বাংলারজমিন

কুশিয়ারায় ভাঙন, আতঙ্ক

আবদুর রহমান সোহেল, রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে:

২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

রাজনগরে কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছেন উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকয়েকটি গ্রামে। উত্তরভাগ ইউনিয়নের কালারবাজারেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরইমধ্যে ফতেহপুর ইউনিয়নের তিনটি পরিবারের ভিটেমাটি কুশিয়ারাতে তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এছাড়াও কুশিয়ারাতীরের কামালপুর, সুরিখাল, সুনামপুর, কেশরপাড়া, উমরপুর, জাহিদপুর, তুলাপুরসহ ১০-১২টি গ্রামে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।  সমপ্রতি ভাঙনকবলিত বেড়কুড়ি গ্রামে গেলে ভিড় করেন ভাঙন সন্ত্রস্ত গ্রামবাসী। এদের কারো ভিটে কুশিয়ারা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙতে ভাঙতে কারো উঠোনের কাছে চলে এসেছে নদী। কারো বাড়ির পাশে ফাটল দিয়েছে। অনেকেই অন্যত্র সরেগেছেন। কেউ সরে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। বেশির ভাগই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। গ্রামের শৈলেশ চন্দ্র দাস, বিধুভূষণ দাস ও নর্মদা দাসের ভিটা এরইমধ্যে কুশিয়ারা নদীতে হারিয়ে গেছে।

উত্তরভাগ ইউনিয়নের কালারবাজার ও কামালপুর গ্রামের বেশ কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিগত অর্থবছরে কালারবাজারে কিছু তাজ হলেও তা নদীগর্ভে চলেগেছে। ওই এলাকার সাধারণ মানুষ বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করছেন। তবে, ভাঙনকবলিত এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক রয়েছে।

গত ডিসেম্বরে (২০১৭) এই ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র কয়েকদিনে তিনটি ঘর নদীতে তলিয়ে যায়। এরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নিজেদের নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণের সামর্থ্য নেই। নদী ভাঙনের কারণে সর্বহারা অবস্থায় এখন তাদের দিন চলছে। ঘরহারা নর্মদা দাস বলেন, ‘আমরার সারা ভিটা নিছেগি। পরিবারে ছয়জন সদস্য। সবাইরে নিয়া অন্যের বাড়িতে আছি। একেবারে সর্বহারা অই (হয়ে) গেছি।’
নর্মদা দাসের বাড়ির একাংশে যে কটি ভিটা আছে। তার একটিতে বাস করছে সোমা রানি দাসের পরিবার। সোমা রানি দাস বলেন, ‘নদী আগেই জমি নিয়া গেছে। বসত ভিটাটাই সম্বল। এখন ভিটাও নিয়া যার। বাড়ি বানানোর মতো সামর্থ্যও নাই। বাড়ির পুরুষ মানুষ দিনে কামকাজ করতে বাইরে থাকেন। আমরা নারীরাই সবসময় বাড়িতে থাকি। বাইচ্চাকাইচ্চা নিয়া ঝুঁকির মধ্যে আছি। রাইতে চোখে ঘুম নাই।’ গ্রামবাসী জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বর মাস থেকে হঠাৎ করে ভাঙন তীব্র হয়ে ওঠেছে। পশ্চিম বেড়কুড়ি গ্রামের দাসপাড়ার রামানন্দ দাসের বাড়ি থেকে পূর্ব বেড়কুড়ির মঞ্জুর হোসেনের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দিচ্ছে। অনেক বাড়ির উঠান পর্যন্ত নদী চলে এসেছে। অনেক বাড়ির কাছে ফাটল দিয়েছে। গ্রামের শতাধিক পরিবারের ভিটেবাড়ি এখন ঝুঁকির মধ্যে। একইভাবে পাশের শাহপুর গ্রামেও ভাঙন শুরু হয়েছে।

এদিকে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেড়কুড়ি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে গত ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সাংসদ (মৌলভীবাজার-৩ আসন) সৈয়দা সায়রা মহসিনের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সাংসদ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সুপারিশ করেছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, নদী ভাঙনে বসবাসের জায়গা বিলীন হয়ে গেলে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না গ্রামবাসীর। পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, কুশিয়ারা অনেক বড় নদী। কুশিয়ারাতে অস্থায়ী কাজ টিকবে না। কুশিয়ারার ভাঙনরোধে বকের স্থায়ী কাজ করতে হবে। কুশিয়ারার স্থায়ী বাঁধের জন্য ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট প্রস্তাব করেছি। কারিগরি কমিটি অনুমোদন হয়ে গেছে। এবার আর কাজ হবে না। তবে বর্ষায় বড় সমস্যা হলে জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হবে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status