এক্সক্লুসিভ

টাঙ্গাইলে কৃষকের মাথায় হাত

সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইরি-বোরো মৌসুমের শেষ সময় এখন। মাঠে মাঠে সোনালী ফসল দোল খাচ্ছে। কয়েকদিন পরই ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠবে কৃষক পরিবারগুলো। প্রতিটি কৃষকের চোখে-মুখে পাকা ফসল ঘরে তোলার হাসি থাকার কথা। এ যেন প্রতিটি কৃষকের আজন্ম এক স্বপ্ন। কিন্তু কৃষকের সেই স্বপ্নে আগুন দিয়েছে ব্লাস্ট নামের ছত্রাক। ব্লাস্টের আক্রমণে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ ক্রমেই পুড়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হয়, মাঠের ফসল পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে কৃষকের মাথায় হাত! ধানের পেটে চাল নেই! কৃষকের মুখে ভাষা নেই। শুধুই হাহাকার। বুধবার সরজমিন উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। রোপণের কিছুদিন পরেই কিছু ক্ষেতে ব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষি অফিসও এলাকায় ব্যাপক প্রচারণাসহ কৃষকদের পরামর্শ দিতে থাকে। পরে কৃষকের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ফসলগুলো পুনরায় ব্লাস্টের আক্রমণের শিকার হয়েছে। কৃষি অফিস আরো জানায়, সাধারণত ব্রি-২৮ জাতের ধানে এ রোগটি বেশি আক্রমণ করেছে। আগামীতে কৃষকদের ব্রি-২৯ জাতের বীজ রোপণ করার পরামর্শ দেয়া হবে।  এ বিষয়ে একাধিক কৃষক ও স্থানীয় সার-বীজ ডিলারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ধানের চারা রোপণের কিছুদিন পর সবুজ পাতায় কালো দাগ দেখা দেয় এবং ধানের পাতা পচে যেতে থাকে। ওই সময় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ট্রাইসাইক্লাজোল উপাদানের ট্রুপার-৭৫ ডব্লিউ পি, সেলট্রিমা জাতীয় বিভিন্ন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়। এতে কৃষকের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে এসে ধানের শীষ বের হওয়ার তিন-চারদিন পরই শীষগুলো মরে যাচ্ছে। ধানের পেটে কোনো চাল নেই। মনে হয় ধানগুলো পেকে গেছে। কাছে গিয়ে দেখা যায় শীষের সবক’টি ধানই চিটে। কৃষি কর্মকর্তারা পুনরায় স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও সুফল পাচ্ছেন না বলে জানান কৃষকরা। উপজেলার ছোটমৌশা গ্রামের কৃষক নজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ধানক্ষেতে তিন বার বিষ দিছি (দিয়েছি)। কিন্তু এই হিনজা মরা (শীষ মরা) রোগ ভালো হইলো না। শেষে সব ধান মইরা গেল।’
উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার দুই একর জমিতে দুই-একটা শীষ মরা দেইখাই ক্ষেতে বিষ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে হাজার হাজার টাকা ভরে সেচ দিয়েছি। টাকাও গেল, ধানও গেল। এখন আর কোনো আশা নাই।’
বুধবার দুপুরে উপাজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। কৃষকের চোখের সামনেই ক্ষেতের সোনার ফসলগুলো ধীরে ধীরে পুড়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য একজন কৃষকের কাছে বড়ই নির্মম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাও মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই, মনটা ভালো নেই। মাঠের অবস্থা ভালো না! সারা দেশে একই অবস্থা।’ এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূইয়া মানবজমিনকে বলেন, ‘সাধারণত স্প্রে করার পর নতুন করে এ রোগ আক্রমণ করার কথা নয়। অনেক সময় কৃষক স্প্রে’র ডোজ না মেনে কম পরিমাণে স্প্রে করেন। যে কারণে হয়তো ছত্রাকটি পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। আমরা উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরও শেষ রক্ষা হবে কি না জানি না।’ তিনি কৃষকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status