অনলাইন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৮৫ শতাংশ টিউবওয়েল অকেজো

উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ৫:০৫ পূর্বাহ্ন

 রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন দাতা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত টিউবওয়েলের মধ্যে ৮৫ শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে এই পরিস্তিতি ধারণ করেছে। কিছু কিছু টিউবওয়েলে পানির দেখা মিললেই তা দিয়ে চাহিদা পুরণ হচ্ছেনা। ফলে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পানির চাহিদা পুরনের লক্ষ্যে গভীর নলকূলের স্থাপনের কাজ শুরু করলেও তা অদ্যবধি শেষ না হওয়ার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানির জন্য হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।

আজ রবিবার সকালে উখিয়ার মধূরছড়া, লম্বাশিয়া, ময়নারঘোনা, তাজনিমারখোলা ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ ক্যাম্প গুলোতে টিউবওয়েল স্থাপনের নামে সম্পৃক্ত ঠিকাদারগণ টাকা লুটপাট করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। যে কারনে টিউবওয়েল স্থাপনের মাস না পুরাতেই অধিকাংশ টিউবওয়েল পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্প গুলোতে প্রচন্ড তাপমাত্রায় পলিথিনের ঝুপড়ি গুলো থেকে আগুণের ফুলকি উঠছে বলে রোহিঙ্গাদের অভিমত। রোহিঙ্গা মাঝি হামিদ হোসেন জানান, তার ক্যাম্পের একটি টিউবওয়েলেও পানি নেই। অনেকেই বাজার থেকে বোতলজাত পানি ক্রয় করে পান করছেন। অন্যান্য কাজের জন্য পানির অভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা নাখাল হয়ে পড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন রোগে। সে জানায়, পানি সমস্যা নিবারণের জন্য সরকারি ভাবে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ পানি পাওয়া যায় তাও সঠিক করে বলা যাচ্ছেনা।

থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ ক্যাম্পে রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার শুরুতেই নলকূপ বসানোর হিড়িক পড়েছিল। এনজিওগুলো নামমাত্র টিউবওয়েল বসিয়ে কোটি কোটি টাকা দাতা সংস্থা থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ আলী জানান, স্থানীয় প্রতিবেশীর বাড়ী থেকে অনেকেই পানি সরববারহ করছে। এসব এলাকায় স্থানীয়রাও রোহিঙ্গাদের পানি দিতে বিরক্তবোধ করছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগ খাল, নালা, পুকুর ও জলাশয়ের পানি ব্যবহার করছে। যে কারণে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশু। ওই ক্যাম্পে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্রাকের স্বাস্থ্যকর্মী লিলুফা ইয়াসমিন জানান, ক্যাম্পে বর্তমানে পানি বাহিত রোগ আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি সহসায় বৃষ্টিপাত না হলে রোহিঙ্গাদের পরিনতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এমন মন্তব্য করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মেজবাহ উদ্দিন।

এব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি ভাবে ৭শ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। উখিয়ায় স্থানীয়দের জন্য ৫শ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দাতা সংস্থা ক্যাম্প গুলোতে ৫হাজার ৫৩টি অগভীর নলকূপ ও ৪৭৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অনাবৃষ্টির ফলে পানির স্তর ৫০ থেকে ৬০ ফুট নিচে চলে যাওয়ার কারনে বর্তমানে ৮৫শতাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। যে কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানি চাহিদা পুরনের জন্য তাদের কাভার ভ্যান গুলো দিয়ে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, অনাবৃষ্টির কারনে ক্যাম্প গুলোতে পানি সমস্যার সৃষ্টি হলেও তা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status