দেশ বিদেশ

সিপিবি-বাসদের মতবিনিময়

নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড সোজা করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

সুষ্ঠু নির্বাচনবিহীন গণতন্ত্র ইমিটেশন অলংকারের মতো। আসল অলংকার ও ইমিটেশন অলংকারের মধ্যে যেমন তফাত রয়েছে ঠিক তেমনই কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারও দেশের মানুষের জন্য মূল্যহীন। আর এই জন্য এদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার আগে আমাদের নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর যৌথ মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘অবাধ নিরপেক্ষ অর্থবহ নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার শীর্ষক লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মোটের ওপর স্বাধীনভাবে এবং মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করতে পারে তাহলে একটি ভালো নির্বাচন হতে পারে এদেশে। আর এই জন্য প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অতীতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে পুলিশের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। তাই দেশের সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশনের উচিত নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীকে মাঠপর্যায়ে রাখা। রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো গণতন্ত্রমনা হতে হবে। গণতন্ত্রের প্রতি ও সাধারণ মানুষের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের পরে দেশের প্রশাসনের একটা বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। মূলত প্রশাসনের সহায়তায়ই সকল নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে থাকে। এজন্য নাগরিক সমাজের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর যে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে তা সম্পূর্ণ রূপে পালন করতে হবে তাদের। আর সবাই যদি আন্তরিক হয় তাহলেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। মতবিনিময় সভায় সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এলাকাভিত্তিক একক প্রতিনিধিত্বে’র বদলে ‘জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি নিয়ে একটি ধারণাপত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কয়েকবার দেশ বদল হয়েছে, কয়েক ডজনবার সরকার বদল হয়েছে, কিন্তু এদেশে এখনো অবাধ, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ নির্বাচনের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়নি। তিনি বলেন, নির্বাচনের নামে শাসকেরা প্রহসন ও তামাশা সংগঠিত করে চলেছে। নির্বাচন নিয়ে দেশে অনিশ্চয়তা ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি নিরসন করা একটি জরুরি ও জাতীয় কর্তব্য হয়ে উঠেছে। এজন্য জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ভোটে দাঁড়ানো ও ভোট দেয়ার সম-অধিকারের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য নির্বাচনী টাকার খেলা বন্ধ, প্রচারের সম সুযোগ, সন্ত্রাস, পেশীশক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত নির্বাচনে ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতা ও আঞ্চলিকতা অপব্যবহার বন্ধ করে, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, ‘না’ ভোট, প্রতিনিধি প্রত্যাহারের ব্যবস্থা ও কঠোরভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুসরণেরও দাবি জানান তিনি। আর এসব দাবি আদায়ের আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০শে এপ্রিল দেশের উপজেলা পর্যায়ে পদযাত্রা-সমাবেশ ও পরবর্তীতে জেলা শহরগুলোতেও মতবিনিময় সভা ও ঢাকায় কনভেনশন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন তিনি।
সভায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি সমর্থন করে বলেন, গণতন্ত্রের শুরু অবাধ নির্বাচনে। কিন্তু পার্লামেন্ট বহাল রেখে জাতীয় নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, একদলের নেত্রী ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন অপরদিকে অন্যদল ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। আর এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন বলছে, তফসিল ঘোষণা ছাড়া আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে সরকারের মসজিদ কমপ্লেক্স, মন্দির নির্মাণসহ নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্যই এগুলো করা হচ্ছে। নির্বাচনে খরচ করা অর্থের উৎসও খতিয়ে দেখা উচিত বলে জানান তিনি।  
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতের মতো আবারো বিতর্কিত নির্বাচন হলে ভয়াবহ সংকট রোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, এর মাসুল শুধু ক্ষমতাসীনদের নয় দেশবাসীকেই দিতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্য ছাড়া শুধুমাত্র শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সভাপতির বক্তব্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ এখনও হয়নি। সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলে এটা বুঝা যায়। তিনি বলেন, ব্যাংকসহ গোটা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপনা এখন লুটেরা গোষ্ঠীর দখলে। দেশের আইন-আদালতসহ সকল প্রতিষ্ঠান অশিক্ষিত দুর্নীতিবাজদের দখলে। শাসক গোষ্ঠী এদেশের সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। এই জন্য সংবিধানের সঠিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম আকরাম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status