দেশ বিদেশ

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

জাপার সমর্থনের আশা আওয়ামী লীগ-বিএনপির

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১৯ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নেই জাতীয় পার্টির। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি কেন প্রার্থী দেয়নি এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যদিও গাজীপুরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট রয়েছে জাপার। এ নির্বাচনে মেয়র পদে জাপার প্রার্থী না থাকায় সরকারি জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশা করছেন তারাই জাপার সমর্থন পাবেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আগেই জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী। জন্মদিন উপলক্ষে সাক্ষাৎ হলেও এ সময় গভীর কোনো আলোচনা কিংবা কোনোভাবে সমঝোতা হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

অন্যদিকে জোটে না থাকলেও এক সময়ের প্রভাবশালী জাপা নেতা বিএনপি প্রার্থীর আশা নির্বাচনে তিনিই পাবেন জাপা ও গাজীপুর জাপা নেতাকর্মীদের সমর্থন ও ভোট। গত নির্বাচনেও কেন্দ্রীয়ভাবে জাপা কাউকে সমর্থন না করলেও স্থানীয় পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতাকর্মী বিশ দলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন করেছিলেন নির্বাচনী মাঠে।

আগামী নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে জাপা সমর্থন দিতে যাচ্ছে এমন আলোচনা রয়েছে নির্বাচনী মাঠে। আওয়ামী লীগ নেতারা দ্রুতই তাদের দলীয় প্রার্থীর প্রতি জাপা ও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের সমর্থন নিতে চাচ্ছেন। যদিও গত কয়েকদিন ধরে সরকারের তীব্র সমালোচনা করে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। এরপরও এবারের রংপুর সিটি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে এরশাদ প্রতিদান দেবেন বলেই মনে করছেন অনেকে। জাতীয় পার্টির গাজীপুরের নেতারা অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও আসেনি। আবার কেন্দ্রীয়ভাবে সমর্থন দিলেও বাস্তবে মাঠপর্যায়ে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও নানা আলোচনা ও সন্দেহ রয়েছে ভোটারদের কাছে। পোশাক কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুর সিটিতে বৃহত্তর রংপুরের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক কাজ করেন, যাদের একটি বড় অংশ এই এলাকায় ভোটার হয়েছেন। জাতীয় পার্টি ছাড়াও বৃহত্তর রংপুরের শ্রমিক ভোটারও কিছু ভূমিকা রাখবে ভোটের ময়দানে। রংপুর অঞ্চলের ওইসব শ্রমিকদের মধ্যে বর্তমানে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে জনপ্রিয় না হলেও এরশাদের সমর্থন যেকোনো প্রার্থীর জন্যই নিয়ামক হতে পারে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির প্রবীণ নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া না হলেও এ নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থী আছেন।

জাতীয় পার্টিতে মাস দুয়েক আগে যোগদান করেছেন সাবেক সচিব এম নিয়াজ উদ্দীন। তিনি এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনা ছিল নগরজুড়ে। তার প্রার্থিতার বিষয়ে তার আকর্ষণীয় পোস্টার ও লাগানো রয়েছে নগরের দেয়ালজুড়ে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। কিন্তু প্রার্থিতার বিষয়ে পার্টির সঙ্গে চূড়ান্তভাবে বোঝাপড়া হয়নি। তিনি জানান, মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়ে জাপার দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি। বিএনপির দলীয় পার্থী নগরের টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সরকার পরিবারে জন্ম নেয়া হাসান সরকার ৮০’র দশকে ছিলেন জাপার অত্যন্ত দাপুটে প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা। আগে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও হাসান সরকার এরশাদ সরকারের আমলে ছিলেন সংসদ সদস্য ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

এরশাদ সরকারের পতনের পর সাবেক এই জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা বিএনপিতে যোগ দেন। অবশ্য বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে একবার নির্বাচন করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্যে হেরেছেন। এরশাদের সঙ্গে শুধু ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, সুসম্পর্ক রয়েছে। এরশাদের আমলেই তিনি গাজীপুরে স্কুল-কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। হাসান উদ্দীন সরকার ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা আশা করছেন হাসান সরকার তার পুরনো রাজনৈতিক দল জাপা সমর্থকদের ভোট বাগিয়ে নিতে পারবেন ধানের শীষের বাক্সে। প্রকাশ্য না হলেও অপ্রকাশ্য সমর্থন পাবেন এরশাদের। গাজীপুরে জাতীয় পার্টির সমর্থন ভোটের লড়াইয়ে একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজে লাগবে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। প্রত্যেকটি দলই তাদের মতো করে ভূমিকা রাখতে পারে। জাতীয় পার্টি মহাজোটে ও সরকারে আছেন। মেয়র পদে তাদের প্রার্থী নেই। তাই আমরা আশাবাদী জাতীয় পার্টি আমাদেরকে সমর্থন দেবে। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, আশা করছি মহাজোটের শরিক সব দলের নেতৃবৃন্দ আমাকে সমর্থন দেবে এবং আমাকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন। গাজীপুর মহানগর জাপার একাধিক নেতা বলেন, দলীয়ভাবে আমরা এই সিটি নির্বাচনে কোনো মেয়র প্রার্থী দেইনি এবং এখনো কাউকে সমর্থন জানানোর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, শোনা যাচ্ছে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শিগগিরই মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে ডেকেছেন।

আলোচনা ফলপ্রসূ হলে হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার প্রার্থীকে সমর্থনের বিষয়টি তখন ঘোষণা হবে। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোনো মেয়র প্রার্থীকেই জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সমর্থন দেননি। যেহেতু এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সমর্থিত কোনো মেয়র পদপ্রার্থী ছিল না, সে কারণে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের পছন্দমতো যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নান ও আজমত উল্লা খান এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দোয়া চেয়েছিলেন। এবার আগে ভাগেই দোয়া ও সমর্থন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status