বই থেকে নেয়া
বই থেকে নেয়া
ত্রিশ লাখ শহীদের দেশ বায়াফ্রা (পর্ব-২)
নিজস্ব প্রতিনিধি
১৩ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৭:০৩ পূর্বাহ্ন
থিংস ফল অ্যাপার্টের-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ওকোনকোর জীবনে সবকিছু স্ত্রী লিঙ্গাত্মক। উদাহরণ হিসেবে তিনি তার পালক পুত্রকে হত্যা করার পরে যখন তার মধ্যে অনুশোচনা এলো তখন তিনি নিজের কাছে প্রশ্ন রাখলেন, ‘তুমি কখন নিজেকে একজন ভয়ার্ত প্রবীণ রমণীতে পরিণত করলে? এটাও যুক্তি হিসেবে এসেছিল যে, কারও ব্যক্তিগত দেবতার ভেতরে একজন জননী লুকিয়ে আছে। তার এই বোঝাপড়াটা পুনরায় স্পষ্ট করে তোলে ওকোনকোর এই ভাবনা থেকে যে, তার বাবার প্রতিচ্ছবি যথেষ্ট, যা কিছু নারীসুলভ তা তার কাছে বিরক্তিকর মনে হলো । এমনকি তার মাকেও সুনজরে দেখতে পারলেন না, কারণ তার মা একজন নারী। তার বাবা ছিলেন অলস এবং কাপুরুষ। তার বাবাকে মনে করা হতো ‘আকবালা’ এর অর্থ হচ্ছে সম্মান ও মর্যাদাহীন একজন মানুষ। এভাবে ওকোনকো তার বাবার কম সাফল্যের জন্য মন খারাপ করে থাকতেন। আজ তার বাবার এই ঘাটতির জন্য তার মনে হতো পুরুষত্বের ঘাটতি ছিল বলেই তার বাবার এই দশা হয়েছিল। তাই সমগ্র উপন্যাস জুড়ে কম ক্ষমতা কিংবা কম সাফল্য, সবকিছুকেই দেখা হয়েছে নারী সংক্রান্ত বিষয় হিসেবে। পৌরুষ তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তিনি সবসময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকতেন এই বুঝি তাকে মেয়েলীভাব বা অমন চিন্তা চেতনা তাকে গ্রাস করে ফেলে। উপন্যাসে নানাভাবে ওকোনকো তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ওকোনকোর একাধিক স্ত্রী ছিল। তিনি তার পুরুষত্ব জাহির করার জন্য স্ত্রীদের নানাভাবে নির্যাতন করতেন। গালমন্দ করতেন, এমনকি তিনি তার নিজ সম্প্রদায় ও গ্রোত্রের বিরুদ্ধে নির্বিচারে সহিংস কর্মকা- চালিয়েছেন। তার মনজগতে যে বিশেষ উদ্বেগ তাড়া করে ফিরত, তা ছিল এমন যে, এতো অগাধ সম্পদ ও প্রতিপত্তি তা তার মৃত্যুর পর কে রক্ষা করবে। তার সার্বক্ষণিক শঙ্কা ছিল তার ছেলে যথেষ্ট পুরুষালি নয় এবং তার কন্যা এজিনমা আসলে মেয়ে হিসেবে নয়, সে জন্মেছিল ছেলে শিশু হিসেবে। গোটা উপন্যাসে তার নারীকে চিত্রিত করা হয়েছে একজন অনুগত শান্ত ঘরানায়। কোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদী অবস্থানে নারীর কোনো জায়গা নেই। যদিও বাস্তবতা হলো ঐতিহ্যগতভাবে ইগবো নারীরা নিজ নিজ গ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
অবশ্য লেখক নারী চরিত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিতে একেবারে কোনো চেষ্টাই করেননি তা বলা যাবে না। সেই চেষ্টার ফসল হলো ধরিত্রির দেবী ‘এনি’ এবং চতুর্দশ চ্যাপ্টারে বর্ণিত ‘নেকা’ (নেকা মানে হলো জননী সর্বশ্রেষ্ঠ)। উপন্যাসে লেখক আরো দেখিয়েছেন, ওকোনকোর কন্যা এজিনমার প্রতি ইকেফির গভীর প্রেম; যদিও এজিনমা বহুবার সন্তান জন্মের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন, তারপরও ইগবো সমাজের নারী সত্ত্বার প্রতি লেখক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ইগবো সমাজে নারী সত্ত্বার ভেতর দিয়ে মাতৃসত্ত্বাকে জাগ্রত করা হয়েছে। পরাক্রমশালী ওকোনকোকে যে শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের গ্লানি মেনে নিতে হয়েছে। সেখানেও নারী সত্ত্বার বিজয়কে প্রতিকায়িত করা হয়েছে অনেকে মনে করেন। অবশ্য অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকে তার সর্ব ব্যর্থতার মূলে রয়েছে তার অন্তর্গত নারী ভীতি ও নারীর প্রতি অবমাননা। তিনি তার উপন্যাসের ব্যক্তিগত জীবনে নারীর সঙ্গে গুণগত মান সম্পন্ন ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরিতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। তার স্ত্রী, তার সন্তান ও তার নিজের মা, কারও সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। ঔপন্যাসিক আচিবি হতাশা ব্যক্ত করেছেন এই মর্মে যে, আমি আসলে থিংকস ফল আপার্টকে নারী সত্ত্বার সপক্ষে চিত্রিত করতে চেয়েছিলাম এবং ওকোনকো নারীর প্রতি যে অবমাননা করেছিলেন তার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে তিনি তার জীবনে যত ধরনের সমস্যা তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে যত ভুল ভ্রান্তি ঘটেছে তার সবটাই নারীর বিরুদ্ধে তার অপরাধের ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। লেখক যে সমাজের ছবি তুলেছিলেন তাকে বলা হয় ইকব। আর ইকব সমাজের মধ্যেই একটি সম্প্রদায়ের নাম উমোফিয়া। উমোফিয়ার ভেতরকার একটি প্রতিচ্ছবি সেই সমাজের একজন ওকোনকো নারীর বিরুদ্ধে সহিংস এবং যতাটা ব্যাপকতায় নারী বিদ্বেষী ভূমিকা তিনি রেখেছেন সেটা ওই সমাজের সাধারণ কল্প নয়। এটা একটা বিরাট ব্যাতিক্রম যদিও ঔপনিবেশিক শাসন পরবর্তী যে প্রতিচ্ছবি আজও আঁকা হয় সেই সমাজ আজ যথেষ্ট পুরুষকেন্দ্রিক। আর সেই অবস্থাতেই একটি নতুন আফ্রিকায় নারীর যে উন্নতির রূপকল্প একজন পুরুষ লেখকের লেখা মূর্ত হয়ে ওঠে সেটা সেইসব লেখনির মধ্য দিয়ে মুছে যাওয়ার কোনো বিষয় নয়। এমনকি এই যুক্তি দেয়া হয়ে থাকে যে, আফ্রিকার সাহিত্যে ক্রমাগতভাবে নারী ও তার জীবনধারাকে পুরুষ লেখকরা উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রকাশ করে থাকেন। সেখানে দেখানো হয় নারী অনাগত ভবিষ্যতের চেঞ্জ মেকার। আচিবির চিন্তার জগতে একটা পবিবর্তন পরবর্তীতে লক্ষ্য করা গেছে। অনেক লেখকের মতে আচিবি তার এ্যানথিলস অব সাবান্না উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্র তৈরি করেছেন একজন নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রের না বিয়ারট্রিস ননিবুফে। তিনি নগরীর একজন সাধারণ নারী। তিনি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি নগরীর একজন সাধারণ নারী। তিনি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করছেন। একজন নারীর জীবনে একজন পুরুষের প্রয়োজন রয়েছে। সুতারাং বোঝা যাচ্ছে ওকোনকো সেভাবে নারীকে অবহেলা করেছেন যেভাবে বিয়াট্রিস পুরুষকে অবহেলা করেছেন। ইদিমিলি এক দেবীর আরাধনায় মগ্ন হয়েছেন। ওই দেবীর কজ হলো পুরুষালি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও এই উপন্যাসের শেষ প্রান্তে এটাই দেখানো হয়েছে বিয়াট্রিস স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন যেখানে একজন চিরন্তন মায়ের চিত্র ফুটে ওঠে। যদিও বিয়াট্রিস এই ধারণায় অটল থেকেছেন যে, নারীদেরকে কেবলই মায়ের ভূমিকা পালনের মধ্যে সীমিত রাখলে চলবে না।
(চলবে)
অবশ্য লেখক নারী চরিত্রে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টিতে একেবারে কোনো চেষ্টাই করেননি তা বলা যাবে না। সেই চেষ্টার ফসল হলো ধরিত্রির দেবী ‘এনি’ এবং চতুর্দশ চ্যাপ্টারে বর্ণিত ‘নেকা’ (নেকা মানে হলো জননী সর্বশ্রেষ্ঠ)। উপন্যাসে লেখক আরো দেখিয়েছেন, ওকোনকোর কন্যা এজিনমার প্রতি ইকেফির গভীর প্রেম; যদিও এজিনমা বহুবার সন্তান জন্মের ব্যর্থ চেষ্টা করছেন, তারপরও ইগবো সমাজের নারী সত্ত্বার প্রতি লেখক শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। ইগবো সমাজে নারী সত্ত্বার ভেতর দিয়ে মাতৃসত্ত্বাকে জাগ্রত করা হয়েছে। পরাক্রমশালী ওকোনকোকে যে শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের গ্লানি মেনে নিতে হয়েছে। সেখানেও নারী সত্ত্বার বিজয়কে প্রতিকায়িত করা হয়েছে অনেকে মনে করেন। অবশ্য অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকে তার সর্ব ব্যর্থতার মূলে রয়েছে তার অন্তর্গত নারী ভীতি ও নারীর প্রতি অবমাননা। তিনি তার উপন্যাসের ব্যক্তিগত জীবনে নারীর সঙ্গে গুণগত মান সম্পন্ন ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরিতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। তার স্ত্রী, তার সন্তান ও তার নিজের মা, কারও সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। ঔপন্যাসিক আচিবি হতাশা ব্যক্ত করেছেন এই মর্মে যে, আমি আসলে থিংকস ফল আপার্টকে নারী সত্ত্বার সপক্ষে চিত্রিত করতে চেয়েছিলাম এবং ওকোনকো নারীর প্রতি যে অবমাননা করেছিলেন তার খেসারত তাকে দিতে হয়েছে তিনি তার জীবনে যত ধরনের সমস্যা তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে যত ভুল ভ্রান্তি ঘটেছে তার সবটাই নারীর বিরুদ্ধে তার অপরাধের ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। লেখক যে সমাজের ছবি তুলেছিলেন তাকে বলা হয় ইকব। আর ইকব সমাজের মধ্যেই একটি সম্প্রদায়ের নাম উমোফিয়া। উমোফিয়ার ভেতরকার একটি প্রতিচ্ছবি সেই সমাজের একজন ওকোনকো নারীর বিরুদ্ধে সহিংস এবং যতাটা ব্যাপকতায় নারী বিদ্বেষী ভূমিকা তিনি রেখেছেন সেটা ওই সমাজের সাধারণ কল্প নয়। এটা একটা বিরাট ব্যাতিক্রম যদিও ঔপনিবেশিক শাসন পরবর্তী যে প্রতিচ্ছবি আজও আঁকা হয় সেই সমাজ আজ যথেষ্ট পুরুষকেন্দ্রিক। আর সেই অবস্থাতেই একটি নতুন আফ্রিকায় নারীর যে উন্নতির রূপকল্প একজন পুরুষ লেখকের লেখা মূর্ত হয়ে ওঠে সেটা সেইসব লেখনির মধ্য দিয়ে মুছে যাওয়ার কোনো বিষয় নয়। এমনকি এই যুক্তি দেয়া হয়ে থাকে যে, আফ্রিকার সাহিত্যে ক্রমাগতভাবে নারী ও তার জীবনধারাকে পুরুষ লেখকরা উদার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রকাশ করে থাকেন। সেখানে দেখানো হয় নারী অনাগত ভবিষ্যতের চেঞ্জ মেকার। আচিবির চিন্তার জগতে একটা পবিবর্তন পরবর্তীতে লক্ষ্য করা গেছে। অনেক লেখকের মতে আচিবি তার এ্যানথিলস অব সাবান্না উপন্যাসে কেন্দ্রীয় চরিত্র তৈরি করেছেন একজন নারীকে ঘিরে। এই চরিত্রের না বিয়ারট্রিস ননিবুফে। তিনি নগরীর একজন সাধারণ নারী। তিনি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি নগরীর একজন সাধারণ নারী। তিনি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করছেন। একজন নারীর জীবনে একজন পুরুষের প্রয়োজন রয়েছে। সুতারাং বোঝা যাচ্ছে ওকোনকো সেভাবে নারীকে অবহেলা করেছেন যেভাবে বিয়াট্রিস পুরুষকে অবহেলা করেছেন। ইদিমিলি এক দেবীর আরাধনায় মগ্ন হয়েছেন। ওই দেবীর কজ হলো পুরুষালি ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও এই উপন্যাসের শেষ প্রান্তে এটাই দেখানো হয়েছে বিয়াট্রিস স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন যেখানে একজন চিরন্তন মায়ের চিত্র ফুটে ওঠে। যদিও বিয়াট্রিস এই ধারণায় অটল থেকেছেন যে, নারীদেরকে কেবলই মায়ের ভূমিকা পালনের মধ্যে সীমিত রাখলে চলবে না।
(চলবে)