দেশ বিদেশ

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন

সিরিয়া পরিস্থিতি: মুখোমুখি পরাশক্তিরা

মানবজমিন ডেস্ক

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

সিরিয়ার বারোয়ারি যুদ্ধের ময়দানে প্রতিনিয়ত উত্তেজনা বাড়ছে। সিরিয়ায় বিবদমান বিভিন্ন পক্ষ একে অপরের অবস্থান নিয়ে উত্তপ্ত হুঁশিয়ারি বিনিময় করলেও, সরাসরি কেউ কারো প্রতি সামরিক আক্রমণে যায়নি। সিরিয়ায় আমেরিকার আক্রমণ নিয়ে যত কথাই বলুক না কেন রাশিয়া, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সরাসরি সংঘাতে জড়ায়নি এই দুটি দেশ। বরং এই সপ্তাহে হাওয়া উল্টোদিকেই বইছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামেপর সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে শুক্রবারই জানিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে তিনি বলেছেন, এর জন্য আমেরিকার পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছে রাশিয়া। আলোচনার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুতিনকে হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ করেছিলেন মার্চ মাসে। গত ৭ই এপ্রিল সিরিয়ায় পূর্ব ঘৌটার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ শহর দুমায় রাসায়নিক হামলার অভিযোগ ওঠে। সেখানে প্রায় ৭০ জন শ্বাসকষ্টে মারা যায়। অসুস্থ হয় আরো পাঁচশ’র বেশি মানুষ। এর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সিরিয়ার তিনটি রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডার লক্ষ্য করে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। জার্মানি ও তুরস্ক এ হামলা সমর্থন করলেও চীন, ইরান, জর্ডান ও ইরাক বিপক্ষে অবস্থান নেয়। রাশিয়া ১৪ই এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে এ হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলে। বলিভিয়া ও চীন ছাড়া ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে আর কেউ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়নি। এদিকে ওই হামলায় আমেরিকার নেতৃত্বাধীন বিমান হামলায় ফ্রান্সের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ফ্রান্স সরকারের দেয়া মর্যাদাপূর্ণ লেজিওঁ দ’নর খেতাব ফিরিয়ে দেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়ার সময় আসাদ বলেন, তিনি এমন কোনো দেশের পুরস্কার পরবেন না, যারা আমেরিকার দাস। অবশ্য আসাদকে দেয়া এ খেতাব প্রত্যাহারে ‘আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম’ শুরু হয়েছে, ফরাসি সরকারের এমন ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নিজেই তার সম্মাননা ফেরত দিলেন।বাবার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেই ফ্রেঞ্চ সরকারের কাছ থেকে লেজিওঁ দ’নরের সর্বোচ্চ পদক ‘র্গ্যান্ড ক্রসে’ ভূষিত হয়েছিলেন আসাদ।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে সিরিয়া নিয়ে ইরান এবং আমেরিকা সমপর্কের মধ্যে উত্তেজনাও এখন চরমে। দুটি দেশই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে একে অপরের উপস্থিতি নিয়ে হুমকি-ধামকি বিনিময় করলেও এখন পর্যন্ত সেটি সামরিক তৎপরতায় গড়ায়নি। সিরিয়ার ময়দানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পক্ষের সেনারা মার্কিন মদতপুষ্ট কুর্দি বাহিনী এবং তাদের বিমান ঘাঁটিতে হামলা করছে। আসাদের পক্ষের সেই সেনাদেরই লক্ষ্য করে আক্রমণ করছে আমেরিকা। যদিও এখন পর্যন্ত তারা ইরানিয়ান রেভুলশনারি গার্ডের ওপর হামলা চালায়নি। ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড আসাদের পক্ষের যোদ্ধাদের এবং সিরিয়ার পক্ষের সামরিক বাহিনীকে সরাসরি সহযোগিতা করছে। অন্যদিকে সিরিয়ায় নাক গলানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বারবার সতর্ক করে আসলেও এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে ইরানের মদতপুষ্ট যোদ্ধাদের আমেরিকার সৈন্য বা দেশটির সমর্থনে থাকা সেনাদের সরাসরি আক্রমণের কোনো নির্দেশ বা ইঙ্গিত দেয়নি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামপ গত মাসে ইরানের কট্টর সমালোচক জন বল্টনকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। জাতিসংঘে আমেরিকার দূত নিকি হ্যালি আগুনে ঘি ঢেলেছেন আরও বেশি। তিনি বলেছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে ইরানের অনুপ্রবেশ ঠেকানো ট্রামপ প্রশাসনের মূল লক্ষ্যের একটি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মূল শত্রু দেশগুলোর একটি হচ্ছে ইসরাইলে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, সিরিয়ার মাটিতে ইরানের বাহিনীকে আক্রমণের আগে ইসরায়েলকে মার্কিন গোয়েন্দারা তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়ার ব্যাপারে বলেছে। ওয়াশিংটনে আরব সেন্টারের প্রধান জো ম্যাকারন বলেছেন, ‘আমরা এখন দেখছি আগ্রাসী এবং রক্ষণশীল উপদেষ্টাদের পরামর্শে আমেরিকা সিরিয়ার ময়দানে নামছে। ইসরায়েলের ইন্ধনে আমেরিকার ওই যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার, যা সমপূর্ণ বিপরীত ‘তবে ট্রামপ নিজে পেন্টাগনকে নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করছেন। ভবিষ্যতে হয়তো ইসরায়েলের লড়াই তাদের নিজেদেরই করতে হবে,’ বলেন তিনি। এদিকে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন এটা অতিরঞ্জিত।
ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের প্রফেসর স্কট লুকাস বলেন, দু’পক্ষের (ইরান ও আমেরিকা) মধ্যে চূড়ান্ত সংঘাতের কোনো সুযোগ নেই। কেননা দু’পক্ষই যা পাবে, তার চেয়ে অনেক বেশি দিতে হবে। আপনাকে এর জন্য প্রচুর সমপদ নিয়োগ করতে হবে। এবং কেউই জানেনা এটা কতোদূর গড়াবে!
বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তেজনা টানটান থাকলেও সিরিয়া নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের মধ্যে সামরিক কোনো পদক্ষেপ নেবে না আমেরিকা, ইরান এবং রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status