প্রথম পাতা

ডাকসুর সাবেক চার ভিপি যা বললেন-

স্টাফ রিপোর্টার

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করে ডাকসুর সাবেক নেতারা বলেছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের মানুষ এমন আন্দোলন দেখেনি। বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ আন্দোলন ভাঙতে রেকর্ড করেছে। সর্বজনীন কর্মসংস্থানের দাবিতে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার জনপরিসর আয়োজিত ‘কোটা সংস্কার ছাত্রকম্পের ন্যায্যতা’ শীর্ষক আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্না ও আমান উল্লাহ আমান অংশ নেন। গৌতম দাসের সঞ্চালনায় আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আন্দোলনকে স্তিমিত করাটাই ছিল তাদের স্ট্রাটেজিক পন্থা। ওবায়দুল কাদের ১৫ জন ছাত্রকে ডেকে এক মাসের বিশাল এক সময় বেঁধে দিলেন যাতে আন্দোলন না করতে পারে। কোটা সংস্কারের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। আজ ৪৭ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের কেন সুযোগ দিতে হবে। তাদের সম্মানিত করলে তাদের অন্যভাবে করেন, কিন্তু মেধার ওপর হাত দিয়ে কেন করতে হবে। ছাত্রদের এই আন্দোলন কেউ কখনো দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমি তাদের স্যালুট জানাই। মেধাবীদের একটা বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এ আন্দোলনকে অব্যাহত রেখে নিয়ে যেতে হবে সর্বজনীন কর্মসংস্থানের দাবিতে। এদিনকে নিতে হবে সেদিনের কাছে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ছাত্ররা যখন কোটা আন্দোলন করলো একটা বড়সড় ব্যাপার ঘটে গেল। ক্ষমতাসীনরা বলে যেকোনো থেকে কিছুতে রাজনীতি আনা যাবে না অথচ তারাই সব কিছুতে রাজনীতি নিয়ে আসে। কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদেরও তারা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। এই অভ্যুত্থানের মতো আন্দোলন আর শিগগির হয়নি। আমি গত কয়েক দশকে এমন দেখিনি। বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগ আন্দোলন ভাঙতে রেকর্ড করেছে। শেখ হাসিনা এই ব্যাপারে বেশ পাকা। ছাত্রদের ওপর কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ছেলেদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। মান্না আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথার পরে আমি শুনেছি মানুষ বলেছে, আমরা যা চাইছি আর ওনি কি দিয়েছেন। পরে তো কিছুই দিলেন না।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অনেক আচরণ করেছি। কিন্তু রাত দুইটার সময় যে ছাত্রীরা বের হয়ে আসছে তা আমাদের সময়ও হয়নি। কিন্তু কতটা খারাপ পর্যায়ে গেলে ছাত্রীরা হল থেকে তাদের ছাত্র ভাইদের জন্য বেরিয়ে আসে। গত পরশু রাত দুইটার দিকে ন্যক্কারজনকভাবে ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বের করে দিয়েছে। আমাদের সময় এমন ঘটনা ঘটেনি। স্বৈরাচারের সময়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এভাবে পুলিশ ঢুকতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পুলিশ ঢুকতে হলে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হতো। যারা সেই সময় দায়িত্বে ছিল তাদের পুলিশ প্রয়োজন হলে ইনডাইরেক্ট আমাদের বলতেন। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে কেমন অবস্থায়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠছে। আজ বাংলাদেশ কি অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে চোখ বেঁধে নেয়া হয়েছে। এটা পাকিস্তানি আমলের স্টাইল। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এহেন অবস্থায় সারা দেশের মানুষ আতঙ্কে আছে। আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য এ ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে সমর্থন করছি।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমাদের সংবিধান রয়েছে মানুষে মানুষে বৈষম্য করা যাবে না, নারী-পুরুষে বৈষম্য করা যাবে না। কিছু সময় মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটা ছিল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আজ ছাত্রসমাজ যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছে তা যৌক্তিক। মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০ ভাগ কোটা। মাত্র ৯৭ দশমিক ভাগ মানুষের জন্য ৪৪ শতাংশ। অথচ বাকি দুই দশমিক ৬৩ ভাগ মানুষের জন্য কোটা ৫৬ ভাগ। এটা হতে পারে না। মেধাবীদের সামনে আশা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এজন্যই কোটা সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্রছাত্রীদের ন্যায্য আন্দোলনে নিপীড়ন চালানো হয়েছে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হয়েছে। এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলা একটা নির্দিষ্ট মহল করেছে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য, মেধাবীদের দ্বারা বাংলাদেশ তোলার জন্য সকলে কোটা সংস্কারে একমত। সুফিয়া কামাল হলে ছাত্রলীগ সভাপতি ইশরাত জাহান এশার বহিষ্কারের কথা উল্লেখ করে আমান বলেন, ছাত্রলীগ তাকে বহিষ্কার করে কয়েক ঘণ্টা পরে বিশ্ববিদ্যালয় বহিষ্কার করেছে। আবার ছাত্রলীগ বহিষ্কারাদেশ ফিরিয়ে নিলে, বিশ্ববিদ্যালয়ও তা ফিরিয়ে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন ছাত্রলীগের পেছনে হাঁটছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status