দেশ বিদেশ
যথাযথ শিক্ষা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়: প্রধানমন্ত্রী
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন
সরকার বিশ্ব শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়নের ওপর ভিত্তি করে দরিদ্র, বৈষম্যহীন ও সংঘাতমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টরে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সম্মেলনকক্ষে ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার: মেকিং ইকুইটেবল অ্যান্ড কোয়ালিটি প্রাইমারি এডুকেশন অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন এ রিয়েলিটি ফর গার্লস অ্যাক্রস দ্য কমনওয়েলথ’ শীর্ষক অধিবেশনে মূল প্রবন্ধে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি যেখানে নারী ও পুরুষ হাতে হাত মিলিয়ে মানব উন্নয়নে কাজ করছে। একসময় বৃটিশ শাসনে থাকা দেশগুলোর জোট নিয়ে গড়া কমনওয়েলথে ৫৩টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে কমনওয়েলথের সরকার প্রধানদের ২৫তম সভা। ‘টুয়ার্ডস এ কমন ফিউচার’ প্রতিপাদ্যের সভার শুরুতেই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসদের মতো ব্যক্তিত্বরা বক্তব্য দেন। ‘এডুকেট টু এম্পাওয়ার’ অধিবেশনে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া জিলার্ড উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীও কথা বলেন। ২০ মিনিটের বক্তব্যে নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ও তার সরকারের সময় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘যথাযথ শিক্ষা’ ছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়। লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ নেতৃস্থানীয় জায়গায় থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের হিসেবে, ১৪৪টি দেশের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। তিনি বলেন, সম্ভবত বাংলাদেশের সংসদই বিশ্বের একমাত্র সংসদ যেখানে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা চার জনই নারী। বাংলাদেশে সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর কাজ করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিমান চালনা, সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাষ্ট্রদূতের মতো উচ্চ পদগুলোতে বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। বাংলাদেশের নারীদের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ করা, এভারেস্ট জয় ও দেশে-বিদেশে খেলাধুলাতে সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠনে নারীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। নারী শিক্ষার প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া নানা কর্মসূচির কথাও তুলে ধরেন। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করা, ২৮ লাখের বেশি শিশুর জন্য স্কুল খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা, ২৩ লাখ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি ও মেধাবৃত্তি দেয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও গ্রামের নারীদের জীবন-মান উন্নয়নে নারী শিক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। পারিবারিক নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা কমে গেছে। নারী শিক্ষার প্রসার ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন বাল্যবিবাহ কমাতেও ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের শতভাগ শিশু স্কুলে যায়, যাদের মধ্যে মেয়ে বেশি। বর্তমানে স্কুলে মেয়ে ছেলে অনুপাত ৫৩:৪৭, যা ২০০৯ সালে ছিল ৩৫:৬৫। গত নয় বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশ হয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষক পদের ৬০ ভাগ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় তথ্য-প্রযুক্তিসহ নারীর ক্ষমতায়নে বিভিন্ন প্রকল্প চালুর কথাও তুলে ধরেন তিনি। নারী উন্নয়নে ২০১০ সালের নারী নীতি প্রণয়নের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, সংসদ ও স্থানীয় সরকারে তাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে। এছাড়া নারীর উদ্যোক্তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণসহ নানা সুবিধা দেয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই কোটি নারী কৃষি কাজে এবং পোশাক শিল্পে ৪৫ লাখ চাকরিজীবীর ৮৫ শতাংশই নারী। দেশে গুণগত শিক্ষার মান বাড়ানোর ওপর সরকার গুরুত্বারোপ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইনক্লুসিভ’ উন্নয়ন ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সবার জন্য শিক্ষা তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অংশ নেন। কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার রাতে লন্ডনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে আসার আগে সোমবার দাম্মামে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন মুসলিম দেশগুলোর জোটের যৌথ সামরিক মহড়া ‘গালফ শিল্ড-ওয়ান’-এর কুচকাওয়াজ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। বিকালে যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা ওডিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি: নীতি, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন প্রধান বক্তা। এছাড়া ১৮ই এপ্রিল এশীয় নেতাদের অংশগ্রহণে ‘ক্যান এশিয়া কিপ গ্রোয়িং?’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনাতেও তিনি যোগ দেবেন। সেদিন বিকালে তিনি বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। ১৯শে এপ্রিল কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের বৈঠকের উদ্বোধনী ও অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এছাড়া কমনওয়েলথ মহাসচিবের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেয়া নৈশভোজেও প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ২০শে এপ্রিল সম্মেলনের সমাপনী কার্যনির্বাহী অধিবেশনে অংশ নেয়ার পরদিন তিনি রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি (আরসিএস) আয়োজিত সংবর্ধনা এবং রানীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নেবেন। শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। আট দিনের বিদেশ সফর শেষে আগামী ২৩শে এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।