বাংলারজমিন

ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট সরব কসবা ও আখাউড়া

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট এবং এর সঙ্গে মনোনয়ন প্রার্থী দু-নেতার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নিয়ে সরব এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া উপজেলা। এই তৎপরতায় লিপ্ত নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সোচ্চার স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলালীগ। তারা কেন্দ্রে লিখিত আবেদন করেছেন। অপরদিকে মামলায় জড়ানোর সমালোচনা করছেন দু-নেতার সমর্থকরা। ভোট রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে ফেসবুক পোস্টকে ব্যবহার করার অভিযোগ তাদের। নির্বাচনী আসন ক্রমিকে এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন।
কসবা উপজেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক মোছাম্মৎ ছালমা আক্তার বাদী হয়ে গত ১১ই এপ্রিল কসবা থানায় একটি অভিযোগ দেন। যাতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট রাশেদুল কায়সার জীবনের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। এ আসন থেকে দু’বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহআলম (৫৫), কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় (৪৫) ও কুটির বিলঘর গ্রামের মো. মাজেদুল ইসলাম মাজেদের (৩২) সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব পোস্ট দেয়া হয়েছে বলে ছালমা তার অভিযোগে উল্লেখ করেন। তাদের মধ্যে অ্যাডভোকেট মো. শাহআলম ও শ্যামল কুমার রায় দু’জনেই আগামী সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। ছালমা ছাড়াও গত এক সপ্তাহে আরো ৬ জন ফেসবুক পোস্ট নিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে শিউলি আক্তার রত্না নামে আরেকজন নেত্রী রয়েছেন। বাকি ৫ জন সরকার দলীয় পুরুষ নেতাকর্মী। কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান মোট ৭টি অভিযোগ জমা হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন- এগুলো তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ধারায় মামলা করার বিষয়। এজন্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অনুমোদন লাগবে। আমরা এখন এগুলো এসপি অফিসে পাঠাবো। সেখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যাবে।
অবশ্য এরআগেও এখানকার সরকার দলের অনেক নেতাকর্মী ফেসবুকে সমালোচনা করে মামলার আসামি হয়েছেন। জেলও খেটেছেন অনেকে। বিপদ এড়াতে ফেসবুক ব্যবহারও ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।
ছালমার অভিযোগটিতে বলা হয়- ১১ই এপ্রিল রাত অনুমান ৪টার সময় মইনপুরে নিজ বসতঘরে ছালমা আক্তার তার কক্ষে বসে ফেসবুক চালাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান মোহাম্মদ জয় হাসান ও ঋঞ ঘধরবস ওংষধস নামীয় ফেসবুক আইডিতে ছালমার নিজের এবং অন্যান্য মেয়ের ছবি সংযুক্ত করে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর একান্ত সচিব অ্যাডভোকেট রাশেদুল কায়সার জীবনের সঙ্গে তাকে (ছালমা) জড়িয়ে কুৎসিত ও অসামাজিক পোস্ট দেয়া হয়েছে। অভিযোগে তিনি বলেন- রাশেদুল কায়সার জীবন আমার ফেরেস্তাতুল্য বড় ভাই। তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের কসবা আখাউড়ার উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কসবা-আখাউড়ার উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তিনি একজন সৎ চরিত্রের অধিকারী। তার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে রাশেদুল কায়সার জীবনের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন এবং সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। রাশেদুল কায়সার জীবনকে সমাজের উঁচু মানের ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনৈতিক উল্লেখ করে অভিযোগটিতে আরো বলা হয়-একটি পক্ষের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য সাম্প্রতিককালে এমডি মহসিন তার নিজস্ব ফেসবুক আউডিতে রাশেদুল কায়সার জীবনকে জড়িয়ে মনগড়া, অপ্রত্যাশিত, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন শব্দ প্রয়োগ করে দেশ ও সমাজকে মানহানি করছেন। আমি সন্দেহ করি অ্যাডভোকেট মো. শাহআলম, শ্যামল কুমার রায় ও মো. মাজেদুল ইসলাম মাজেদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই ফেসবুকে এধরনের অপপ্রচার হচ্ছে। ছালমা আক্তার মানবজমিনকে বলেন- আমাকে নিয়ে কয়েকবার ফেসবুকে লেখা হয়েছে। আমার নাকি জীবন ভাইয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক আছে। দলের অন্যান্য মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে এনে আমি নাকি জীবন ভাইয়ের কাছে তুলে দেই। এর চেয়ে নিকৃষ্ট মন্তব্য আর হতে পারে না। মানুষের চরিত্র নিয়ে কথা বললে তার আর কিছু থাকে না। রাজনীতি করি বলেই কি আমার চরিত্র খারাপ হয়ে গেল। আমি কারো ক্ষতি করিনি, কোনো সময় কাউকে নিয়ে কোনো সমালোচনা করিনি। বাধ্য হয়ে আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিছু করার থাকে না। জীবন ভাই আমার পিতৃতুল্য। তার সঙ্গে যদি দলীয় কারো কোনো সমস্যা থাকে বা ক্ষমতা নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে সেখানে আমরা তো কারো ক্ষতি করেনি। তাতে আমাদের মতো নিরীহ লোকজনের সম্মান নিয়ে টানাহেঁচড়া হবে কেন। যারা সম্মান দিতে জানেনা তাদের মোকাবেলা করার দরকার আছে। এসব আইডিতে শাহআলম ভাই ও শ্যামলের নামে প্রচারণা হয়। সেজন্য আমি মনে করেছি এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এব্যাপারে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর এপিএস রাশেদুল কায়সার জীবন বলেন-আমি জানিনা মানুষ কত নিচে নামতে পারে। ছোটবেলা থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত মেয়ে সংক্রান্ত ব্যাপারে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কিনা সেটা আপনারা খোঁজ করে দেখেন। আমার জীবনে কোনো দিন মেয়েদের দিকে তাকিয়েছি কিনা সন্দেহ আছে। সম্প্রতি ঢাকা থেকে সাংবাদিকরা এসেছিলো কসবায় পিকনিকে। সে সময় কুটি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মুন্নি সরকারের ছেলে আমার সঙ্গে ছবি তুলবে বলে অনুরোধ করে। তখন ৩৫-৪০ জন মিলে সারিবদ্ধ একটি ছবি উঠাই। এই ছবি থেকে আমার আর মুন্নির অংশ আলাদা করে ফেসবুকে দিয়েছে। এলাকায় গেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে একহাজার মহিলা আসে। যা বাংলাদেশের কোথাও আসে না। মানুষ ফেরেস্তাও মনে করে আমাকে। সে জায়গায় এরকম পোস্ট দেয়ায় তারা সবাই ক্ষুব্ধ। যারা এসব করছে তাদের চরিত্র সবাই জানে। তাদের মতো চরিত্র আমার না। তারা আমার বিরুদ্ধে কোনো কিছু পায় না। আমার জনপ্রিয়তা, সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এসব করে। দেশের ১৬ কোটি লোকের কেউ বলতে পারবে না আমি কারো কাছ থেকে এককাপ চা খেয়েছি। ৮৭৯ জনের চাকরি হয়েছে। আমরা কারো কাছ থেকে এক পয়সাও নেইনি। তিনি আরো বলেন- আমাদের কাছে প্রমাণ আছে অ্যাডভোকেট শাহআলমের নেতৃত্বে এসব হচ্ছে। এসব আইডি শাহআলম-মহসিনের সৃষ্টি। এ ঘটনায় কসবার মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলালীগ নেত্রীরা ক্ষুব্ধ। শাহআলমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তিনি এলাকায় আসতে পারেন না। সেজন্য ফেক আইডি দিয়ে প্রচারণা চালান। ফেক আইডি দিয়ে এসব করে কেউ মনোনয়ন পায় না। শ্যামল কুমার রায় বলেন-সবগুলো অভিযোগেই আমাদের নাম দেয়া হয়েছে। আমি তো ফেসবুকে গত দু-বছরে কোনো স্ট্যাটাসই দেইনি। এগুলো প্রশ্নই আসে না। এমন কুরুচিপূর্ণ চিন্তা আমাদের মাথায় নেই। আইনের বাইরে আমরা কেউ না। তারা এগুলো তদন্ত করে দেখুক।
সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. শাহআলম বলেন, এসব মিথ্যা। আমার সাথে তো আনিসুল হক সাহেবের সম্পর্ক ভালো। জীবনের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক খারাপ নয়। আমি কেন এগুলো করতে যাব। এগুলো করে কোন কিছু হয় নাকি। রাজনীতি করছি এতো বছর। মানুষ কি এতো নিচে নামে নাকি। তাছাড়া পার্সোনালি আমি নিজেও জানিনা কিভাবে ফেসবুক চালায়। যারা এগুলো করছে তাদেরকে ধরুক। এখন তো প্রযুক্তির সাহায্যে এগুলো ধরা যায়। আমিও চাই এর শক্ত বিচার হোক।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status