এক্সক্লুসিভ

কটিয়াদীর নদীতে চাষাবাদ হচ্ছে ধান

মো. রফিকুল হায়দার টিটু, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে:

২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা প্রায় ২২০ বর্গ কি.মি. এলাকায় ১টি পৌর ৯টি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রায় ২৫টি নদ-নদী, খাল-বিল প্রবাহিত ছিল। যার বেশির ভাগই শুকিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদ-নদী, খাল-বিলগুলোর নাম পর্যন্ত ভুলতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। অথচ এক সময় এই নদ-নদী, খাল-বিল ছিল কৃষি, ব্যবসা আর প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। যার উপর নির্ভর করতো এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা। একদিকে অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট আর নানা প্রকল্প অন্যদিকে খননের অভাবে এসব নদ-নদী, খাল-বল ভরাট হয়ে শুকিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে নৌ চলাচল ও নদী কেন্দ্রিক হাট বাজার। এক সময়ের জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করছে কৃষক। তাতেও সেচ সংকটে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। আবার বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টি বা উজান থেকে নেমে আসা পানির প্রবাহে জলমগ্ন হয়ে পড়ে হাওর বেষ্টিত ইউনিয়নগুলো। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও ঘনঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। দুর্ভোগ বাড়ছে খেটে খাওয়া কৃষক, শ্রমিক ও হতদরদ্রি সাধারণ মানুষের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, সূতী, ঘোড়াউত্রা, কুড়িখাই, দিনমনি ও মাগুড়া নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদ করছে কৃষক। তাছাড়া আচমিতা, জালালপুর, লোহাজুরী, বনগ্রাম, মুমুরদিয়া ও করগাঁও এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পুরুষ বধিয়া বিল, কুরয়ানি বিল, বাগাদাইর বিল, চাতলিয়া বিল, রোয়া বিল, ঝাওয়া বিল, কইরানী বিল, রুপসা বিল,  দেওভাঙ্গা বিল,  ডেকিয়া বিল, শিমুল কান্দি বিল, গাজীগিলা বিল, হাসা বিল, ভরা বিল, রাহি বিল, গোদাইর বিল, সিদ্ধি বিল, দুরবা বিল, কুটির বিল, চামিলি বিল, তপাই খাল, হিদলছড়ি খাল, নন্দার খাল,  দৌলাবাইদ খাল, কাঠালিয়া খাল ও বাউনখালি খাল শুকিয়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার একর জামিতে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পানির অভাবে যেমন জলজ সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে চলে যাচ্ছে। নলকূপ বা পাম্পে পানি উত্তোলন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। নদী ও খাল-বিলগুলো দিনদিন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে।




কটিয়াদী উপজেলার পৌর এলাকা, জালালপুর, লোহাজুরী ও মসূয়া ইউনিয়ন এবং পার্শ্ববর্তী মনোহরদী, বেলাব উপজেলার সীমানাকে বিভক্ত করে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। যা ভৈরবে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত ছিল। প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী আড়িয়াল খাঁর একটি অংশ পৌর এলাকার থানার সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনারায় বেলাব হয়ে ভৈরবের মেঘনা নদীতে মিলিত ছিল। কিন্তু স্থানে স্থানে অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট আর ব্রিজ নির্মাণের কারণে এই নদ-নদীর বেশিরভাগ অংশ এখন বদ্ধ জলাশয়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই নদ-নদী এখন প্রভাবশালীদের দখলে। এই নদীর পাড় ঘেঁষে গড়া উঠা বাজারগুলো এখন ধংসের দ্বারপ্রান্তে।

এই খাল-বিল, নদ-নদীগুলো খননের দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। অবশ্য বিআইডব্লিউটিসি পুরাতন ব্রহ্মপুত্র টোক বাজার থেকে খনন কাজ শুরু করেছে। এতে কিছুটা আশার আলো দেখা  দিয়েছে। অত্র এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি নদী খনন চলমান প্রকল্পটি কোনোভাবেই যেন বন্ধ হয়ে না যায়। অপরাপর নদী ও খাল বিলগুলো খননের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশা করে এলাকার মানুষ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status