দেশ বিদেশ

লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে

১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

কুমিল্লার নবগঠিত লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক ওই পদ থেকে পদত্যাগ না করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে গত সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ অবস্থায় গতকাল তার মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবি জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আবেদন করেছেন লালমাই উপজেলার পরতী গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে মো. বেলাল হোসাইন। এর আগে গত ৯ই এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আরও একটি অভিযোগ করেন সদর দক্ষিণ উপজেলার শীষপুর গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে কামাল হোসাইন। ওই অভিযোগে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লালমাই উপজেলার বাসিন্দা হওয়ায় তাদের পদ শূন্য ঘোষণার দাবি জানান। আগামী ১৫ই মে লালমাই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবেদনে মো. বেলাল হোসাইন উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২০শে আগস্ট লালমাই উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনের দিন ধার্য ছিল। একক প্রার্থী থাকায় ৩রা আগস্ট আবদুল মালেককে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির প্রার্থী মো. মানিক মিয়া ১৩ই আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট করেন। তখন উচ্চ আদালত মানিক মিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত করার জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসককে আদেশ দেন। ২৮শে আগস্ট জেলা প্রশাসক মানিক মিয়ার আবেদন গ্রহণ করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ২৯শে আগস্ট মো. আবদুল মালেক সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে একটি আবেদন করেন। চেম্বার জজ আট সপ্তাহের জন্য ওই আদেশ স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়। পরবর্তীতে ফুল বেঞ্চ শুনানি শেষে পিটিশনটি খারিজ করে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বেঞ্চে মূল রিট পিটিশনটি নিষ্পত্তির জন্য পাঠায়। চলতি বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সিনিয়র বেঞ্চ মামলাটি খারিজ করে নিষ্পত্তি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি মানিক মিয়া সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ কোর্টে পিটিশন দায়ের করেন। চেম্বার জজ গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সিনিয়র বেঞ্চের (১৩ ফেব্রুয়ারির) আদেশটি চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে স্থানান্তর করে- যা এখনও চূড়ান্ত শুনানির জন্য রয়েছে। এছাড়া মো. আবদুল মালেক বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত আদেশের আগ পর্যন্ত তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তাছাড়া সুপ্রিম কোর্টের একাধিক শুনানিতে নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি অংশ নেন। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি না নিয়ে এবং তাঁর পিটিশন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্পূর্ণ আইন ও বিধি বহির্ভূত। তাই ওই মনোনয়নপত্র বাতিল করা হোক। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আবদুল মালেক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার গেজেট প্রকাশ হয়নি। শপথও নেইনি, দায়িত্বভার গ্রহণ করিনি। তাই পদত্যাগ করার কোন বিষয় নেই।
অপরদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধিমালা ৫ উপধারা (৪) ক. তে বলা আছে, পূর্বতন পরিষদের সদস্যগণের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নবগঠিত পরিষদ বা পরিষদসমূহে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ না ভেঙে মেয়াদ থাকা অবস্থায় লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়া হয়েছে- যা আইনের ও বিধির পরিপন্থি বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে আবেদনকারী মো. বেলাল হোসাইন জানান, ‘সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আকতার লালমাই উপজেলার বাসিন্দা।
তাই তাদের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত লালমাই উপজেলার নির্বাচন স্থগিত রাখতে হবে, আর না হয় তাদের ওই ২টি পদ শূন্য ঘোষণা করতে হবে। এছাড়া বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েও পদত্যাগ না করে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টিও আইনসম্মত নয়। তাই এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।’ উল্লেখ্য সদর দক্ষিণ উপজেলার ৮টি ও লাকসাম উপজেলার ১টি ইউনিয়ন নিয়ে লালমাই উপজেলা গঠন করা হয়। লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে নির্বাচন স্থগিত কিংবা এ বিষয়ে আমার কিছুই করণীয় নেই, বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status