বাংলারজমিন

সীতাকুণ্ডে বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় বাড়ছে রোগবালাই

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

১৯ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশে দূষণ করে গড়ে উঠেছে কালো তেলের অবৈধ ডিপো। এই ডিপোগুলোতে কালো তেল পুড়িয়ে পোড়া মবিল তৈরি করতে গিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়ায় জনসাধারণের প্রতিনিয়ত দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার কারণে বেড়ে চলছে শিশুদের কাশি, অ্যাজমা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগবালাই।

জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এবং গ্রামের ভিতরে সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, চেয়ারম্যানঘাটা, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, ইমামনগর, কদমরসুল, লালবেগসহ ২০টির মতো স্থানে এই অবৈধ কালো তেলের ব্যবসা করে আসছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার সময় সুলতানা মন্দির, কুমিরা ও ভাটিয়ারীসহ কয়েকটি স্থানে গেলে স্থানীয়রা জানান, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের ভিতরে পরিবেশ দূষণ করে কালো তেল পুড়িয়ে পোড়া মবিল তৈরি কারখানা গড়ে তুলেছে। যার কারণে পোড়া মবিলের কালো ধোঁয়ায় শিশু-বৃদ্ধাসহ অনেকে বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। শুধু তাই নয় এসব নামবিহীন পোড়া কালো তেলের কারখানার এই দুর্গন্ধযুক্ত কালো ধোঁয়া যেন মানুষ তথা সকল জীবের কাছ থেকে অক্সিজেন কেড়ে নিচ্ছে।

বিষাক্ত এসিড মিশ্রিত কালো তেল পোড়ানো ধোঁয়াগুলো বায়ুমন্ডলকে ঘনীভূত করছে, ফলে এলাকার বিশেষ করে শিশুদের কাশি, এজমা ও হাঁপানি রোগের সূত্রপাত ঘটছে। পাশাপাশি এ এলাকার বয়স্ক লোকদের শ্বাসকষ্টও বেড়ে চলেছে। সূত্রে জানা গেছে কয়েকটি কারখানার আশপাশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিল। শিক্ষক ও অভিভাবকরা শিশুদের অসুবিধার কথা ভেবে ইতিপূর্বে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোন কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন। মসজিদের ইমাম হারুন বলেন, কালো ধোঁয়ার বিষাক্ত গন্ধের কারণে মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ পর্যন্ত পড়তে অসুবিধা হয়। এলাকার সালাউদ্দিন, জসিম, নবী, আমিনুল হকসহ অনেকেই অভিযোগ করে জানান, পোড়া তেলের গন্ধে বাচ্চাদের নিয়ে বসবাস করতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঘনঘন বাচ্চাদের অসুখ হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নামসর্বস্ব ডিপোগুলোতে বড় বড় বয়লার। পুরাতন জাহাজের কালো তেল বয়লারে নিয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সালফার-ডাই-অক্সাইড এসিড মিশিয়ে তা পর্যাপ্ত পরিমানে আগুনের তাপ দিয়ে পাতলা একটি সংমিশ্রন তৈরি করে নিচ্ছেন তারা। ঐ পাতলা সংমিশ্রন পদার্থগুলি ঠান্ডা করে বোতলজাতের মাধ্যমে অটোমোবাইলের লুব অয়েল নামে বাজারে মিশিয়ে দিয়ে ফায়দা লুটছে অবৈধ কালো তেলের কারবারিরা।

যা গাড়ির ইঞ্জিনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে জানান অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার হালিম শিকদার। সূত্রে আরো জানা যায়, পুরাতন জাহাজের ভিতর তেল জ্বলতে জ্বলতে এক ধরনের কালো তেলের বর্জ্য জমে যায়, সেই বর্জ্য পদার্থগুলি কম টাকায় কিনে এসিড মিশিয়ে লুব অয়েল নাম দিচ্ছে সংঘবদ্ধ কালোতেলের কারবারিরা। চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক মুকবুল হোসেন মানবজমিনকে জানান, লাইসেন্স বিহীন, অনুমোদনহীন ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করলে প্রতিনিধি দল সরেজমিনে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। সীতাকুণ্ড উপজেলা সাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম নুরুল করিম রাশেদ বলেন, বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত এসিড, মিথেন গ্যাস বাতাসে ছড়ালে শিশু ও বয়স্ক লোকের শ্বাষকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুস ক্যান্সার সহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান বলেন, খুব শিগগির অভিযান চালিয়ে ওইসব অবৈধ কালো ডিপোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status