খেলা

দুই তরুণের সুস্থ প্রতিযোগিতা

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিসিবি উত্তরাঞ্চলের হয়ে বল হাতে মাঠে ছুটছেন দুই ছয় ফুটি ক্রিকেটার। অন্যপ্রান্তে চলছে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। ১৮তে পা রেখেছেন শরিফুল ইসলাম ও ১৯ বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফাতের বোলিংয়ের বিপক্ষে নাকাল মুমিনুল হক সৌরভ, লিটন কুমার দাসদের মতো তারকা ব্যাটসম্যানরা। দুই তরুণ পেসার যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন কার আগে কে উইকেট নেবেন। এ নিয়ে আবার মাঠে নিজেরা আলোচনাও করেছেন। শরিফুলের কথা ছিল, ‘দেখি মিশু কত উইকেট নিতে পার!’ অবশ্য সেই প্রতিযোগিতাতে ২১০ ও ১৭০ রানে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের দুই ইনিংস গুটিয়ে গেলেও দুই পেসার কেউ কাউকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ৪টি করে আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি করে উইকেট নেন দু’জনই। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ম্যাচ সেরা হন ইয়াসিনই। দু’জনের সামনেই পড়ে আছে দীর্ঘ সময়। লক্ষ্য জাতীয় দলে খেলা। তবে, দু’জনেরই চাওয়া উইকেট নেয়ার এ প্রতিযোগিতা যেন তারা সব স্থানেই ধরে রাখতে পারে। ইয়াসিন ও শরিফুল নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে। সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন: ক্রিকেটে কীভাবে আসলেন?
ইয়াসিন: আমি খুব ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি বিকেএসপিতে। আমার বাবা প্রবাসে ছিলেন। শুরুতে সাপোর্ট না দিলেও পরে তিনি মেনে নেন যখন আমি বিকেএসপিতে সুযোগ পাই। ক্রিকেটে আমি সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেয়েছি মায়ের কাছ থেকে। এ ছাড়াও আমার এক স্যার ছিলেন তিনি আমাকে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসে বিকেএসপিতে ভর্তি করেন। বাবা-মা দু’জনই আর্থিকভাবে কষ্ট করলেও আমাকে কখনো বুঝতে দেননি। বলতে পারেন পরিবারের অনুপ্রেরণা ও ত্যাগের কারণেই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

প্রশ্ন: বোলিংয়ে শক্তির দিক কোনটি?
ইয়াসিন: আমি বল বাউন্স করাতে বেশি পছন্দ করি। বিশেষ করে আমি এমনভাবে বল ফেলি হঠাৎ করেই ব্যাটসম্যানের সামনে বলটি লাফিয়ে ওঠে। এ ছাড়াও চেষ্টা থাকে একই জায়গাতে বল করার।

প্রশ্ন: ক্যারিয়ারের শুরুতেই সাফল্য পেলেন..
ইয়াসিন: আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। এর আগে ইনজুরির কারণে বিপিএল ও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আমার খেলা হয়নি। এবার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগিয়েছি। তাই এটি আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। প্রিমিয়ার লীগে খেলে সেখানে ভালো করেছি। গাজী ক্রিকেটার্সের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে আট উইকেট নিয়েছিলাম। এরপর বিসিএলে ভালো করলাম। দুটি বড় টুর্নামেন্টে যেমন পারফরম্যান্স চেয়েছি তেমনই হচ্ছে। এখন কাজ একটাই, নিজেকে সামনে এগিয়ে নেয়া।

প্রশ্ন: ইনজুরির সময়টাতে কি করেছেন?
ইয়াসিন: আমি ইনজুরির কারণে খেলাই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। তখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম। তখন চিন্তা করলাম মাশরাফি ভাইওতো অনেক ইনজুুরিতে পড়েছেন। আমি কেন পারবো না। এরপর আবার আমি পরিশ্রম করতে শুরু করি। পেস বোলারদের মধ্যে এখন মাশরাফি ভাই আমার অনুপ্রেরণা। আমি তার মতো কঠোর পরিশ্রম করতে চাই।

প্রশ্ন: শরিফুলের সঙ্গে বল করার সময় কোনো প্রতিযোগিতা অনুভব করেছিলেন কি না?
ইয়াসিন: অবশ্যই। শরিফুল যখন উইকেট পাচ্ছিল আমার নিজের কাছে অস্থির লাগতে শুরু করে। মনে হয়েছে ওর জায়গাতে আমি থাকলেও উইকেট পেতাম। যখন বল হাতে আসতো তখন চেষ্টা থাকতো শরিফুলের সমান উইকেট নেয়ার। আমরা দু’জনই খুব ইনজয় করছিলাম এভাবে উইকেট নিতে পেরে। নিজেদের মধ্যেই একটা প্রতিযোগিতা কাজ করছিল তখন।

প্রশ্ন: আপনার লক্ষ্য কি?
ইয়াসিন: জাতীয় দলে অনেকেই সুযোগ পায়। কিন্তু দেখা যায় দীর্ঘদিন সেই সুযোগ ধরে রাখতে পারেন না। আমি চেষ্টা করবো লম্বা সময় ধরে খেলতে। এ জন্য পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই। সেই কারণে যতটা সম্ভব পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: ১৮ তেই এ সাফল্যের কারণ কি?
শরিফুল:  আমি আসলে ৮ম শ্রেণিতে পরীক্ষার পরই ক্রিকেট শুরু করি। সেবার পরীক্ষা খারাপ হয়েছিল। এরপর ক্রিকেট খেলতে নিজ শহর ও বাবা-মাকে ছেড়ে চলে আসি দিনাজপুরে। সেখানে রাজশাহীর পেস বোলিং কোচ আলমগীর কবির স্যার আমাকে দেখে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। তিনি আমাকে ছেলের মতো মানুষ করে তোলেন। এরপর জহুরুল ইসলাম অমি ভাই, খালেদ মাসুদ পাইলট ভাই আমাকে খুব দেখে রাখেন। তাদের জন্যই আমি প্রিমিয়ার লীগে ও বিসিএলে খেলতে পারি। এবারই আমার প্রথম দেশের ক্রিকেটে এমন বড় জায়গাতে খেলা। খুব ভালো লাগছে যে আমি আমার পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছি। তবে মাত্র শুরু। আমাকে আরো অনেক দূর যেতে হবে।

প্রশ্ন: পরিবার ছেড়ে এত দূরে এসে খেলছেন। তাদের কতটা সাপোর্ট পেয়েছেন?
শরিফুল: পরিবারের সমর্থনেই আমি পঞ্চগড় থেকে রাজশাহীতে এসে খেলতে পারছি। আমার বাবা-মায়ের অনেক কষ্ট হয়েছে আমাকে ক্রিকেট খেলাতে। কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। আমাকে তারা বারবারই বলেছেন আমাদের যতই কষ্ট হোক না কেন তুমি খেলা চালিয়ে যাও।

প্রশ্ন: আপনার  বোলিংয়ে শক্তির দিক কোনটি?
শরিফুল: ওয়ানডেতে কাটার দেয়ার চেষ্টা করি। এ ছাড়াও চার দিনের ম্যাচে আমি আমার বাউন্সটাকে বেশি কাজে লাগাই। এ ছাড়াও এক জায়গাতে বল করে যাওয়ার চেষ্টা করি। বিশেষ করে ডট বল দেয়ার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: ক্রিকেটে কাকে আদর্শ মানেন?
শরিফুল: আগে স্টার্ককে ফলো করতাম। এখন মুস্তাফিজ ভাইকে। আমি তাকে দেখেই শিখছি। আমার তার বোলিংয়ের সব কিছুই ভালো লাগে। এ ছাড়াও মাশরাফি ভাই আমার দারুণ পছন্দের। তিনি শুধু ক্রিকেটেই না মানুষ হিসেবেও আমার আইডল।

প্রশ্ন: ম্যাচে বল করার সময় ইয়াসিনের সঙ্গে কি কথা হয়েছিল?
শরিফুল: তিনি বলেছিলেন যে আমার চেয়ে বেশি উইকেট নেবেন। আমিও তাকে বলেছি আমিও আপনার চেয়ে বেশি উইকেট নেব। কিন্তু দু’জনের একটি পরিকল্পনা ছিল। রান কম দেব, এ জন্য ডট বল করতে হবে। সেখানে যতটা সম্ভব আমরা চেষ্টা করেছি ডট বল করে উইকেট তুলে নেয়ার। দু’জনের প্রতিযোগিতা ছিল বলেই সফল হয়েছি। আশা করি এমনটা ভবিষ্যতেও থাকবে।

প্রশ্ন: স্বপ্ন কি দেখেন?
শরিফুল: অবশ্যই জাতীয় দলের খেলার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে, তার আগে বাস্তবতা হলো আমাকে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। এখনই দূরের কথা না ভেবে সামনে যা আছে তা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status