বিশ্বজমিন

ট্রাম্প ও জেমস কোমির আলোচনার মেমো ফাঁস

মানবজমিন ডেস্ক

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

রাশিয়া কানেকশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির আলোচনা হয়েছিল। কোমি এই আলোচনার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করেছিলেন। পরে তা রাশিয়া কানেকশন তদন্তের দায়িত্বে থাকা স্পেশাল কাউন্সেল মুয়েলারকে প্রদান করেন। কোমির লেখা এসব মেমো পর্যালোচনা শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে বিচার বিভাগ তা মার্কিন কংগ্রেসের কাছে হস্তান্তর করে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওই মেমোগুলো সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে যায়। এসব মেমোতে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, ফাঁস হওয়া মেমোতে এই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে যে, ট্রাম্প তদন্তে বাধা দিচ্ছেন। তবে বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের সমর্থকরা জোর দিয়ে বলেন, এসব মেমোতে কোমি কোথাও উল্লেখ করেন নি যে, তিনি তদন্ত কার্যক্রমে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারা বলেন, ট্রাম্প ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত করেননি। তবে এসব মেমোর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, এসব মেমোতে কোমির বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ধারণা করা হয়, তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্যই কামিকে বরখাস্ত করা হয়। দ্বিতীয়ত, মেমোর লেখাগুলো পুরোপুরি বর্ণনামূলক। এখানে খুঁটিনাটি সব কিছু উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশ্লেষণী কিছু লেখা হয়নি।
কোমির লেখা মেমো স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুয়েলারের কাছে হস্তান্তর করার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার জেমস কোমিকে মিথ্যাবাদী ও তথ্য ফাঁসকারী আখ্যায়িত করেছেন। তার দাবি, মেমোতে শুধু কোমির নিজের বক্তব্য লেখা হয়েছে। ওই মেমোর ভিত্তিতে কোনো তথ্য যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব না। ফাঁস হওয়া মেমোতে কোমি লেখেন, বিভিন্ন সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে সংবাদমাধ্যমে এই কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন যে, ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করা হচ্ছে না। গত বছরের ৩০শে মার্চ এক বৈঠকে ট্রাম্প কোমিকে বলেন, যদি এই বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে খুবই ভালো হবে। এসময় জেমস কোমি ট্রাম্পকে স্মরণ করিয়ে দেন আসলেই তারা ট্রাম্পের বিষয়ে তদন্ত করছেন না। এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হলে বিচার বিভাগের সম্মতিতে তা করতে হবে। পরের মাসে কোমিকে আবারো এই বিষয়ে অনুরোধ করেন ট্রাম্প। কোমি তাকে জানান, এই বিষয়টি তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছেন। তবে তার থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
মেমোতে কোমি লেখেন, নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফিনের নাম ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। পরবর্তীতে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে মিথ্যা তথ্য দেন ফ্লিন। বিষয়টি জানার পরেও তাকে বরখাস্ত করেননি ট্রাম্প। পরে ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এমনকি তখনো ফ্লিনকে পুরোপুরি ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করে হোয়াইট হাউস। পরে এই বিষয়ে জেমস কোমি সাক্ষ্য দেন। কিন্তু ফ্লিনের বিরুদ্ধে তদন্ত না করতে চাপ প্রয়োগ করেন ট্রাম্প। মেমোতে এটা পরিষ্কার হয় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সহযোগীরা মাইকেল ফ্লিনের বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল।
মেমোতে বলা হয়, ট্রাম্পকে মস্কোর একটি হোটেলে যৌনকর্মী কেলেঙ্কারির বিষয়ে জানান কোমি। তিনি প্রেসিডেন্টকে বলেন, এই বিষয়ে তার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযোগ উঠতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তখন মিস ইউনিভার্সেল অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাশিয়া গিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই সফরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা হয় ট্রাম্পের। একদিন পুতিন তাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী যৌনকর্মী রয়েছে।’
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্প যৌনকর্মীদের নিয়ে যা বলেন তা আসলেই বিস্ময়কর। দু’জন রাষ্ট্রপ্রধানের একে অপরকে এমন কথা বলা অস্বাভাবিক। যাই হোক, ব্লুমবার্গকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিনও ট্রাম্পের বিষয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প একজন পরিণত মানুষ। অনেক বছর ধরেই তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী রমনীদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন তিনি। এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে রমণীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি মস্কোর হোটেলে ছুটে গেছেন। যদিও এটা সন্দেহাতীত যে, আমাদের মেয়েরা সবচেয়ে সুন্দরী।
কোমির লেখা মেমোতে দেখা যায়, তৎকালীন এফবিআই পরিচালক প্রেসিডেন্টকে বুঝতে হিমশিম খেয়েছেন। বিশেষ করে পূর্বের প্রেসিডেন্টদের তুলনায় ট্রাম্প অন্য রকম। মেমোতে ট্রাম্পের সঙ্গে কথোপকথনের বিস্তারিত বর্ণনা লেখেন জেমস কোমি। তিনি লেখেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা ছিল খুবই এলোমেলো। প্রায়ই অন্য বিষয়ে কথা হতো। হঠাৎ করেই আবার মূল বিষয়ে ফিরে আসতেন তিনি। যার কারণে পূর্বের বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে বের করা কষ্ট। পুরো আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুবই অস্পষ্ট, অসংলগ্ন ও বিতর্কিত কথা বলতেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status