এক্সক্লুসিভ

নবাবগঞ্জে ভণ্ড ফকিরের হাতে দুই নারী খুন

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

হত্যাকারী মোকলেছের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে দুই নারীর খুনের মূল রহস্য। ঢাকার নবাবগঞ্জ  উপজেলায় ৭ হাজার টাকার জন্য মোকলেছ নামে এক ভণ্ড ফকিরের হাতে খুন হয় নার্গিস আক্তার (৪০) ও তার সঙ্গে থাকা বান্ধবী ময়না বেগম (৫৫)। ৯ই এপ্রিল সন্ধ্যায় মা নার্গিস আক্তার ও তার মায়ের সঙ্গে থাকা ময়না বেগমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ১০ই এপ্রিল ছেলে তানভীর আহমেদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ১৩ই এপ্রিল ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকার আওনা চকের একটি পুকুরে এক মহিলা পানি আনতে গিয়ে দুই নারীর লাশ দেখে পুলিশকে জানায়।
সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ঐ দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে। এরপর থেকে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টায় সার্বক্ষণিক লেগে থাকে। মামলার বাদী নার্গিস আক্তারের ছেলে তানভীর আহমেদ পুলিশকে জানায়, ৯ই এপ্রিল সন্ধ্যায় মা নার্গিস আক্তারকে কে বা কারা মোবাইল ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় ময়না বেগম তার সঙ্গে যায়।
এ সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ১৫ই এপ্রিল সকালে উপজেলার মাহাতাপ পুর গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে মোকলেছ মিয়া (৩২) কে আটক করে পুলিশ।
আটকের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন মোকলেছ এবং ১৬ই এপ্রিল মোকলেছকে আদালতে পাঠালে সিনিয়র ডিভিশন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর রহমানের আদালতে সে নিজেই ওই দুই নারীকে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।  
মোকলেছ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য ও হত্যার দায় স্বীকার করে থানায় ও আদালতে যা বলেছেন, স্বামীকে বাদ্যগত (বশ) করতে নার্গিস আক্তার চর দরি কান্দা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে মো. কাউছার উদ্দিনের ফকিরের শরণাপন্ন হন। কাউছারের কাছে কয়েকদিন ঘোরাফেরা করে নার্গিস। একপর্যায়ে এ কাজ করতে পারবে না বলে কাউছার অপারগতা জানিয়ে বলেন আপনার স্বামীকে বাদ্য করতে চাইলে মোকলেছ ফকিরের কাছে যেতে হবে। নার্গিস কাউছারের কাছে মোকলেছ ফকিরের  ঠিকানা জানতে চায়। ঘটনার ১মাস আগে নার্গিস আক্তারকে সহযোগী কাউছার চরদরি কান্দা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে মোকলেছ ফকিরের কাছে নিয়ে তাকে পরিচয় করে দেন। স্বামীকে বাদ্যগত (বশ) করতে হলে ৭ হাজার টাকা দিতে হবে বলে নার্গিসের কাছে দাবি করেন মোকলেছ। সে ৭ হাজার টাকা দেয়। মোকলেছ ফকিরি কেরামতি দিয়ে কিছু করতে না পারলে নার্গিস টাকা ফেরত চায়। মোকলেছ টাকা ফেরত দিতে অপারগতা জানায়।
এ সময় নার্গিস থানা পুলিশ ও  রাজনৈতিক নেতা তার এক খালাতো ভাইকে জানাবে বলে মোকলেছকে হুমকি দেয়। এরপর থেকে মোকলেছ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে এবং একপর্যায়ে ৯ই এপ্রিল সন্ধ্যায় মোকলেছ টাকা ফেরত দিবে বলে লোকমান নামে এক ইজিবাইক চালকের মোবাইল ফোন নিয়ে নার্গিসকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে তাকে আওনার চকে আসতে বলে। এ সময় নার্গিস বলে এখন যদি টাকা ফেরত দাও তাহলে সেখানে আসবো। মোকলেছ রাজি হলে নার্গিস ও ময়না আওনার চকে একটি পুকুর পারে আসে। এ সময় মোকলেছ হাতুড়ি দিয়ে নার্গিসের মাথায় একাধিক আঘাত করে নার্গিসকে হত্যা করে। এ ঘটনা দেখে ফেললে  মোকলেছ নার্গিসের সঙ্গে থাকা ময়নাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করে।
এ বিষয়গুলো মামলার তদন্ত অফিসার নবাবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানায়।
কামরুল হাসান জানায়, মোকলেছের সহযোগী কাউছার উদ্দিনকেও আটক করেছে পুলিশ। নিহত নার্গিসের  মোবাইলের শেষ মোবাইল কলটি ছিল ইজিবাইক চালক লোকমানের। লোকমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে লোকমান জানায় তার কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে মোকলেছ নামে এক ব্যক্তি ফোন দিয়েছিল। সেই সূত্রে মোকলেছকে আটক করি । মোকলেছ ওই দুই নারীকে নিজেই হত্যা করেছে বলে স্বীকার করলে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে মোকলেছ ওই পুকুর থেকে হত্যার আলামত হাতুড়ি দুই নারীর পরিহিত বোরকা ও নার্গিস আক্তারের সালোয়ার বের করে দেন। লোকমানকে মামলার সাক্ষী রাখা হয়েছেও বলেও জানান কামরুল হাসান।
এছাড়া তদন্ত অফিসার সাংবাদিকদের একটি প্রেস লিস্ট দিয়ে আরো জানায়, মামলার ঘটনার বিষয় তদন্ত অব্যাহত থাকবে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আরো কেউ আছে কি-না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছেন বলে তদন্ত অফিসার জানান।
উল্লেখ্য ১৩ই এপ্রিল লাশ উদ্ধারের পর নিহত নার্গিসের ছেলে তানভীর আহমেদে জানান, ৯ বছর যাবৎ মায়ের সঙ্গে বাবার দ্বন্দ্ব চলছে। সে এ বাড়িতে থাকে না। গত ৫ বছর আগে বাড়িতে এসে তার মাকে বাবা ইমান আলী বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় সে দেখতে পেয়ে মাকে বাঁচায়। বাবা মায়ের এই পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে লজ্জায় অন্য কাউকে জানান না। তবে  একাধিকবার তার মাকে বাবা হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status