইদ সহানুভূতি দেখিয়ে ১০টাকা পকেট থেকে বের করে দিলেন। কিন্তু তাতে যেন মন ভরেনি ওই কিশোরের। চেয়ে বসলো একশ’ টাকা। তাতেই সন্দেহ হয় সাইদের। তিনি টাকা না দিয়ে চলে যেতে বললেন কিশোরটিকে। কিন্তু যাবে না সে। এরই মধ্যে ওর সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো কয়েকজন। তারা ঘিরে ফেললো এই প্রেমিকযুগলকে। এবার টাকা দিতেই হবে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একশ’ টাকা বের করে দিয়ে উদ্যান থেকে বেরিয়ে এলেন সাইদ ও নওরীন। নওরীন বলেন, এমন ভয়াবহ অবস্থার সামনে কখনো পড়িনি। একটু ভালো সময় কাটাবো বলে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে দেখি দিনে দুপুরে ছিনতাই করে। দুপুর ১টা। আরিফ ও সোহানা উত্তরা থেকে আসেন চন্দ্রিমা উদ্যানে। উদ্যানের ভেতরে জিয়াউর রহমানের মাজারের পেছনেই একটি টুলের ওপর বসেছিলেন তারা। দু’জনের গল্পের মাঝে-মধ্যেই তিন তরুণের একটি দল আশপাশে ঘুর ঘুর করছে। একপর্যায়ে তাদের ইঙ্গিত করে আজেবাজে কথাও শুরু করেছে। জবাব দিতেই এগিয়ে যান আরিফ। ওই তরুণদের বলেন, কি ব্যাপার ডিস্টার্ব করছেন কেন? এ কথা বলতেই অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে তারা। একপর্যায়ে হাতাহাতিও শুরু হয়। কিন্তু আরিফ একা থাকায় তাদের কাছ থেকে রেহাই পেতে দ্রুত উদ্যান থেকে বেরিয়ে আসেন সোহানাকে নিয়ে। পরে উদ্যানের গেটে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে বিষয়টি অবহিত করেন। তারা আরিফকে জানান, এমন তো হওয়ার কথা না। আচ্ছা ঠিক আছে আপনারা চলে যান আমরা দেখছি। আরিফের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, উদ্যানের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও ওই পুলিশ সদস্যরা মূল ফটকেই বসে থাকেন। ভেতরে কি হয় তার খবরও রাখেন না।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এখানে যারা বেড়াতে আসেন তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। কোনো ঝামেলা হলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই।
প্রেমিকযুগলরা নিরাপত্তা পান না স্বয়ং রমনা পার্কে এসেও। এত নিরাপত্তাকর্মী আর পুলিশের আনাগোনা থাকলেও হকার আর বেপরোয়া তরুণ-কিশোরদের উৎপাতে কেউ ঠিকমতো বসতে পারেন না সেখানে। রমনা পার্কের ভেতরে দুপুর দুইটার দিকে বসে গল্প করছিলেন এক প্রেমিকযুগল। হঠাৎ তাদের মাথার ওপর থাকা একটি গাছ থেকে ঢাল পড়ে। প্রথমে ভেবেছিলেন আপনা-আপনি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু না, কিছুক্ষণ পর আরেকটি ঢাল তাদের সামনে পড়ে। উপরে তাকিয়ে দেখেন একটি কিশোর ছেলে কাজটি করছে। প্রতিবাদ করায় গাছ থেকে নেমে আসে সে। একপর্যায়ে আরো দু’জন এসে ওই কিশোরের সঙ্গে যোগ দেয়। দুই পক্ষের মাঝে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে মধ্যস্থতা করতে আসে আরেক যুবক। এ সময় ওই প্রেমিকযুগল বুঝতে পারেন পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। আর সেটা বুঝেই স্থান ত্যাগ করে বেরিয়ে যান পার্ক থেকে। প্রেমিকজুটির একজনের নাম ইশহাক এবং মেয়েটির নাম মীম। মীম জানান, প্রায়ই পার্কে ঘুরতে আসেন তারা। কোনোদিন বাদামওয়ালা, কোনোদিন চা-ওয়ালা  আর নয়তো কিশোর-তরুণরা এসে ঝামেলা পাকায়। এসব নিয়ে কেউ কিছুই বলে না। নিরাপত্তাকর্মীরা এসব দেখেও না দেখার মতো থাকে। বিষয়টি নিয়ে পার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সোহাগ নামে এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমাদের চোখে খুব একটা পড়ে না। আর ধরা পড়া মাত্রই আমরা কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status