শেষের পাতা

পুলিৎজার বিজয়ী আলোকচিত্রীদের দলে প্রথম বাংলাদেশি

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৭ পূর্বাহ্ন

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী আলোকচিত্রীর দলে স্থান করে নিয়েছেন পনির হোসেন। ভয়াবহ রোহিঙ্গা সংকট আলোকচিত্রের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গুণী পনির হোসেন এই আলোকচিত্রী দলের গর্বিত সদস্য। পুরস্কার জিতে নেয়া ‘ফটোস্টোরিতে’ তার ছবি রয়েছে তিনটি। নিজের ছবি সংবলিত ‘ফটোস্টোরি’ সাংবাদিকতা জগতের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে এমন খবরে উচ্ছসিত পনির হোসেন। তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি। এতে বলেন, ‘অভিনন্দন রয়টার্স টিম। এর অংশ হতে পেরে আমি খুবই গর্বিত।’ পরে সংবাদ মাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পনির নিজের সফলতার গল্প শোনান। বলেন, ‘রয়টার্সের সেই ফটোস্টোরিতে আমার তোলা তিনটি ছবি ছিল। সেই কাজই সাংবাদিকতার সবচেয়ে সেরা পুরস্কারটি জিতে নিয়েছে। ভাবতেই শিহরণ বোধ করছি। সোমবার রাতে এই খবর শোনার পর মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারিনি।’
পনিরের তিনটি ছবির একটিতে ছিল ভেলায় চড়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের দৃশ্য। আরেকটিতে একজন মা তার সদ্যমৃত শিশু সন্তানকে চুমু দিচ্ছিলেন। অন্যটিতে ছিল ভারী বর্ষণের সময় শিশু ও বয়স্ক রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের চিত্র।
পনির হোসেন বিবিসিকে বলেন, ছবিগুলো যখন তুলি তখন আমি আবেগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলাম। কিন্তু হোটেলে ফিরে এডিট করতে গিয়ে ল্যাপটপে যখন ছবিগুলোকে দেখলাম তখন আর আমার পক্ষে আবেগ ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তিনি বলেন, “মানুষের কষ্ট কতরকম এটা রোহিঙ্গা ইস্যু যদি কাভার না করতাম তাহলে সম্ভবত আমি বিষয়টা বুঝতাম না।”
পুলিৎজারকে বলা হয় সাংবাদিকদের অস্কার পুরস্কার। রয়টার্সের মোট সাতজন আলোকিত্রি রোহিঙ্গাদের নানা মুহুর্তের ছবির জন্য দলগতভাবে এই পুরস্কার পান। পনির হোসেন এই দলের অন্যতম সদস্য। এই প্রথম কোনও বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের জন্য বিশ্বের সবচাইতে সম্মানজনক পুলিৎজার পুরস্কার পেলেন।
২০১০ সাল থেকে পনির হোসেন ছবি তুলতেন শখের বসে। সেই শখই একদিন তার পেশা হয়ে দাঁড়ালো। শুরুতে তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেব কাজ করতেন। ২০১৫ সালে তিনি রয়টার্সে যোগদান করেন। তার ভাষায়- ‘মানুষ যখন কোন দুর্দশায় পরে বা কোন সংকট তৈরি হয় তখনই আমাদের মতো ফটোসাংবাদিকদের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ তৈরি হয়। যেমন রোগী না থাকলে ডাক্তারের দক্ষতা দেখানোর সুযোগ নেই, আমাদের জন্যেও বিষয়টা একই রকম। রোহিঙ্গারা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দেশে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাঁচার জন্য তারা রোদে পুড়ে, পানিতে ভিজে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছে এসেছেন। তারা জানেন না সামনে কি আছে, তারা কোথায় যাচ্ছেন, কি খাবেন বা কোথায় থাকবেন। কতটা কষ্টে পড়লে মানুষ এমন অনিশ্চিত যাত্রার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন সেই বিষয়টি তাকে খুব নাড়া দিয়েছে। এই ছবিগুলো তুলতে গিয়ে আমি নিজে যতই কাদার মধ্যে হাটি, রোদে পুড়ি বা পানিতে সাতার কাটি, দিন শেষে যখন একটা ভালো ছবি হয় তখন আর সেই ক্লান্তির কথা মনে থাকে না।
রয়টার্সের হাতে পুলিৎজার পুরস্কার তুলে দেয়ার মূহুর্তে সশরীরে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তিনি বলেন, সাংবাদিকতায় পুলিৎজারের মতো সম্মানের কিছু নেই। পুরস্কারপ্রাপ্ত টিমের সঙ্গে নাম থাকাটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।
উল্লেখ্য, সাংবাদিকতা জগতে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। ১৯১৭ সালে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। বর্তমানে মোট ১৪টি ক্যাটাগরিতে সাংবাদিকদের পুরস্কৃত করে পুলিৎজার কমিটি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status