প্রথম পাতা

কোটা সংস্কার

বুদ্ধিজীবীরা কী বলেন

নূর মোহাম্মদ

৬ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

সরকারি চাকরিতে শতকরা অর্ধেকেরও বেশি কোটা থাকায় দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে। সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে চলছে আন্দোলন। এ নিয়ে নানা বিতর্ক, নানা আলোচনা। মানবজমিন-এর পক্ষ থেকে এ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের কাছে মতামত চাওয়া হলে তারা কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার জন্য কোটা প্রচলন করা হয়। আজকের প্রেক্ষাপটে এ কোটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনা করা জরুরি। আমরা দেখছি, শুধু চাকরি নয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থেকে সব জায়গায় কোটা পূরণ হচ্ছে না। এতে মেধাবীদের প্রবেশ যেমন সঙ্কুচিত  
হচ্ছে, তেমনি প্রশাসন দিন দিন মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার। না হয় দিনদিন গোটা প্রশাসন দুর্বল হয়ে যাবে। তার মতে, দেশের পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠী, আদিবাসী, পাহাড়ি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য কোটা রাখা দরকার, তবে সেটাও সংস্কার হওয়া উচিত। আর এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ রাখা উচিত না। এখন মেধার ভিত্তিতে নেয়া উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি বয়স দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া তারা রাষ্ট্রের আরো অনেক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে ৩০ ভাগ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখন যদি তাদের নাতি-নাতনীদের জন্য একইভাবে কোটা চালু রাখা হয় তবে এক সময় এসে প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে যাবে। আমি মনে করি, কোটা পদ্ধতির সংস্কার জরুরি। কোনো শতাংশ না কোটা পদ্ধতি উঠিয়ে দেয়া উচিত।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও টিআইবির ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, কোটা বাদ দেয়ার পক্ষে আমি না। তবে সেটা সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার করতে হবে। বছরের পর বছর এভাবে কোটা থাকতে পারে না। সব কোটা মিলে কত শতাংশ হবে তা রাষ্ট্রকে এখনই নির্ধারণ করতে হবে। না হয়, ৪৪ শতাংশ মেধাবী আর ৫৬ শতাংশ কোটাধারীদের দিয়ে মেধাবী প্রশাসন করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, কোটা নিয়ে যে আন্দোলন চলছে তা সরকার মেনে নিয়ে এ কোটার সংস্কার জরুরি। তিনি বলেন, কোটার সংস্কারকে অস্বীকার করা মানে প্রয়োজনকে অস্বীকার করা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, কোটা ব্যবস্থা একদম থাকবে না, এমনটা নয়। সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। এগুলো যেমন- শারীরিক প্রতিবন্ধী, উপজাতি, নারী এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রাখতে হবে। কোটার জন্য যোগ্য ও মেধাবীরা কোনোভাবেই যেন বঞ্চিত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক বঞ্চিত হলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা থাকেন তাদের জনস্বার্থের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। কোটা সংস্কার জরুরি। সব কোটা এখন সর্বোচ্চ ২০ ভাগ করা যায়। বাকি ৮০ ভাগ মেধার ভিত্তিতে নেয়া উচিত। তিনি বলেন, আমরা তো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না মতামত দিতে পারি। তবে জনস্বার্থ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী, জেলা নারী সব কোটায় সংস্কার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, যে কোনো কোটা বংশ পরম্পরায় থাকা উচিত না এবং এটা বৈষম্য তৈরি করে।

গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, কোটা সংস্কারের যে দাবি উঠেছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাড়া আর কারও জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা উচিত না। বর্তমান ব্যবস্থা কোটা সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হরণের শামিল। সকলেই সমান এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগ পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার যেন পায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে কোটার সুযোগ দেয়া সাংবিধানিক অধিকার হরণের শামিল। এতো বেশি কোটার সুযোগ থাকায় জাতি মেধাহীন হয়ে পড়বে, মেধার মূল্যায়ন হবে না। বিশেষ সম্প্রদায় প্রাধান্য পাওয়ায় প্রশাসন, শিক্ষাব্যবস্থা সমস্ত জায়গা মেধাহীন হয়ে পড়বে। এটা জাতির জন্য ভয়াবহ হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status