দেশ বিদেশ

অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে বিড়ি শিল্পের প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

বিড়ি শিল্পের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দেয়া সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অর্থমন্ত্রী হয়তো অবগত আছেন বিড়ি শিল্পের সঙ্গে ১২ লক্ষাধিক শ্রমিক জড়িত। এদের বেশির ভাগই স্বামী পরিত্যক্তা নারী, নদী ভাঙ্গা এলাকার হতদরিদ্র মানুষ। তাদের আর কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই বলে যুগ যুগ ধরে তারা এই পেশায় জড়িয়ে আছেন। এই শিল্পের সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকা ও আত্মার সম্পর্ক। বিশেষ করে রংপুর অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ তামাক উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিড়ি তৈরির সঙ্গে জড়িত। অর্থমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে এসব নদী ভাঙ্গা এলাকার স্বামী পরিত্যক্তা নারী শ্রমিকরা তাদের দু’বেলা দু’মুুঠো ভাতের সংস্থান কিভাবে করবেন তা নিয়ে এখনই সংশয় দেখা দিয়েছে। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে রংপুর, যশোর, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। এই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে গেলে আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি ঘটবে। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক ক্ষতি হবে। চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এই কর্মসংস্থান হারানো শ্রমিকদের। তামাক মন্দ, স্বাস্থ্যহানি হয় এ কথা যেমন সত্য তেমনি এসব শ্রমিককের কাজ করে খাওয়ার অধিকারটুকুও তো সত্য। বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি না করে বিড়ি শিল্প তুলে দেয়া কি সমীচীন হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিড়ি সিগারেট ক্ষতিকর হলেও সিগারেটে ক্ষতির পরিমাণ একটু বেশি। কারণ এর আকার বড়, নানা ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হয়। অথচ আমাদের অর্থমন্ত্রী সেটা বুঝতেই পারছেন না। তিনি বিড়ির ওপর নাখোশ হয়ে গত বছরই বলে দিয়েছেন তিনি দু’বছরের মধ্যে বিড়ি উঠিয়ে দেবেন। তিনি কিন্তু একবারও বললেন না- পাশাপাশি সিগারেটকে তিনি তুলে দেবেন। ধূমপান বন্ধ করবেন। চলতি বাজেট (২০১৭-২০১৮) অধিবেশনের আগে যখন তিনি প্রাক্‌বাজেট আলোচনায় বললেন, বিড়ি তুলে দেবেন তখন সারা দেশে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল অর্থমন্ত্রী হয়তো ভুলে যাননি।
শ্রমিকরা মানববন্ধন করেছেন, থালা হাতে মিছিল করেছেন, মহাসমাবেশ করেছেন। অনশন করেছেন। তার এই ঘোষণার প্রতিবাদে লাখ মানুষ যখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন তখন তারা আর বসে থাকেননি। রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।
বিড়ি একটি দেশীয় ও শ্রমঘন শিল্প। এতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বিড়ির বিনিয়োগ, আয় সব দেশে থাকে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যবহার হয়। অন্যদিকে সিগারেটে খুব বেশি লোকের প্রয়োজন হয় না। তারা যা আয় করে তা বিদেশে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, এই কোম্পানির বিরুদ্ধের কর ফাঁকির অভিযোগ তো এখন প্রমাণিত। তবুও অর্থমন্ত্রী সিগারেটের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন। তাদের কথামতো কর নির্ধারণ করেন। প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে তিনি সাধারণ এসব শ্রমিকদের কথা ভাবেন না। তাদের পেটে লাথি মেরে ধনীকে আরো ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তিনি তো সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য শপথ নিয়েছেন মন্ত্রী হিসেবে। গরিব দুঃখীদের বাদ দিয়ে কি সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব?
তামাকাজাত পণ্য নিষিদ্ধ করণে তিনি একপক্ষ নীতি গ্রহন করবেনা বলেই দেশের মানুষ মনে করে। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি নিবেদন করি লাখ লাখ শ্রমিকদের কথা ভেবে তিনি বিড়ি ও সিগারেটই একই সময়ের মধ্যে বন্ধ করার পদক্ষেপ নেবেন।
আমাদের পাশের দেশ ভারতে এক হাজার বিড়িতে সরকার শুল্ক নেন ১৪ টাকা আর আমাদের দেশে দিতে হয় ২৫২ টাকা। ভারতে বিড়িকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষনা করে এই শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং ২০ লাখ টাকা আয় রয়েছে এমন ফ্যাক্টরীকে করের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশে এই শিল্পকে গলা টিপে হত্যা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status