এক্সক্লুসিভ
নাগর নদ দখল করে মাছ চাষ
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৮:২০ পূর্বাহ্ন
‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত এই কবিতার উৎস নাটোরের সিংড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নাগর নদের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে অবৈধ দখলদার ভূমি দস্যুদের কালো থাবায়। নিয়মিত ড্রেজিং না করা, নদীজুড়ে পুকুর খনন ও বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এই নদী আজ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। তাছাড়া নদীতে বাঁধের কারণে গত কয়েক দিনের বর্ষণ ও ঢলের পানি চলনবিলে ঢুকে পড়ায় হুমকির মুখে রয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আধা-পাকা ইরি ধানসহ বিভিন্ন রবি শস্য। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ ভূমি দস্যুদের অবৈধ দখলের কারণে সেই নাগর নদ ও তার সংযোগ নদী গুড়-আত্রাই নদীর ঐতিহ্য ও গতি প্রবাহ হারিয়ে যেতে বসেছে। ভূমি দস্যুরা সিংড়া উপজেলার জয়নগর তাজপুর গ্রাম থেকে সারদানগর ফার্ম পর্যন্ত নাগর নদ দখল করে শতাধিক পুকুর ও নদের বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। সমপ্রতি খরসতি গ্রামের জনৈক প্রভাবশালী আলহাজ ইদ্রিস আলী ও শামসুল ইসলাম ওরফে কালু সাদনগর এলাকায় নাগর নদজুড়ে চারটি বিশাল বাঁধ নির্মাণ করেছেন। এতে নদে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়াও সমপ্রতি কয়েক দিনের বর্ষণ ও ঢলের পানি নামতে না দেয়ায় ধর্মপুর, বাশারনগর, ভুলবাড়িয়া এলাকার বিভিন্ন ভাঙন দিয়ে ঢুকে চলনবিলে কয়েক হাজার হেক্টর জমির আধা-পাকা ইরি ধানসহ বিভিন্ন রবিশস্য হুমকির মুখে পড়েছে। নাগর নদের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদজুড়ে পুকুর খনন ও অবৈধ বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর পানি ধর্মপুর ও বাশারনগর এলাকার ভাঙন দিয়ে বিলে পানি ঢুকছে। আর প্রায় শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করছে। বাঁধে কর্মরত কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও ফজলুর রহমান বলেন, কিছু অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের কারণে প্রতি বছরই এই ভাঙন দিয়ে বিলে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চলনবিলের প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। তাছাড়া নদীতে লাখ লনব ঘনমিটার পলি পড়ে ও অবৈধভাবে পুকুর খননের কারণে এই নদী নাব্য হারিয়ে ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলহাজ ইদ্রিস আলী বলেন, জয়নগর থেকে সারদানগর ফার্ম পর্যন্ত নাগর নদে প্রায় শতাধিক পুকুর রয়েছে। তার শুধু একটিই পুকুর। আর পানি প্রবাহের জন্য বাঁধের কিছু অংশ খুলে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তিনি ভেক্যু দিয়ে আরো মাটি সরিয়ে দেবেন বলে জানান। সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সন্দ্বীপ কুমার সরকার জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানও তাদের নিষেধ করেছেন। পরে নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।