দেশ বিদেশ

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

ভোটের লড়াইয়ে তারাও আছেন

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও সিপিবির পাশাপাশি মেয়র পদে চার ইসলামি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে প্রচারে রয়েছেন। এরই মাঝে তাদের কেউ কেউ দলীয় প্রতীক সংবলিত লিফলেট ছাপিয়ে তা বিতরণ করছেন। যদিও প্রধান দুটি দলের প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে আছেন এসব ইসলামি দলগুলোর ভোট তাদের বাক্সে নিতে।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর মেয়র পদে নির্বাচনে লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির দলীয় মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দীন সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দল জাসদের রাশেদুল হাসান রানা এবং  বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের জামায়াতে ইসলামির মহানগর আমির মো. সানাউল্লাহ স্বতন্ত্র পার্থী হয়েছেন। সিপিবির প্রার্থী আছেন কাজী রুহুল আমিন। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল জামায়াত ছাড়াও ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসলামি ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা হেফাজতে ইসলামের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়াও ইসলামি ঐক্য ফ্রন্টের অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মো. নাসির উদ্দীন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। যদিও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন চাকরিজীবী ফরিদ উদ্দিন।
গাজীপুর সিটির নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যায় পিছিয়ে নেই ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের তিনটি দলের ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা না গেলেও জামায়াতের রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। নগরে তাদের ভোটও রয়েছে উল্লেখযোগ্য। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় পরলেও সিটি নির্বাচনকে পুঁজি করে জামায়াত তাদের ত্যাগী কর্মীদের কাজে লাগিয়ে এরই মধ্যে শক্ত অবস্থান তুলে ধরেছে। দেয়ালে দেয়ালে রয়েছে জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ এসএম সানাউল্লাহর পোস্টার। দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ায়  গাজীপুর মহানগর উন্নয়ন পরিষদের ব্যানারে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াতের মহানগর আমির সানাউল্লাহ। তিনি বলছেন, রাষ্ট্রীয় বৈরি আচরণের পরও তাদের দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে বিশ দলীয় জোটে থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনে জোটবদ্ধই নির্বাচন করতে হবে, এমন নয়। তবে, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা করে জোটগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত আসলে সেটাকেও তিনি অবশ্যই স্বাগত জানাবেন। এই মুহূর্তে আধুনিক ও নিরাপদ গাজীপুর গড়ার প্রত্যয়ে নির্বাচনী মাঠের লড়াইয়ে জেতার লক্ষে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সাংগঠনিক ভিত্তি আরো মজবুত হবে এবং আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি। গতকাল দিনভর অধ্যক্ষ সানাউল্লা নগরের বোর্ডবাজার ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচার কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীগণ। আপাতত জোটের বাইরে থেকে এককভাবে জামায়াত নির্বাচনী মাঠে থাকার পরিকল্পনাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ইসলামী ঐক্যজোট নির্বাচনমুখী জোট। তিনি মনে করেন প্রতিটি ইসলামী শক্তি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য চিন্তা ভাবনা করছে। বিএনপিকে ছেড়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোট এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রথম থেকে রঙ্গিন পোস্টার ছড়িয়ে ও নানাভাবে রয়েছেন নির্বাচনী মাঠে। নির্বাচনী আচরণ বিধিকে মাথায় রেখেই এখন প্রতিদিনই মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন তিনি। মতবিনিময় করছেন এবং নানা ধরনের পরিকল্পনা করছেন নির্বাচনে ভালো ফলাফল আনতে। চেষ্টায় রয়েছেন ইসলামি অন্যান্য সংগঠন ও জোটের এবং অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের সমর্থন আদায় করতে। আর সমর্থন নিতে পারলেই ভোটের বাক্স ভরে উঠবে বলে মনে করছেন তিনি। এ ছাড়াও এই নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের দলীয় কার্যক্রম ও পরিচিতি অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি।
এই সিটিতে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে কর্মীদের হাতে দলীয় প্রতীক মোমবাতি সংবলিত হ্যান্ডবিলসহ নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে এলাকায় ছুটছেন বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন। গতকাল তিনি জুমার নামাজের পর নগরের জয়দেবপুরের শ্মশানঘাট এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকালে ভুরুলিয়া এলাকায় এবং সন্ধ্যায় গণসংযোগের পাশাপাশি তাদের সংগঠনের ভক্তবৃন্দের সঙ্গে পরামর্শ সভা ও নির্বাচনী পরিকল্পনা করেন। তিনি জানান, ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনের বার্তা তিনি পৌঁছে দিতে চান এই নির্বাচনের মাধ্যমে। জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন, পরিবেশের দূষণ, মাদক, জঙ্গিবাদ ও মুক্ত করে  নাগরিক সেবা দিতে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বড় দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে থেকে মানুষ এখন বিকল্প প্রার্থী চাচ্ছেন এবং সেই বিকল্প প্রার্থী নিজেকেই মনে করছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আমরা অন্য কোনো স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না, দেশে ইসলামি হুকুমত কায়েম করার জন্য রাজনীতি করছি, নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রার্থী হয়েছি। ভোটের মাঠে সফল হতে বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি মনের কিছু রাজনৈতিক দল ও জোটের সমর্থন নেয়ার চেষ্টা ও প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে সেসব স্পষ্ট হবে।
ওদিকে একটু ব্যতিক্রম ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের অনুগামী, ভক্ত, মুরিদ মিলিয়ে দলটির সাংগঠনিক পরিস্থিতি ভালো। আপাতত দলটি কোনো জোটে যোগ না দিয়ে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকতে চান। এখন পর্যন্ত মূলত কওমি মাদরাসা ভিত্তিক কার্য্‌ক্রম চালিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থীকে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মো. নাসির উদ্দীন গতকাল দিনভর টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়েছেন। তিনি জানান, মানুষ আজ তথাকথিত গণতন্ত্র, শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতন এসব থেকে মুক্তির জন্যে ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলাম কল্যাণের জন্যে- এই বার্তাটি নির্বাচনের মাধ্যমে নগরবাসীর মাঝে পৌঁছে দিতে চাই। ন্যায় ভিত্তিক, ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং নির্বাচনে জিতে মানুষের সম্যস্যাগুলোর সমাধান করে উন্নত নগর গড়ে তুলতে চাই।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status