দেশ বিদেশ

‘ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল আশা করে চীন’

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

নির্বিঘ্ন এবং স্থিতিশীল পরিবেশে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে চায় চীন। এখানে চীনের মতো ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল হবে বলেও আশা করে বেইজিং। ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানানো হয়েছে গতকাল। দূতাবাসের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সেলর লি গুয়াং জুন সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে চীনের অনেক কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে, তাই পরিস্থিতির বিষয়ে তাদের উদ্বেগও রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর আগামী নির্বাচনের কোনো প্রভাব পড়তে পারে কি-না এমন প্রশ্নও আসে। জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করি এখানকার আগামী নির্বাচন স্থিতিশীল ও নির্বিঘ্ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি চীনের গুরুত্ব ও উদ্বেগের অন্তর্ভুক্ত।
আগামী নভেম্বরে চীনের সাংহাইতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠেয় ‘চায়না ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট এক্সপো’র বিষয়ে জানাতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দূতাবাস। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহায়তা নিয়েও কথা বলেন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিষয়ক কাউন্সিলর লি গুয়াং জুন। বলেন, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অবকাঠামোসহ উন্নয়ন খাতে ২৪ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। ওই সব সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নে আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই। তবে প্রয়োজন ও বাস্তবতা বিবেচনায় যখন যেখানে অর্থায়ন প্রয়োজন বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তার ব্যবস্থা নেবে বেইজিং। এ সময় বাংলাদেশ-চীন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও ভাবা উচিত বলে মত দেন জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিক। দূতাবাস সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংহাই-এক্সপোর বিস্তারিত তুলে ধরেন। জানান, প্রেসিডেন্ট শি’ ঘোষিত ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতি বাস্তবায়নে গঠিত ‘অন দ্যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম’ এই এক্সপো’র আয়োজক। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য ও উন্নয়নে চীনের অগ্রগতি ও ভূমিকা তুলে ধরা হবে। এতে চীনের বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোও অংশ নেবে। বিভিন্ন দেশের স্বতন্ত্র প্যাভিলিয়ন থাকবে। চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রদর্শনী হবে এটি। এ কারণে বছর জুড়েই এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচার চালানো হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রদর্শনীতে চীনের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও অংশ নেবে। কীভাবে অংশ নেবে তা যৌথ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে। সংবাদ সম্মেলনে অপর প্রশ্নের জবাবে চীনা কূটনীতিক বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীনের রপ্তানির পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি বলেন, চীন সব সময় চায় অংশীদার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি না থাকুক। কারণ চীন সবক্ষেত্রে দু’পক্ষের উইন-উইন অবস্থাকে সমর্থন করে। তিনি আশা করেন ভবিষ্যতে চীনে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়বে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নেই। এ চুক্তি হলে দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসা সহ বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হতে পারে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হওয়া সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনেই জটিলতা আছে। এসব জটিলতা কমলে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়বে। চীনা যেকোনো প্রতিষ্ঠান কঠোর আইন ও বিধির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দুর্নীতিকে চীন কখনই উৎসাহিত করে না। দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে চীন সরকার তদন্ত করে এবং অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status